সেলফি–উদ্‌যাপন করে মোহামেডানের অভিনব প্রতিবাদ
সেলফি–উদ্‌যাপন করে মোহামেডানের অভিনব প্রতিবাদ

খেলা শেষ না করে মাঠ ছাড়ার ব্যাখ্যা দিল মোহামেডান

তৃতীয় কোয়ার্টারেই খেলার ছবি পুরোটাই পাল্টে দিয়েছিলেন মোহামেডানের মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ফাইজাল বিন সারি। দারুণ রিভার্স হিটে প্রথমে করলেন দুর্দান্ত এক ফিল্ড গোল। এরপর টানা দুটি পেনাল্টি কর্নারকে নিখুঁতভাবে কাজে লাগালেন।

মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে গ্রীন ডেল্টা প্রিমিয়ার হকি লিগের আবাহনী-মোহামেডানের ‘অঘোষিত’ ফাইনালে তখন মোহামেডানের আধিপত্য। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ৩ গোল ফিরিয়ে দেওয়ার পর যেকোনো দলই মানসিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে থাকে। কিন্তু এই ম্যাচেরই ‘অপমৃত্যু’ ঘটল কি না মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয়!

ম্যাচের আগেই ছিল চরম উত্তেজনা। আবাহনীর বিপক্ষে এই ম্যাচটা না খেলারই হুমকি দিয়ে রেখেছিল মোহামেডান। অভিযোগ ছিল হকি ফেডারেশনের পক্ষপাতিত্বের। আবাহনীর বিপক্ষে লিগ শিরোপা নির্ধারণী এই ম্যাচের আগেও সাদা-কালো শিবির নানা ধরনের ‘ষড়যন্ত্রে’র গন্ধ পেয়েছিল। এ ম্যাচে অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির নিষেধাজ্ঞাও মোহামেডানের ভাষায় ছিল সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচে মারামারির দৃশ্য

তবে আজ অধিনায়ককে ছাড়াই তৃতীয় কোয়ার্টারে দলটি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে খেলা শেষ না করেই মোহামেডানের মাঠ ছেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠতেই পারে—সিদ্ধান্তটা কি একটু হঠকারী হয়ে গেল? যে হাতাহাতির ঘটনায় খেলা পণ্ড হয়ে গেল, তখন খেলাই যে বাকি ছিল আর ১৭ মিনিটের মতো।  

মোহামেডান ম্যানেজার আরিফুল হক মাঠ ছেড়ে যাওয়ার একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘আমাদের দুই খেলোয়াড়কে মারামারির ঘটনায় লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। একজনকে হলুদ কার্ড। ৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে আমরা কীভাবে খেলব! আমরা আগেই বলেছি, মোহামেডানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, আজকের ঘটনাও সেটিরই অংশ।’

মোহামেডানের মাঠে না ফেরার ব্যাপারটির আরও বিশদ ব্যাখ্যা আরিফুল হক দিয়েছেন এভাবে, ‘আমাদের একটা রেফারেল বাকি ছিল। আমরা সেই রেফারেল পর্যালোচনা করে আম্পায়ারকে মারামারির ঘটনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা না শুনেই দুই খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়ে দিলেন। আমাদের কথা শুনলেনই না।’

পুলিশ পাহাড়ায় রেফারির মাঠ ত্যাগ

ম্যাচের ৪২ মিনিটের সময় আবাহনীর একটি পেনাল্টি কর্নার ব্যর্থ করে দিয়েছিল মোহামেডানের রক্ষণ। বলও থেমে ছিল। কিন্তু ঠিক ওই সময় আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফের সঙ্গে মোহামেডানের মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় জুল পিদাউস বিন মিজানের ধাক্কাধাক্কি হয়। এই সময় মোহামেডান ও আবাহনীর একাধিক খেলোয়াড় হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান। হাতাহাতি গুরুতর আকার ধারণ করে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। মাঠে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগ দেন ডাগআউটের খেলোয়াড়েরাও। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এরপর আম্পায়াররা লাল কার্ড দেখান মোহামেডানের দুই খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ও তানভীর সিয়ামকে। লাল কার্ড দেখেন আবাহনীর মো. নাঈমুদ্দিন। হলুদ কার্ড দেখেন মোহামেডানের জুল পিদাউস ও আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফ।

এর প্রতিবাদে মোহামেডান আর না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ওমানের আম্পায়ার হুসেইন হোসেনি ও শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার দায়ান দেশানায়েকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শেষ বাঁশি বাজান। লিগের বাইলজ অনুযায়ী খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় আবাহনীকে ৫-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

এরপর মোহামেডান মেতে ওঠে উদ্দাম উল্লাসে। যেন তারাই লিগ শিরোপা জিতেছে! ক্লাব পতাকা উড়িয়ে তাদের উল্লাস ছিল কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের সব অভিযোগের জবাব।