ফেন্সিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সেবিন চোইকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জেতার পর আবেগাপ্লুত ইউক্রেনের ওলগা খারলান। গত পরশু পাওয়া অলিম্পিকে নিজের পঞ্চম পদকটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত মাতৃভূমিকে উৎসর্গ করেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই ফেন্সার।
ফেন্সিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সেবিন চোইকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জেতার পর আবেগাপ্লুত ইউক্রেনের ওলগা খারলান। গত পরশু পাওয়া অলিম্পিকে নিজের পঞ্চম পদকটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত মাতৃভূমিকে উৎসর্গ করেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই ফেন্সার।

প্যারিস অলিম্পিক

ব্রোঞ্জপদকই যখন সোনার সমান

অলিম্পিকে পদক আগেও জিতেছেন ওলগা খারলান, ফেন্সিংয়ের দলীয় ইভেন্টে সোনাও আছে ঝুলিতে। তবে প্যারিসে জেতা ব্রোঞ্জপদকটা ইউক্রেনের এই খেলোয়াড়ের কাছে যেন সোনার সমানই মনে হচ্ছে। তিনি যে শুধু দেশের জন্যই একটা পদক জিততে চেয়েছিলেন এবার!

দক্ষিণ কোরিয়ার সেবিন চোইকে ১৫-১৪ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে গতকাল স্যাবর ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ৩৩ বছর বয়সী খারলান, যেটি এবারের অলিম্পিকে ইউক্রেনের প্রথম পদক। একসময় ১১-৫ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা খারলানের প্রত্যাবর্তন ছিল দুর্দান্ত। পরে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকে দেখাচ্ছি যে আমরাও পারি। আমরা হাল ছাড়ি না। কোনো একভাবে আমিও তা দেখালাম।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া, যে যুদ্ধ চলছে এখনো। ইউক্রেনের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে শুরুর দিকে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন খারলানই। গত বছর এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘খেলা হচ্ছে আরেকটা যুদ্ধ, ক্রীড়াবিদেরা হচ্ছেন যোদ্ধা।’

সে মানসিকতা গতকাল ভালোভাবেই দেখিয়েছেন খারলান। এবারের অলিম্পিকে সোনা জয়কে পাখির চোখ করলেও যুদ্ধের কবলে পড়ে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল তাঁর স্বপ্ন। একসময় তো অলিম্পিকে অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। গত বছর রুশ এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানানোয় ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যান খারলান। পরে অবশ্য অলিম্পিক কমিটির ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন, যদিও দল হিসেবে ইউক্রেন যোগ্যতা অর্জন করায় সেটির আর প্রয়োজন পড়েনি।

পদকে চুমু খাচ্ছেন খারলাম

এর আগে চারটি অলিম্পিক পদক জেতার পরও এবারেরটির গুরুত্ব তাই আলাদা খারলানের কাছে, ‘এটা বিশেষ কিছু। মনে হচ্ছে অনন্তকাল কেটে গেছে। আমার দেশের জন্য এটা বিশেষ কিছু। এটা ইউক্রেনের মানুষের জন্য। প্রতিরোধকারীদের (সৈন্য) জন্য। সেসব অ্যাথলেটের জন্য, যাদের রাশিয়া হত্যা করেছে বলে এখানে আসতে পারেনি।’

ফ্রান্সের সারা বালজারের কাছে হেরে সোনার স্বপ্নটা ভেস্তে যায় খারলানের। এরপর ব্রোঞ্জের লড়াইয়েও একইভাবে পিছিয়ে পড়েন। বলেছেন, এবার প্রতি ম্যাচেই বাড়তি চাপ অনুভব করেছেন। ব্যাখ্যা করেছেন তার কারণও, ‘কারণ, আপনি এটা করে দেখাতে চান। আপনার পরিবার আর নিজের জন্য করে দেখাতে চান।’

শেষ পর্যন্ত সেটি করে দেখাতে পেরেছেন খারলান। বাবা ইউক্রেন ছেড়ে আসতে না পারলেও গ্যালারিতে মা, বোন আর ভাগনে ছিলেন। এমনিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে দেশে যেতে পেরেছেন মাত্র পাঁচবার, কোনোবারই সপ্তাহখানেকের বেশি থাকতে পারেননি। সব মিলিয়ে অলিম্পকে এই ব্রোঞ্জপদকের মাহাত্ম্য তাই খারলানের কাছে অনেক, ‘যত রকম আত্মত্যাগ, সব খবর, রাশিয়ার বোমা হামলায় আমাদের মানুষ মারা যাওয়ার মতো বেদনাদায়ী সব মুহূর্ত। আমাদের সবাইকে এসবের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এ কারণেই এটি কঠিন।’