অর্থবিত্তের খতিয়ানে তাঁর উত্থান-পতন যেন পাহাড়ে চড়া আর ধপাস করে সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার মতো।
ক্যারিয়ারে তাঁর আয় ছিল ৫৮৪ মিলিয়ন বা ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার বেশি। সেখান থেকেই মাইক টাইসন একটা সময় দেউলিয়া হওয়ার পথে বসেছিলেন। ভাবা যায়!
এটাই যদি অভাবনীয় হয়, তবে আরও অকল্পনীয় মনে হবে যখন শুনবেন, প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বক্সার। কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন আবার।
তবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটা শোনার পর শ্রোতার ভ্রু কুঁচকানোর সম্ভাবনা আছে। টাইসনের এই কোটিপতি বনে যাওয়া গাঁজা বেচে। প্রতি মাসে নাকি গাঁজা বেচেই পাঁচ লাখ ডলার আয় করেন ৫৪ বছর বয়সী টাইসন। বাংলাদেশি মুদ্রায় তাঁর মাসিক আয়ের অঙ্কটা সোয়া ৪ কোটি টাকার বেশি!
ক্যারিয়ারজুড়ে ধর্ষণ, মাদকসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন টাইসন। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে ‘আয়রন মাইক’, ‘কিড ডায়নামাইট’ ডাকনাম পাওয়া টাইসনকে যে কারণে ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ‘দ্য ব্যাডেস্ট ম্যান অন দ্য প্ল্যানেট’ ডাকা হতো।
হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সর্বকালের সেরাদের একজন টাইসন বক্সিং ক্যারিয়ার শেষে কী ব্যবসায়ে নেমেছেন, সেটি নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল। সেটি এত দিন পর জানিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা।
নিজের একটা গাঁজা চাষের কোম্পানি খুলেছেন টাইসন, যেটির নাম দিয়েছেন ‘টাইসন র্যাঞ্চ।’ তবে মোটেও আইনবহির্ভূত কিছু করছেন না তিনি। তাঁর গাঁজার ফার্মটা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে, যেখানে গাঁজার ব্যবহার বৈধ।
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আগে গাঁজার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও ২০১৬ সালের নভেম্বরে ২১ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য সেটিকে বৈধতা দেওয়া হয়। এ নিয়মের বদলেরই ফায়দা তুলে নিচ্ছেন টাইসন। তাঁর টাইসন র্যাঞ্চ ফার্মটি প্রতিষ্ঠা করেছেন ১৬ হেক্টর জমির ওপর।
চিট শিট নামের এক ওয়েবসাইটকে উদ্ধৃত করে মার্কা লিখেছে, প্রতি মাসে এ ব্যবসা থেকে পাঁচ লাখ ডলার আয় করেন টাইসন। অবশ্য শুধু যে পাকা ব্যবসায়ীর মতো নির্মোহ থেকে পণ্যের কেনা-বেচা করেন, তা নয়। টাইসন নিজেও সময় পেলেই পণ্যটি চেখে দেখেন।
এই ‘চেখে দেখার’ পরিমাণেও চোখ কপালে তুলতে বাধ্য। এর আগে অনেকবার টাইসন নিজেই স্বীকার করেছেন, প্রতি মাসে তিনি ও তাঁর অতিথিরা মিলে প্রায় ৪০ হাজার ডলারের গাঁজা সেবন করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ লাখ টাকা!
নিজের ফার্মে তৈরি গাঁজায় টাইসন এতটাই মুগ্ধ যে তিনি এখন নিজেকে ‘সেরা গাঁজার প্রস্তুতকারক’ দাবি করেন। অবশ্য শুধু টাইসনই নন, তাঁর অতিথিরাও মুগ্ধ। সাবেক এনএফএল খেলোয়াড় এবেন ব্রিটন একবার বলেছিলেন, ‘আমরা মাসে ১০ টন গাঁজা খাই।’
২০১৯ সালের নভেম্বরে র্যাপার বি-রিয়ালের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে ক্যামেরার সামনেই বিশাল এক গাঁজা সেবন করেন টাইসন। এর কয়েক মাসে বক্সিং কিংবদন্তি নিজেই স্বীকার করেছিলেন, ‘গোতোলার বিপক্ষে লড়াইয়ের (২০০০ সালের “শোডাউন ইন মোটাউন” ফাইট) আগে আমি গাঁজা নিয়েছিলাম...আর সেটার প্রভাব ওর ওপর বেশি পড়েছে।’ সেই ফাইটে টেকনিক্যাল নকআউটে জিতেছিলেন টাইসন।
পেশাদার ক্যারিয়ারে মোট ৫৮টি ফাইটে লড়ে এর ৫০টিতেই জিতেছেন টাইসন, হেরেছেন ৬টিতে।