বিশ্ব আর্চারির ওয়েবসাইট বলছে, এখন পর্যন্ত ক্রীড়াক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের সেরা আন্তর্জাতিক সাফল্য। সেই সাফল্য ক্রিকেটে আসেনি, আসেনি ফুটবলে। অন্য কোনো খেলা সে ধরনের সাফল্যের স্বপ্ন পর্যন্ত দেখতে পারেনি। সেরা সাফল্যটি এসেছে একজন আর্চার, একজন রোমান সানার হাত ধরেই। আক্ষেপ আর না পাওয়ার বেদনায় জর্জর ধূসর মরুভূমির এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এটি তো উৎসবে মেতে ওঠারই উপলক্ষ্য।
রোমান হঠাৎ করেই দেশকে গর্বিত করেননি। এই তো গত জুনে আর্চারির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতেছিলেন তিনি। কোনো খেলার বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সেটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোনো পদক। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠেই তিনি অনন্য এক অর্জনের অধিকারী হয়েছিলেন। সেটি হচ্ছে ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন।
অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের যেকোনো ক্রীড়াবিদের সেরা অর্জন। এর আগে গলফার সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ‘কোটা’য় খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটিও এক অর্জন ছিল। র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ৬০-এর মধ্যে থেকে। কিন্তু সরাসরি অলিম্পিকে খেলা বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদের জন্য খুব বড় একটা ব্যাপারই।
এশিয়ান র্যাঙ্কিং আর্চারিতে সোনার পদক জয় রোমানের আরও বড় স্বপ্নের পথে বড় পদক্ষেপ। সেই বড় স্বপ্নটা যে কী, সেটি বলে দিতে হয় না। এ দেশ এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত পদক পেয়েছে মোটে একটি, অলিম্পিকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো পদক না জেতার ব্যাপারটি তো খেলার দুনিয়ায় কৌতুকের বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোমানের স্বপ্ন এ অবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে আসতে চান। এশিয়াডে একটি সোনা কিংবা অলিম্পিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পদক জয়—বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৩তম স্থানে থাকা এ আর্চার যা করছেন, তাতে এমন স্বপ্ন তো দেখতেই পারে দেশ।
নিজের সেই স্বপ্নের কথাই আজ এশিয়ান র্যাঙ্কিং আর্চারিতে সোনা জেতার পর নতুন করে বলেছেন রোমান। এশিয়াড বা অলিম্পিকের প্রসঙ্গ ঊহ্য রেখেছেন। কিন্তু আসল কথাটা বলে দিয়েছেন তিনি, ‘সোনা জেতাটা আমার জন্য খুব আনন্দ ও গর্বের বিষয়। এটা বাংলাদেশের জন্যও আনন্দের উপলক্ষ। আমরা বিশ্বপর্যায়ে পদক জিতে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে চাই। আমি আশা করি, আমরা সাফল্যের এ ধারাটা ধরে রাখতে পারব।’
সাফল্যের রহস্যটাও জানিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর কথায় একটি জিনিস পরিষ্কার। কোনো রহস্য-টহস্য না। অধ্যবসায় আর পরিশ্রমের মাধ্যমেই তিনি নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছেন, ‘আমি সব সময় আমার শুটিং টাইমিংটা একই রাখার চেষ্টা করি। একই জিনিস বারবার করি। এভাবেই আমি ছন্দ খুঁজে পেয়েছি।’
এশিয়ান আর্চারিতে সোনা জেতাটা তাঁকে অলিম্পিক নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সেটি এ টুর্নামেন্টের মান ও এর প্রতিযোগীদের কারণেই, ‘ফাইনালের টাইমিং পদ্ধতি, স্কোরিং সবই অলিম্পিক মানের। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় সাফল্য আমাকে টোকিও অলিম্পিকে ভালো কিছু করার ব্যাপারে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’
রোমানের আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্নে বিভোর করে তুলতেই পারে। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রস্তুতির সুযোগটা কিন্তু তাঁকে করে দিতে হবে। বাংলাদেশ কি তা পারবে!