ঢাকার উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে ৬-৭টি টেবিলে অনুশীলন করছেন ১৪-১৫ জন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। এর মধ্যে একটি টেবিল আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ছিল সবার। যেটির দুই প্রান্তে খেলছিলেন সোনাম সুলতানা (সোমা) ও সাদিয়া রহমান (মৌ)। দৃষ্টি কাড়ার কারণ, দুজনই যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ হয়ে থাকার পর সদ্য মুক্তি পেয়েছেন।
আগামী ৩-১০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় হতে যাওয়া এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত দলেও নেওয়া হয়েছে দেশসেরা দুই নারী খেলোয়াড়কে। সেটির অনুশীলন ক্যাম্পেও যোগ দিয়েছেন তাঁরা দুজন।
সোনাম–সাদিয়ার শাস্তির কারণটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। গত বছরের ৫ আগস্ট বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নারী টিটির দ্বৈতে ওয়াকওভার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই দুই খেলোয়াড়। তাঁরা ম্যাচ না খেলে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে গুরুতর অভিযোগ তোলে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন। সেটিরই জেরে দেশের র্যাঙ্কিংয়ে ১ ও ২ নম্বর সাদিয়া রহমান ও সোনাম সুলতানাকে নিষিদ্ধ করে ফেডারেশন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ, ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দুই বছর।
দুই খেলোয়াড় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করলেও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি দেন। এরপর টিটি ফেডারেশনের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আন্তর্জাতিক টিটিতে তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর এবং ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দুই বছরের পরিবর্তে এক বছর নিষিদ্ধ থাকবেন তাঁরা। তবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও ঘরোয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি গত এক বছরেও। অবশেষে যা হয়েছে গত মাসে চট্টগ্রামে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের পর। সেটাও এক বছরের জায়গায় ছয় মাস।
আগামী ছয় মাস ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ থাকলেও দুজনের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফেডারেশন। সেটা মূলত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দুজনের পারফরম্যান্স দেখে। সাদিয়া ২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, সোনাম হয়েছেন রানারআপ। তাঁরাই যে দেশসেরা, তা প্রমাণ করেছেন আবারও।
দুজনের আন্তর্জাতিক শাস্তি প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টিটি ফেডারেশনের সহসভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীর আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা দুজন সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে। দ্বৈতেও ওরা চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হওয়ার দিনই গত ২৯ জুলাই ফেডারেশনের কাছে ওরা ক্ষমা চেয়ে চিঠি দেয়। কর্মকর্তাদের নিয়ে করা অযাচিত মন্তব্যের জন্যও ক্ষমা চেয়েছে।
ফেডারেশনের ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্ট এবং টুর্নামেন্ট কমিটির সুপারিশে ওদের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ফেডারেশন। বিষয়টা ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে গত ২০ আগস্ট।’
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দুই বছরের মধ্যে এক বছর ভোগ করে ফেলেছেন তাঁরা, বাকি এক বছর মওকুফ করা হয়েছে বলে জানান হাসান মুনীর। তবে ঘরোয়া শাস্তি যেহেতু এক বছরেও কার্যকর হয়নি, তাই এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে, এতেই দারুণ খুশি সোনাম–সাদিয়া। ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলে আসা সোনাম এবারই প্রথম এক বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। এই সময়ে নেপালে এশিয়ান বাছাইয়ে খেলতে পারেননি। সাদিয়া এই টুর্নামেন্ট ছাড়াও খেলতে পারেননি ভারতে দক্ষিণ এশিয়ান যুব ও ক্যাডেট টুর্নামেন্টে।
এক বছর পর দুজনের ফেরাটা কি ভুল স্বীকার করে? আজ উডেনফ্লোরে অনুশীলনের ফাঁকে সোনাম বললেন, ‘ভুল নয়। আসলে ওটা ছিল ভুল–বোঝাবুঝি। বলা হয়েছিল, আমরা নাকি না খেলে বেড়াতে গিয়েছি। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। তবে এখন এসব নিয়ে কিছু বলার নেই। যা ঘটে গেছে, সেটা ছিল হতাশার। মানসিকভাবে অনেক হতাশ ছিলাম। এখন আর পেছনেরটা ভাবতে চাই না।’
বরং সুযোগটা কাজে লাগাতে চান সোনাম, ‘জাতীয় দলের হয়ে অনেক বেশি আনন্দের। কর্মকর্তারা চেয়েছেন আমরা আবার ফিরে আসি। তাই ফিরেছি। এখন শুধু পারফরম্যান্স নিয়েই ভাবছি। চেষ্টা করব ফেডারেশনের দেওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে।’
সাদিয়ারও প্রায় একই কথা। ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন। এক বছর আগেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে বলে কি আশা করেছিলেন? জাতীয় টিটি চ্যাম্পিয়ন বললেন, ‘নিজের পারফরম্যান্সের দিকেই মনোযোগ ছিল আমার। তাই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করেছি। এখন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে ফেডারেশন। সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব অবশ্যই। পেছনে যা ঘটেছে, সেটা আর মনে রাখতে চাই না।’