টেস্ট অধিনায়কত্বে ফিরতে পারেন সাকিব আল হাসান
টেস্ট অধিনায়কত্বে ফিরতে পারেন সাকিব আল হাসান

টেস্টের নেতৃত্বে ফিরতে পারেন সাকিব

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠেও টেস্টে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। এই ব্যর্থতা আবারও সামনে নিয়ে এসেছে প্রশ্নটা—টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হকের ভবিষ্যৎ কী?

একে তো টেস্ট দলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক, তার ওপর ব্যাটসম্যান মুমিনুলের ব্যাটেও রান নেই। পরিস্থিতি এমন যে ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে ফিরে পেতে টেস্ট নেতৃত্ব নিয়ে তাঁকে নতুন করে ভাবতে বলেছে বিসিবি। শুধু তা–ই নয়, বিসিবির দেওয়া বার্তা অনুধাবন করে মুমিনুল যদি নিজ থেকে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, ‘নতুন’ টেস্ট অধিনায়কও অনেকটাই ঠিক করে রেখেছে বিসিবি—সাকিব আল হাসান।

অধিনায়কত্ব পেতে মৌন সম্মতি আছে সাকিবের

তার আগে অবশ্য মুমিনুলকেই বলতে হবে তিনি টেস্ট দলের নেতৃত্বে থাকতে চান কি না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য এরই মধ্যে মুমিনুলকে অধিনায়ক করে টেস্ট দল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যাওয়ার আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে সভায় যদি মুমিনুল অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে চান, তাহলে তাঁকে অধিনায়কত্বের জন্য জোর করা হবে না। সে ক্ষেত্রে সাকিবের কাঁধেই আবার তুলে দেওয়া হতে পারে টেস্ট দলের দায়িত্ব। বিসিবির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় সাকিবও নাকি এতে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

আর যদি মুমিনুল নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চান, আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুটি টেস্টের সিরিজ তাঁর জন্য হবে একটা ‘লাইফ লাইন।’ এই সিরিজে অধিনায়ক এবং ব্যাটসম্যান মুমিনুলের পারফরম্যান্সের ওপর দৃষ্টি থাকবে বিসিবির। ভালো করলে হয়তো আপাতত মুমিনুলের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনাটা থেমে যাবে। নয়তো মুমিনুল চান বা না চান, টেস্ট দলের নেতৃত্ব হয়তো তাঁকে ছাড়তেই হবে।

মুমিনুলকেই বলতে হবে তিনি টেস্টে অধিনায়কত্ব করতে চান কিনা

মিরপুরে শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ টেস্টের পর বিসিবি সভাপতির সঙ্গে টেস্ট নেতৃত্ব নিয়ে এক দফা আলোচনা হয়ে গেছে মুমিনুলের। সেই আলোচনাতেই মুমিনুল বলেছেন, অধিনায়কত্বের চাপ হয়তো তাঁর ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরপরই নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে মুমিনুলের কোর্টে বল ঠেলে দেয় বিসিবি।

কাল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসও দিয়েছেন একই আভাস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘অধিনায়কত্ব বাড়তি একটা চাপ অবশ্যই (মুমিনুলের জন্য)। ব্যাটিংয়ে রান না পাওয়ায় হয়তো বাকিদের অনুপ্রাণিত করতে তার সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু রান করছে না, সেটিও তার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যাটিংয়েও একটা প্রভাব পড়তে পারে। সেই সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা হলে ওর ভালো হয়।’

মুমিনুল হকের ব্যাটে চলছে রানের খরা। প্রশ্ন উঠে গেছে তাঁর টেস্ট দলে অধিনায়ক থাকা নিয়েও

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসে ৯ ও ০ রান করা মুমিনুল এ নিয়ে টানা সাত ইনিংসে দশের আগেই আউট হলেন। গত বছর পাকিস্তান সিরিজ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে মাত্র তিনবার যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কে। বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়কত্ব নেওয়ার পর থেকেই মুমিনুলের ব্যাটিং গড় নিম্নমুখী। অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্ট খেলে মুমিনুল ৩২.৪৪ গড়ে রান করেছেন মাত্র ৯১২। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বাংলাদেশ তিনটি টেস্ট জিতেছে, ড্র করেছে দুটি, হেরেছে ১২টিতে।

২০১৯ সালে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার কারণেই টেস্টের অধিনায়কত্ব উঠেছিল মুমিনুলের হাতে

ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফেরাতে মুমিনুলের অবশ্য চেষ্টার কমতি নেই। শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হতে না হতেই অনুশীলনে ফিরেছেন তিনি। কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কাজ করেছেন। অনুশীলন শেষে নাজমুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছি আমরা। খারাপ সময় এলে সাধারণত ব্যাটসম্যানরা মৌলিক বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে যায়। তাই সেটা নিয়েই কাজ করছি।’

সাকিব টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন আগেও। তাঁর ওপর আইসিসির বহিষ্কারাদেশের কারণে ২০১৯ সালের অক্টোবরে মুমিনুলকে টেস্ট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে দুই মেয়াদে বাংলাদেশ দলকে ১৪টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব, জয় তিনটিতে ও হার ১১টিতে।

২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটের কারণে সিরিজের মধ্যেই আপৎকালীন অধিনায়ক করা হয় সাকিবকে। সেটাই তাঁর প্রথম নেতৃত্বে আসা। সাকিবের দ্বিতীয় মেয়াদের অধিনায়কত্বের শুরু ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। কে জানে, আরেকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে হয়তো আরও একবার টেস্টের নেতৃত্ব উঠবে সাকিবের হাতে। তবে সেটি নির্ভর করছে টেস্ট নেতৃত্বকে মুমিনুলের ‘না’ বলার ওপর।