বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা জয়ের পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচ সাজু রাম গায়েত
বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা জয়ের পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচ সাজু রাম গায়েত

কাবাডি কোচের সাক্ষাৎকার

‘এ দেশে স্কুল–কলেজে কাবাডিই নেই’

এশিয়ান গেমস কাবাডিতে তিনবার রুপা জিতেছে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই ২০১০ থেকে এশিয়াডে পদকশূন্য। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে টেনেটুনে এসেছে ব্রোঞ্জ। জাতীয় খেলা কাবাডিতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া কেন?

কারণটা জানা বাংলাদেশ কাবাডি দলের ভারতীয় কোচ সাজু রাম গায়েতের। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ দল বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা ধরে রাখার পর প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন সাজু রাম গায়েত—

প্রশ্ন

১৯৯০, ১৯৯৪ ও ২০০২ এশিয়ান গেমস কাবাডিতে দ্বিতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৬ সালে ব্রোঞ্জ জয়ের পর এশিয়াডে পুরুষ বিভাগে আর পদক না আসার কারণ কী?

সাজু রাম গয়াত: এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ যখন রুপা জেতে, তখন এশিয়ান স্তরে বলতে গেলে মাত্র ৩টি দেশ কাবাডি খেলে। ভারত, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান। তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজ ছিল, যা এখন অনেক কঠিন।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: কেন কঠিন মনে করছেন?

সাজু রাম গয়াত: দেখুন, বাংলাদেশে স্কুল–কলেজে কাবাডিই নেই। এটা আমাকে অবাক করেছে। অথচ কাবাডি এ দেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে না এলে আজকের দিনে কাবাডিতে ভালো করা কঠিন।

বাংলাদেশ কাবাডি দলের কোচ সাজু রাম গয়াত
প্রশ্ন

প্রশ্ন: কাবাডিতে ভারত এত উন্নতি করল কীভাবে?

সাজু রাম গয়াত: ভারতে কাবাডির সংস্কৃতি অনেক দিনের। সরকার পৃষ্ঠপোষণা করে। স্কুল-কলেজে নিয়মিত খেলা হয়। সারা দেশেই কাবাডির চর্চা চলছে। আমি হরিয়ানার মানুষ এবং হরিয়ানা প্রাদেশিক দলের কোচ ছিলাম অনেক বছর। হরিয়ানা সরকার অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করে কাবাডিকে। সেখানে গ্রামে গ্রামে অনেক কাবাডি কোর্ট।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: সেই পৃষ্ঠপোষণা কেমন?

সাজু রাম গয়াত: এশিয়ান গেমসে ভারত সোনা জিতলে দলে থাকা হরিয়ানার প্রত্যেক খেলোয়াড়কে হরিয়ানা সরকার ৩ কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার দেয়। রুপা জিতলে অঙ্কটা ২ কোটি আর ব্রোঞ্জ জিতলে ১ কোটি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে প্রথম শ্রেণির চাকরি। যে কারণে হরিয়ানার অভিভাবকেরা ছেলেকে নিয়ে কোচের কাছে এসে বলে, ‌‘ওকে কাবাডি শেখান।’

প্রশ্ন

প্রশ্ন: ভারতের অন্য প্রদেশগুলোতে কাবাডিচর্চা কেমন?

সাজু রাম গয়াত: মহারাস্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক...দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে অনেক দিন ধরেই কাবাডিচর্চা হয়। পাঞ্জাবও একসময় কাবাডিতে ভালো ছিল। এখন গোয়া, কেরালার মতো রাজ্যগুলো কাবাডিতে এগিয়ে এসেছে। গোটা ভারতে কাবাডির একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে। প্রো কাবাডি আয়োজন ভারতের কাবাডিকে এগিয়ে নিয়েছে। ভারতে এখন কয়েক লাখ কাবাডি খেলোয়াড় আছে।

বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির শিরোপা জিতলেও এই খেলায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ
প্রশ্ন

প্রশ্ন: বাংলাদেশ আর ভারতের কাবাডিতে পার্থক্যটা ঠিক কোন জায়গায় দেখেন?

সাজু রাম গয়াত: দুই দেশের কাবাডি খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস সব প্রায় একই। তবে বড় পার্থক্যটা কাবাডি সংস্কৃতিতে, যা ভারতে আছে, বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে জাতীয় খেলা কাবাডির কোনো প্রচারণাও দেখি না। এটা হতাশার।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: এই যখন অবস্থা, বাংলাদেশ দল নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?

সাজু রাম গয়াত: এ বছরই সেপ্টেম্বরে চীনে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জের জন্য লড়ব। মূলত কোরিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াইটা হবে। পাকিস্তানের চেয়ে কোরিয়া ভালো দল। তবে এই দুটি দলকেই হারানো সম্ভব আমাদের পক্ষে।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: ব্রোঞ্জেই কেন সীমাবদ্ধ রাখছেন লক্ষ্যটা?

সাজু রাম গয়াত: কারণ, ভারত ও ইরান অনেক এগিয়ে। ভারত আগে একতরফা সোনা জিতত এশিয়ান গেমসে। কিন্তু গত জাকার্তা এশিয়াডে ভারতকে হারিয়ে সোনা জিতেছে ইরান। তবে আমার মতে ভারত এক নম্বর।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: কাবাডির উন্নয়নে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের নেওয়া উদ্যোগ যথেষ্ট মনে করেন?

সাজু রাম গয়াত: বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। এটা ভালো দিক। ১২ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডি করেছে টানা দুবার। দুই–তিন বছরে এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতায় দেখেছি জাতীয় দল গঠনে ফেডারেশন হস্তক্ষেপ করে না। এটা আমার ভালো লাগে। কিন্তু ভারতে তদবির, সুপারিশ ছাড়া জেলা স্তরের দল গঠনও কঠিন।

তৃণমূলে কাবাডিচর্চা বাড়ানোর কথা বলেছেন সাজু রাম গয়াত
প্রশ্ন

প্রশ্ন: কাবাডির উন্নয়নে বাংলাদেশের এখন কী করা উচিত?

সাজু রাম গয়াত: তৃণমূলে কাবাডিচর্চা বাড়িয়ে নতুন প্রতিভা তুলে আনতে হবে। স্কুল ও কলেজে কাবাডি খেলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রো কাবাডিতে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে খেলোয়াড়দের। আর সরকারের উচিত কাবাডিকে জাতীয় খেলার যথাযথ মর্যাদা দেওয়া।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: এবারের বঙ্গবন্ধু কাবাডি কেমন ছিল?

সাজু রাম গয়াত: গতবার ৫ দল খেলেছে, এবার ৮টি। কেনিয়া আগেরবারের চেয়ে শক্তিশালী দল ছিল। ইরাকও ভালো খেলেছে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি ছিল। আর এতে শিরোপা ধরে রাখতে পেরে আমরা খুশি।