>দেশের অন্যতম সেরা বক্সার আল আমিন হোসেন ও ভারোত্তোলক জহুরা খাতুন নিশা এ বছরই বিয়ে করেছেন। বর্তমানে দুজনই দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ক্যাম্পে থাকায় খেলার মাঠেই চলছে তাঁদের অস্থায়ী ছাউনি টানানো সংসার। বরাবরের মতো ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে লড়বেন বক্সার আল আমিন। আর নিশার ওজন ক্যাটাগরি ৭৬ কেজি।
‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’
এমন সর্বনাশের বাঁশি কখন যে বেজে ওঠে, কে জানে! ২০১৩ সালের এমনই এক চৈত্রের সকালে এক জোড়া চোখে আটকে ‘সর্বনাশ’ হয়েছিল আল আমিন হোসেনের। কোনো রাস্তার মোড় বা মার্কেটের সিঁড়ি নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তীর্থস্থান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেই থেকে দেশের অন্যতম সেরা বক্সারের হৃদয়ের মণিকোঠায় একটি মুখ। সে মুখটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত ভারোত্তোলক জহুরা খাতুন নিশার।
মন দেওয়া-নেওয়ার পাট শেষ করে এ দুই ক্রীড়াবিদ চলতি বছরের মার্চে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। বর্তমানে দুজনই দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ক্যাম্পে থাকায় খেলার মাঠেই চলছে তাঁদের অস্থায়ী ছাউনি টানানো সংসার! আল আমিনের দিন কাটে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে আর নিশার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। তবে দুটি মন কিন্তু ঠিকই জোড়া লেগে থাকে সব সময়।
২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমসের আগে ফিটনেস অনুশীলনের জন্য বক্সাররা নিয়মিত দৌড়াতেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ট্রাকে। সেখানে সকালে ঘাম ঝরাতেন ভারোত্তোলকেরাও। হঠাৎ করেই একদিন আল আমিনের চোখে আটকে যায় ভারোত্তোলক নিশায়। স্টেডিয়ামপাড়ায় হাঁটতে–চলতে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। কিন্তু এত অল্পে কি আর মনের সাধ মেটে?
২০১৭ সালে নিশাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে নকআউট করে বসলেন রাজশাহীর ছেলে আল আমিন। চূড়ান্ত পরিণতি পেতে দুজনের সময় লাগল আরও দুই বছর। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে আট মাস। কেরানীগঞ্জে বাসা ভাড়া নেওয়া হলেও সংসার জাঁকিয়ে বসার সুযোগ নেই। এসএ গেমসের জন্য অনুশীলন করেই কেটে যাচ্ছে তাঁদের দিন। ডিসেম্বরেই যে নেপালে হবে এবারের গেমস।
সুখী দম্পতির ভালোবাসা মাপতে গেলে থই পাওয়া যাবে না। এমনিতেই ৩২ বছরের আল আমিন ও ২৭ বছর বয়সী নিশার জীবন বাঁধা ওজনের নিক্তিতে। ওজনের দিক দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়েও গিয়েছেন স্ত্রী! এসএ গেমসে বরাবরের মতো ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে লড়বেন বক্সার আল আমিন। নিশার ওজন ক্যাটাগরি ৭৬ কেজি। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত দলে ঠাঁই হয়ে গেছে আল আমিনের। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ৪৫ দিনের জন্য থাইল্যান্ড চলে যাবেন দেশের অন্যতম সেরা বক্সার। নিশার চূড়ান্ত দলে থাকা নিয়েও নেই তেমন কোনো সংশয়। ২০১৬ ভারতের গুয়াহাটি-শিলং এসএ গেমসের দলেও ছিলেন এই দুই ক্রীড়াবিদ। দুজনই বাংলাদেশ আনসারের বেতনভুক্ত খেলোয়াড়।
দুজনই খেলোয়াড়, ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও একটু অন্য রকম। স্ত্রী হয়তো ফোন করে অনুশীলনের জন্য স্বামীর ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছেন। আর স্বামী ফুরসত পেলেই জুসের বোতল হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছেন বউয়ের অনুশীলনে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই অ্যাথলেট হওয়ার সুবিধাটা ব্যাখ্যা করলেন নিশা, ‘স্ত্রী হিসেবে আমার সুবিধাটাই হয়তো বেশি। অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হলে হয়তো খেলতে দিতে না–ও চাইতেন। পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। দেশের বাইরে খেলার সুযোগ হলে ছাড়তেন না। এ ছাড়া খেলার জন্য স্বামীর কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়া প্রয়োজন, তা তো আমি পুরোটাই পাচ্ছি। কারণ, স্বামী নিজেও একজন খেলোয়াড়।’
আছে অসুবিধাও। খেলার জন্য দুজনই ব্যস্ত থাকায় পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া যায় না বলে জানালেন আল আমিন, ‘বেশির ভাগ সময় আমাদের দুজনের একই সঙ্গে অনুশীলন থাকে। এ ছাড়া আমার না থাকলেও ওর থাকে। ফলে দুজনে একসঙ্গে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে পারি না।’