ছয়টি এশিয়া কাপ খেললেন রাসেল মাহমুদ জিমি
ছয়টি এশিয়া কাপ খেললেন রাসেল মাহমুদ জিমি

হকিতে বাংলাদেশের যে রেকর্ড শুধুই রাসেল মাহমুদের

ইন্দোনেশিয়া থেকে মুঠোফোনে যখন কথাগুলো বলছিলেন, রাসেল মাহমুদ জিমির কণ্ঠে জড়ানো উচ্ছ্বাস। জাকার্তায় গতকাল শুরু হয়েছে এশিয়া কাপ হকি। প্রথম দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচটি ৬-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ, কিন্তু এই ম্যাচে একটা রেকর্ড হয়েছে জাতীয় দলের স্ট্রাইকার রাসেল মাহমুদ জিমির। এবারের এশিয়া কাপসহ সর্বোচ্চ ছয়টি এশিয়া কাপে খেলা বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় জিমি।

২০০৩ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ দিয়ে জিমির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। বাবা আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড। যে বাবার অনুপ্রেরণায় একদিন হকিস্টিক হাতে নিয়ে টার্ফে নেমেছিলেন, সেই বাবার হাত ধরেই অভিষেক ঘটে জাতীয় দলে। সেবার মালয়েশিয়াতে আবদুর রাজ্জাক ছিলেন জাতীয় দলের কোচ। এরপর খেলেছেন ভারতের চেন্নাই, মালয়েশিয়ার কুয়ানতান ও ইপোহতে। তারপর বাংলাদেশের ঢাকা হয়ে জিমি ষষ্ঠ এশিয়া কাপ খেলছেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়।

টানা ১৯ বছর জাতীয় দলে খেলছেন জিমি। কখনো পারফরম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েননি। তবে শৃঙ্খলাজনিত কারণে ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসের দলে খেলতে পারেননি। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ জিমি।

জিমির সঙ্গে জাতীয় দলে ঢোকা বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই হকি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এত দিন ধরে কীভাবে জাতীয় দলে খেলছেন? সেই রহস্যের ঝাঁপি খুলে দিলেন জিমি, ‘এত বছর ধরে ফিটনেস ধরে রেখেছি। খেলার প্রতি নিবেদিত ছিলাম বলেই খেলতে পারছি টানা। এত বছর ধরে জাতীয় দলে খেলছি, এটা ভেবে গর্ব হয়। আজ বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’

দেশের হকির বড় তারকা রাসেল মাহমুদ জিমি।

সম্প্রতি মরণোত্তর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (২০১৬ সালের জন্য) পেয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। এমন স্মরণীয় ক্ষণে বাবাকে বারবার মনে পড়ছে জিমির, ‘কোথাও এশিয়া কাপে খেলতে এলে বাবা সব সময় খোঁজ নিতেন। খেলার ফল জানতে চাইতেন। বাবা বেঁচে থাকতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেখে যেতে পারেননি। আমার এই কীর্তিটাও দেখে যেতে পারলেন না।’

১৯৮২ সালে এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার পর থেকে কখনো সেরা চারে থাকতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এবার দলকে পঞ্চম বানিয়ে নিজের বিশেষ কীর্তিটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চান জিমি, ‘আমাদের দলের যে অবস্থা তাতে আমরা পঞ্চম হলেই খুশি। এটা আমার জন্য হবে সবচেয়ে বড় অর্জন। সাধারণত অনেক ভালো দল র‌্যাঙ্কিংয়ের পেছনের দেশের সঙ্গে খেলতে চায় না। এটা আমাদের জন্য অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য ভালো অবস্থানে থেকে এশিয়া কাপ শেষ করলে অন্য দলগুলোর সমীহ আদায় করতে পারব।’

জিমি হয়তো ক্যারিয়ারের শেষের শুরু দেখে ফেলেছেন। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে পেরে গর্বিত জিমি, ‘হয়তো কিছুদিন পর খেলাটা ছেড়ে দিতে হবে। দেশের জার্সি পরতে পারব না এটাই হবে কষ্টের।’

এখনো দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার জিমি। তরুণ প্রজন্ম জিমিকে আদর্শ মেনে এখনো হকিতে আসতে চায়। এটা ভেবে অনেক ভালো লাগে জিমির, ‘অনেকে আমার মতো হতে চায়, এটা গর্বের একটা ব্যাপার। আমি চাই নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা আমার চেয়েও ভালো খেলুক। আমার চেয়ে অন্তত ৮-১০ জন ভালো খেলোয়াড় থাকুক বাংলাদেশে। এটা হলে বাংলাদেশের হকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখা যাবে আরও ভালো পারফরম্যান্স করছে।’