১৪ বছর ধরে নতুন কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সম্ভাবনার খেলা দাবায় কেন এই স্থবিরতা? উত্তর খুঁজেছেন মাসুদ আলম—
বাংলাদেশের চার আন্তর্জাতিক মাস্টারের তিনজনই ছকের বাইরে। জিল্লুর রহমান ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। বছর কয়েক আগে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দাবার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছেন তিনি। আবু সুফিয়ান শাকিল এবং মিনহাজ উদ্দিন তেমন সক্রিয় নন। সুফিয়ান ২০১১ ও মিনহাজ ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার হলেও এখনো তাঁরা কোনো জিএম নর্ম অর্জন করতে পারেননি। মিনহাজের বয়স ৩৩, সুফিয়ানের ৪২।
সুফিয়ান তো গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্নে ইতিই টেনে ফেলেছেন, ‘আমি সাংগঠনিক কাজকর্ম নিয়েই বেশি ব্যস্ত এখন। ২০০৬ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দাবা কোচ হিসেবে কাজ করছি। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে দাবা কোচিং করাই। চেস প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও আমি। সত্যি বলতে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার কোনো স্বপ্ন আর নেই আমার।’
মিনহাজ অবশ্য হাল ছাড়েননি, ‘আগামী পাঁচ বছর দেখব। এ সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারলে ভালো, নইলে ধরে নেব আর হবে না। আমাদের মেধা ভালোই আছে। সমস্যা হলো সুযোগ পাওয়ায়। ভারতে প্রতি মাসে যে পরিমাণ টুর্নামেন্ট থাকে, আমাদের সেটা নেই। দীর্ঘমেয়াদি কোচ নেই। ইরানে একসময় গ্র্যান্ডমাস্টার তেমন ছিলই না। ওরা কোচিংয়ে জোর দিয়ে অনেক উন্নতি করেছে। ওদের ২৬০০ রেটিংয়ের দাবাড়ুই এখন ৪–৫ জন, ২৭০০ একজন। কিন্তু আমরা কোথায় পড়ে আছি!’
২০১৮ সালে মিনহাজসহ পাঁচজন ইউরোপ যাওয়ার আবেদন করেছিলেন। চারজনের ভিসাই হয়নি। সফরটা বাতিল হয়ে যায়। এরপর ছয় মাস ফেডারেশন কোনো টুর্নামেন্ট করতে পারেনি। এ নিয়ে আক্ষেপ মিনহাজের, ‘আমি কখনো ইউরোপে গিয়ে খেলতে পারিনি। এমনকি ২০১৮ সালের পর আর বিদেশেই খেলা হয়নি আমার। আমার রেটিং ২৪০০ প্লাস থেকে ১১৫–এর মতো কমে যায়। ইউরোপে চার–পাঁচটা টুর্নামেন্ট খেললে একটায় নর্ম পাওয়ার সুযোগ থাকে। আমরা সেই সুযোগই পাই না।’
২০১৯ সালের মার্চে আইএম হওয়ার পর ফাহাদ গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট খেলেছেন ছয়টি। দুটিতে জিএম নর্মের কাছাকাছি যান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ে আধা পয়েন্টের জন্য হয়নি। দ্বিতীয়বার যান বাংলাদেশে ২০২১ সালের অক্টোবরে।
মিনহাজ দুবার জিএম নর্মের কাছে গিয়েও পারেননি। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেন ২০২১ সালে ঢাকায় জয়তু শেখ হাসিনা টুর্নামেন্টে। তাহলে কীভাবে গ্র্যান্ডমাস্টার হবেন! নৌবাহিনীর পেটি অফিসার মিনহাজের কথা, ‘নৌবাহিনী অনেক সুযোগ দেয় খেলার। ২০২১ সালে বিয়ে করেছি। স্ত্রীও উৎসাহ দেয়। তবু আটকে আছি এক জায়গায়।’
২০১৯ সালের মার্চে আইএম হওয়ার পর ফাহাদ গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট খেলেছেন ছয়টি। দুটিতে জিএম নর্মের কাছাকাছি যান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ে আধা পয়েন্টের জন্য হয়নি। দ্বিতীয়বার যান বাংলাদেশে ২০২১ সালের অক্টোবরে। তবু আশাবাদী ফাহাদ, ‘অসুস্থতা, করোনা ইত্যাদি মিলিয়ে মাঝে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে কয়েকটি জিএম টুর্নামেন্ট খেললে নর্ম হয়ে যাবে, আশা করি। স্বপ্ন দেখি জিএম হওয়ার।’ ফাহাদ এখন বিদেশে বেশি বেশি খেলতে চান। তাই তাকিয়ে আছেন ফেডারেশনের দিকে।
ভারতে ২০২২ সালে ১২টি জিএম টুর্নামেন্ট হয়েছে। বাংলাদেশে একটিও নয়। ফাহাদের আক্ষেপ, ‘আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের মেধা আছে, সুযোগের অভাবই মূল সমস্যা। আমি ভালো পরামর্শও পাইনি, অনেক সময় ভুল পরামর্শ পেয়েছি।’
দেশের ১৫ ফিদে মাস্টারের অনেকেই এখন খেলায় নিষ্ক্রিয়। ২০০২ সালে ফিদে মাস্টার হওয়া শেখ নাসির প্রথম আইএম নর্ম করেন ২০০৭ সালে। ২০১৭ সালে নিজ উদ্যোগে স্পেন গিয়ে দ্বিতীয়টি করার পর তৃতীয় নর্ম আর হচ্ছে না। নৌবাহিনীর পেটি অফিসার শেখ নাসির বললেন, ‘সমস্যা অনেক। তাই আমার আইএম হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা ক্ষীণই বলতে হয়।’