বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে টানা চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের সব কটি শিরোপাই নিজেদের কাছে রাখল লাল–সবুজের দল। মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে আজ চতুর্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনালে দাঁড়াতেই পারেনি নেপাল। আগের দিন টুর্নামেন্টের প্রথম দুবারের রানার্সআপ কেনিয়াকে টাইব্রেকে হারিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে উঠে আসা নেপাল আজ ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে হেরেছে ৪৫-৩১ পয়েন্টে।
শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের ছিল ৫-২, ১২-২, ১৭-৫, ২৪-১০। নেপালের খেলোয়াড়দের চেয়ে কিছুটা উচ্চতা এবং ফিটনেস সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা তো ছিলই। সেটি ষোলো আনাই কাজে এসেছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু কাবাডিতে কেনিয়ার সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ জেতে ৩২-২৯ পয়েন্টে। সেটি ছিল আন্তর্জাতিক কাবাডিতে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। ২০২২ সালের মার্চে দ্বিতীয় ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে জয় আসে ৩৮-২৮ পয়েন্টে। গত বছর মার্চে চায়নিজ তাইপেকে ৪২-২৮ ব্যবধানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু কাবাডিতে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। আজ হলো চারে চার। চারটি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অপরাজিত। কোনো ম্যাচই হারেনি। জিতেছে ২৪টি ম্যাচই।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, আগের তিনবার বাংলাদেশের কোচ ছিলেন ভারতীয়। এবার দেশি আবদুল জলিল আর সুবিমল দাস ছিলেন কোচ। খেলোয়াড়–কোচ হিসেবে বাংলাদেশকে অনেক সাফল্য দেওয়া আবদুল জলিল আবারও সমহিমায়। তাঁর হাত ধরে এল আরেকটি সাফল্য।
ম্যাচ শুরুর আগে আন্তর্জাতিক কাবাডি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আরদুজ্জামান মুন্সি। ১৫ বছর দেশের হয়ে খেল শেষবেলায় ছিলেন আপ্লুত। এমন দিনে দেশকে আরেকটি বঙ্গবন্ধু কাপ জিতিয়ে বিদায়টা রঙিন করে তুললেন আরদুজ্জামান। ম্যাচ শেষে তাঁকে ঘিরে হলো শিরোপা জয়ের উৎসব।
১০-১২ হাজার দর্শক আসনের মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তিল ধারণের জায়গা ছিল না। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকসহ প্রচুর দর্শক ফাইনাল উপভোগ করেন। অনেক দিন পর জমজমাট একটা আবহ তৈরি হয় মিরপুর ইনডোরে। জাতীয় খেলার জন্য দিনটা হয়ে ওঠে স্মরণীয়।
ফাইনালের অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছিলেন আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি।
তবে বাংলাদেশের আসল পরীক্ষা এশিয়ান গেমসেই। সেখানেই বাংলাদেশ এখন আর পদকের ধারেকাছে যেতে পারছে না। ফলে দেশে বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজন করে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়ে একটা আনন্দময় পরিবেশ হয়তো তৈরি হলেও এশিয়ান গেমসে আবার কবে পদক জিতবে বাংলাদেশ, সাফল্যের এমন দিনেও প্রশ্নটা উঁকি মারে বৈকি।
বিশ্বকাপে খেলা দক্ষিণ কোরিয়াকে এবার আনা হলেও দলটির সেরা খেলোয়াড়েরা আসেনি। ফলে তারা নজরও কাড়তে পারেনি। ভারত, পাকিস্তান, ইরানের মতো দলগুলোই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ দলগুলোকে আনতে পারেনি কাবাডি ফেডারেশন। এই বড় দলগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে পারলে বোঝা যেত বাংলাদেশ আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে। তারপরও সাফল্য তো সাফল্যই। তার জন্য বাংলাদেশ কাবাডি দল অভিনন্দন পেতেই পারে।