প্রায় ২৫ বছর ধরে কারাতে খেলছেন হাফিজুর রহমান। অসংখ্যবার উঠেছেন পদকমঞ্চেও। কিন্তু এবারের বাংলাদেশ গেমসে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতাই হয়েছে তাঁর। কারাতের কুমি ইভেন্টে নিজে খেলেছেন, একই ইভেন্টে যে খেলেছেন তাঁর মেয়ে কামরুন্নাহারও!
হাফিজুর ছেলেদের অনূর্ধ্ব-৭৫ কেজি ওজন শ্রেণির একক কুমিতে ও দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেছেন সেনাবাহিনীর হয়ে। আর কামরুন্নাহার সেনাবাহিনীর হয়েই অনূর্ধ্ব-৬৫ কেজি ওজন শ্রেণির একক কুমিতে জিতেছেন ব্রোঞ্জ।
দুই প্রজন্মের এমন আলো ছড়ানোর গল্প শুধু মার্শাল আর্টের খেলা কারাতের ম্যাটেই নয়, বাংলাদেশ গেমসের দাবাতেও ছিল এমন গল্প। সাদা–কালো বোর্ডে দেখা গেছে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়াকে। দুজনই খেলেছেন আনসারের হয়ে। জিয়াউর র্যাপিডে আর তাহসিন ক্ল্যাসিকালের দলগত ইভেন্টে জিতেছেন সোনা।
আমি জিতব সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। মেয়েও যে শেষ পর্যন্ত পদক পেয়েছে, এতেই আমি খুশি। দুটি সোনার পদকের চেয়েও ওর ব্রোঞ্জের মূল্য আমার কাছে অনেক।হাফিজুর রহমান, কারাতেকা
বাবা হাফিজুরকে দেখেই কারাতের প্রতি আগ্রহ জন্মে কামরুন্নাহারের। গত বছর বাবার কাছে হাতেখড়ি। সর্বশেষ জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম অংশ নিয়েই ওঠেন কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটে ওঠায় বাংলাদেশ গেমসের মেয়েদের কুমিতে অংশ নেওয়ার জন্য ফেডারেশন তাঁকে বাছাই করে। এরপর শুরু হয় তাঁর গেমসের প্রস্তুতি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ছাত্রী মাটিকাটা ইসিবি চত্বরের পাশে সোতকান কারাতে একাডেমিতে অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করেন। কারাতে কোচ আফজাল ইসলামের কাছে কৌশলগুলো শেখার পরও সবকিছু আবার ঝালাই করে নিতেন বাবার কাছে।
এবারের গেমসে একই দিনে ইভেন্ট ছিল বাবা ও মেয়ের। যদিও কামরুন্নাহার কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন খেলা শুরুর আগে, শেষ পর্যন্ত ব্রোঞ্জ জিতে চমকে দেন বাবাকে। হাফিজুর নিজে সোনা জিতে যতটা না খুশি, তার চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত মেয়ের পদক জেতায়, ‘প্রথমবারের মতো মেয়ে ও বাবা একই গেমসে খেলেছি। অনেকে আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে কৌতূহলী ছিল। আমি জিতব সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। মেয়েও যে শেষ পর্যন্ত পদক পেয়েছে, এতেই আমি খুশি। দুটি সোনার পদকের চেয়েও ওর ব্রোঞ্জের মূল্য আমার কাছে অনেক।’
মেয়ে খেলাধুলা করুক, তা চাইতেন না কামরুন্নাহারের মা। কিন্তু কারাতের প্রতি টানটাকে শেষ পর্যন্ত অস্বীকার করতে পারেননি কারাতেকার কন্যা। পড়াশোনা সামলেও খেলার জন্য সময় বের করে নেন। এ জন্য বাবাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি, ‘মা খেলতে নিষেধ করেন। কিন্তু বাবাকে দেখে খেলতে ইচ্ছে করে। বাবার সঙ্গে একই গেমসে পদক জিতেছি, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।’
ঘরোয়া দাবায় পরিচিত মুখ জিয়াউর রহমান ও তাহসিন তাজওয়ার। পিতা–পুত্র বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মুখোমুখিও হয়েছেন। তবে এবারই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে খেললেন একসঙ্গে। জিয়াউর আনসারের দাবা দলের অধিনায়ক। বাবার সঙ্গে একই দলে খেলতে পেরে রোমাঞ্চিত তাহসিন, ‘আমাকে একটু কম খেলার সুযোগ দিয়েছেন বাবা। দলের জেতার জন্য হয়তো ঝুঁকি নিতে চাননি। তারপরও বাবার সঙ্গে একই পদকমঞ্চে উঠেছি, এটাও তো বড় ব্যাপার।’
বাবাদের হাত ধরে যে খেলার শুরু, একদিন সে খেলায় বাবাদেরই টপকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন কামরুন্নাহার-তাহসিন।