১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে আমি ও আবদুস সাত্তার নিনি সোনা জিতলাম। এরপরই দেশের শুটিংয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলল। নব্বই দশকে ভারতকেও পেছনে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সেরা ছিল বাংলাদেশ। দেশের মানুষ শুটিং নিয়ে আশাবাদী হতে শুরু করল। এরপর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে এই খেলাতে আমরা অনেক দূর যেতে পারতাম। অসম্ভব ছিল না অলিম্পিকে পদক জয়ও।
কিন্তু গত দুটি অলিম্পিকে বাংলাদেশের সেরা শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকির পারফরম্যান্স আমাদের বাস্তবতার জমিনে দাঁড় করিয়েছে। আমরা কতটা পেছনে, তা বোঝা গেছে টোকিও অলিম্পিকে। সর্বশেষ ২০১৯ কাঠমান্ডু এসএ গেমসেও আমরা সোনা জিততে পারিনি।
শুটিং ব্যয়বহুল খেলা। অর্থই এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। সরকার টাকা দেয় কিন্তু সেটা অপর্যাপ্ত। অনুশীলনের জন্য বেশি বেশি টাকা দরকার। শুটিং ফেডারেশনের আয়ের বড় উৎস অডিটরিয়াম ভাড়া। কোভিডের কারণে সেখান থেকেও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ওদিকে মাসে পাঁচ হাজার ডলার দিয়ে কোরিয়ান কোচ রাখা হয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে? তা ছাড়া আমি বলব, উচ্চপর্যায়ের কোচ না এনে চীনা কোচ আনাই ভালো হবে আমাদের জন্য।
শুটিংয়ের জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত গুলি নেই, অস্ত্র নেই। কোভিড, বিধিনিষেধ অনেক দূর পিছিয়ে দিয়েছে শুটিংকে। এই খেলায় আসা নবীনদের জন্য আর্থিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। ক্রিকেট, ফুটবলে খেলোয়াড়েরা অনেক টাকা পায়। শুটিংয়ে কোনো টাকাপয়সা নেই। আর্থিক সমস্যার সমাধানটা বেশি জরুরি। আরেকটা কথা, সব সময় বিদেশি কোচের ওপর নির্ভর করা যাবে না। স্থানীয় পর্যায়ে ভালো কোচ তৈরি করতে হবে।
ফেডারেশনের ভেতর কিছুদিন আগেও দেখা গেছে তীব্র দ্বন্দ্ব। সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাহেব দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ বিভিন্ন পদে ছিলেন। তিনি কয়টা শুটার তৈরি করেছেন? উল্টো আমাদের সিনিয়রদের বের করে দেওয়া হলো ফেডারেশন থেকে। সেই সিনিয়রদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। বাকিদের অকেজো করে ফেলা হয়েছে। আমাদের সাবেক শুটাররা যথেষ্ট যোগ্যতা রাখেন। ফেডারেশনের নানা দ্বন্দ্বে তাঁদের নেওয়া হয়নি।
শুটিং নিয়ে হারানো স্বপ্নটা ফিরিয়ে আনতে চাইলে বৃহত্তর পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের শুটারদের শুটিং জ্ঞান ভালো। দরকার শুধু ভালো পরিচর্যা। হতাশার মধ্যেও স্বপ্ন দেখি, অলিম্পিকের পদকমঞ্চে লাল–সবুজ পতাকা ওড়াবে আমাদের শুটিং।
লেখক: ১৯৯০ সালের কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী সাবেক শুটার।