উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তানের বেশির ভাগ খেলোয়াড়দের উচ্চতা যেখানে ৬ ফুটের মতো, সেখানে এই উচ্চতা নিয়েই তিনি যেন হয়ে উঠলেন চীনের প্রাচীর। বলা হচ্ছে বঙ্গমাতা এশিয়ান সেন্ট্রাল জোন ভলিবল খেলতে আসা নেপালি খেলোয়াড় সালিনা শ্রেষ্ঠার কথা।
সালিনা খেলেন লিবারো হিসেবে। ভলিবলের নিয়ম হচ্ছে ৭ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে একজনকে সব সময় খেলতে হয় ‘ডিফেন্সিভ স্পেশালিস্ট’ হিসেবে। আর এই ভূমিকায় যিনি খেলেন, তাঁকে বলা হয় লিবারো। ভলিবলে লিবারো তুলনামূলক একটু কম উচ্চতার হয়ে থাকে। কিন্তু সালিনা এই টুর্নামেন্টে খেলতে আসা অন্য দেশগুলোর লিবারোর চেয়ে একটু বেশিই খাটো। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না, ভলিবল কোর্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে সবার নজর কেড়েছেন।
২০১৯ সালে ঢাকায় সর্বশেষ এশিয়ান সেন্ট্রাল জোন ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে সালিনা জেতেন সেরা লিবারোর পুরস্কার। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সে নেপালের মেয়েদের দল হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। এবারও এরই মধ্যে নেপাল চারটি ম্যাচের সব কটিতেই জিতেছে। ফাইনালের পথে দিয়ে রেখেছে এক পা। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশের পর আজ দুপুরে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোরে উজবেকিস্তানকে হারিয়েছে নেপাল। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ২৩ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় প্রতি ম্যাচেই দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নেপালের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। দলের সবচেয়ে দীর্ঘকায় খেলোয়াড় সরস্বতী চৌধুরীর উচ্চতা ৬ ফুট। সতীর্থদের ভালোবাসায় তাতে অবশ্য কমতি নেই সেলিনার, ‘দলের সব সতীর্থ আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করে, উৎসাহ দেয়। স্কুলে বড় আপুরা যখন খেলত, আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখতাম। একদিন এক আপুকে বলি, আমিও খেলতে চাই। পরে স্কুলের দলে খেলার সুযোগ পেয়ে গেলাম। এভাবেই শুরু।’
কাঠমান্ডুর একটি কলেজে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকে পড়ুয়া সেলিনা নিজের পজিশনে খেলতে পেরে খুব খুশি, ‘আসলে ভলিবলে লিবারো প্রধান ডিফেন্ডার। আধুনিক ভলিবলে এটা গুরুত্বপূর্ণ পজিশন। লিবারোকে দলের অনানুষ্ঠানিক অধিনায়কও বলা যায়। কোর্টে খেলোয়াড়দের মেজাজ ধরে রাখা ও খেলার ছন্দ ঠিক রাখতে সবার সঙ্গে আমাকে বেশি বেশি কথা বলতে হয়। যদিও লিবারোর জন্য আরেকটু বেশি উচ্চতা হলে ভালো হয়। অনেকে আমাকে দেখে বলে, এই উচ্চতা নিয়ে তুমি ভলিবল খেল কীভাবে? কিন্তু যখন কোর্টে আমার দক্ষতা দেখে, তখন তারাই অবাক হয়। আসলে লিবারো হিসেবে খেলাটা দারুণ উপভোগ করি।’
নেপালের জনপ্রিয় ভলিবল প্রতিযোগিতা ন্যাশনাল এনভিএ ক্লাব লিগে সেলিনা খেলেন নিউ ডায়মন্ড স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে। প্রতি মাসে নেপালি ৩০ হাজার রুপি চুক্তিতে খেলা সালিনা জানালেন নেপালে ভলিবলের জাগরণের কথা, ‘আমি ক্লাব থেকে যা পাচ্ছি, তাতে খুশি। এখন আমাদের মেয়েরা ভলিবল খেলে ভালোই উপার্জন করছে।’
সেলিনার বাবা শান্ত কুমার শ্রেষ্ঠা কাঠমান্ডুতে হোটেল ব্যবসায়ী। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় শুরুতে ভলিবল খেলতে দিত না পরিবারের কেউ। কিন্তু খেলাটা এতই ভালো লেগে যায় যে লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতেন স্কুলে, ‘আমি একমাত্র মেয়ে হওয়ায় খেলা নিয়ে মা–বাবা খুব ভয়ে থাকতেন। যদি আমার বড় কোনো চোট লাগে, যদি হাত পা ভেঙে যায়, তাহলে আমার কী হবে, এই দুশ্চিন্তা করতেন। কিন্তু আমার কোচ বোঝানোর পর এখন খেলতে পারছি।’
কাঠমান্ডুতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে হওয়া দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে রুপা জেতে নেপাল। কিন্তু নেপালকে হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান সেলিনা, ‘আমার স্বপ্ন, এশিয়ান গেমসে নেপালকে চ্যাম্পিয়ন করা।’