মেসির ভিউকার্ডে যে প্রেমের শুরু

সোনিয়া ও আসিফ।
ছবি: সংগৃহীত

মাত্রই বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছেন। পড়াশোনা আর অনুশীলনের বাইরে অন্য কিছু কল্পনা করাও মানা। অথচ সেই সোনিয়াকেই কিনা দিনের পর দিন প্রেম নিবেদন করে গেছেন বিকেএসপিরই সাঁতারু আসিফ রেজা!

সোনিয়াও যেহেতু সাঁতারু, তাঁদের পরিচয় পর্বটা সুইমিংপুলেই। পরিচয় থেকে প্রণয়। আসলে কবে, কখন যে একজন আরেকজনের পরিপূরক হয়ে যান, বুঝতেই পারেননি আসিফ–সোনিয়া। পরিণয় পূর্ণতা পেয়েছে বিয়েতে। ৫ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন সাঁতারপুলের দুই নায়ক–নায়িকা।

পুলে তাঁরা দুজন।

সোনিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতি গ্রামে। আর আসিফ তো কুষ্টিয়ার সাঁতারের গ্রাম আমলারই ছেলে! চীনের নানজিংয়ে ২০১৩ যুব এশিয়ান গেমস ও ২০১৪ যুব অলিম্পিকে অংশ নেন আসিফ। ২০১৯ সালের জাতীয় সাঁতারে হয়েছেন সেরা। ওই বছর কাঠমান্ডু এসএ গেমসে জেতেন একটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ। সোনিয়া অংশ নেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে। ইন্দো-বাংলা গেমসে জিতেছেন ১টি সোনা ও ২টি ব্রোঞ্জ। এসএ গেমসে ৩টি ব্রোঞ্জ।

সোনিয়াকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়েন আসিফ। বিয়ের পর সেদিন প্রসঙ্গটা উঠতেই হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘২০০৪ সালে বগুড়ায় জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে ওকে প্রথম দেখি। ওই দিন দেখেই মনে হয়েছিল, কাছে গিয়ে বলি, ভালোবাসি। কিন্তু সাহস কুলিয়ে ওঠেনি।’

পরের বছর বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে সেই সাহস ঠিকই দেখাতে পেরেছিলেন আসিফ, ‘আমি লিওনেল মেসির ভক্ত। ওই সময় প্রচুর ভিউকার্ড জমাতাম। মেসির চমৎকার একটা কার্ডের পেছনে লিখেছিলাম, তোমাকে ভালোবাসি। সাহস করে সেটা ওর হাতে দিলাম।’ কিন্তু ‘প্রেমপত্র’ পেয়ে তো সোনিয়ার ভীষণ রাগ, ‘তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। এগুলোর প্রতি কোনো টান ছিল না। চাইতাম, আগে খেলাধুলা করি, পরে অন্য কিছু ভাবা যাবে।’

বিয়ে হলেও এখনো ঘরকন্না শুরু হয়নি।

কিছুদিন পর শুরু হয় জাতীয় দলের ক্যাম্প। অনুশীলনে দুই বেলা দেখা হতো দুজনের। টুকটাক কথাবার্তাও হতো। কিন্তু সোনিয়ার মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’ শব্দটা কিছুতেই বের করতে পারছিলেন না আসিফ। অবশেষে ২০১০ সালের ঢাকা এসএ গেমসের সময় সোনিয়ার মনের বরফ গলে। শুরু হয় প্রেমের ভুবনে পথচলা।

কিছুদিন বেশ ভালোই কাটছিল। কিন্তু বাধা না এলে আর প্রেমে মজা কোথায়! বিকেএসপি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোনিয়াকে গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন মা–বাবা। বিকেএসপিতে মুঠোফোন ব্যবহার নিষেধ। আসিফের সঙ্গে কথাবার্তাও বন্ধ হওয়ার জোগাড়। প্রেমের ইতি ঘটতে যাচ্ছিল সেখানেই। সোনিয়ার ভাষায়, ‘ওই সময় আমাদের ব্রেকআপ হয়েই গিয়েছিল।’

কিন্তু আসিফ হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না। ২০১৬ সালের এসএ গেমসে দুজনই জাতীয় সাঁতার দলের হয়ে অংশ নেন ভারতের গুয়াহাটিতে। সেখানে আবার জেগে ওঠে পুরোনো প্রেম। সেই সন্ধ্যার কথা এখনো ভোলেননি আসিফ, ‘গুয়াহাটির টিম হোটেলে ও আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল কথাটা। একটা চিঠিও পাঠিয়েছিল। সেই চিঠি এখনো মানিব্যাগে রেখে দিয়েছি।’

দুজনই ব্যস্ত এসএ গেমস নিয়ে।

২০১৫ সালে নৌবাহিনীতে চাকরি হয় আসিফের। পরের বছর নৌবাহিনীতে চাকরি পান সোনিয়াও। সোনিয়াকে মেনে নিতে শুরুতে আপত্তি ছিল আসিফের পরিবারের। শেষ পর্যন্ত আসিফের মা সম্মতি দিলে দুজনে সেরে ফেলেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বিয়ে হলেও অবশ্য ঘরকন্না শুরু হয়নি এখনো। দুজনেরই মনোযোগ এপ্রিলের বাংলাদেশ গেমসে। আসিফ বলছিলেন, ‘আমরা এখন বাংলাদেশ গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠান করে ওকে বাড়িতে নিয়ে যাব।’ নৌবাহিনীর কোয়ার্টারে দুজন এখনো আলাদাই থাকেন। দেখা হয় শুধু অনুশীলন আর ডাইনিংয়ে।

সোনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে বদলে গেছে আসিফের জীবন। তিনি নিজে অন্তত তা–ই মনে করেন, ‘আগের ছয়টি জাতীয় আসরে আমি একটিও সোনা জিততে পারিনি। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৯ সালের প্রতিযোগিতায় ৪টি ইভেন্টে (৫০ মিটার ও ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলে) সোনা জিতি। অনুশীলনে পিছিয়ে পড়লে ও রাগ করে। অনুশীলনের পর ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করছি কি না, সেগুলোর খেয়াল রাখে। আমার পারফরম্যান্সের উন্নতিতে ওর অনেক অবদান।’

ভালো লাগা থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে। ভালোবাসার রসায়ন জড়িয়ে থাকে সব সম্পর্কেই।