মানুষটার কথা ভুলেই গেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। ৩১ বছর আগের কথা, মনে করিয়ে না দিলে মনে থাকার কথাও নয়। ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলার ক্রীড়াবিদদের তো খুব একটা মনে রাখা হয় না। না হলে পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জাতীয় সংগীতের সুমধুর সুর বেজেছিল যাঁর কল্যাণে, তাঁকে আমরা ভুলে যাব কেন!
তিনি মোখলেসুর রহমান। একসময় দেশের অন্যতম সেরা সাঁতারু। ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে টানা তিন সাফ গেমসে দেশের হয়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি। তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় জয় বোধ হয় ১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে জেতা প্রথম সোনার পদক। সেটির সঙ্গে যে অন্য রকম এক আবেগ মিশে ছিল। স্বাধীনতার পর তাঁর সেই সোনা জয় দিয়েই যে পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের মতো বেজেছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
১৯৮৯ সাফ গেমস পাকিস্তানে হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের আবেগ ছিল অন্য রকম, যে পাকিস্তানের সেনারা এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। যে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছে কেবল লাঞ্ছনা আর বৈষম্য। সে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুর বাজাটা ছিল অসাধারণ এক অনুভূতির ব্যাপার। মোখলেসুর রহমানের কল্যাণে সে অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য সেবার ওই একটি সোনা সম্বল করেই দেশে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তারকাখচিত দল নিয়েও ফুটবলে সোনা হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
কেমন ছিল সেই অনুভূতি? জাতীয় ক্রীড়া পাক্ষিক ক্রীড়াজগতে সে সময়ের একটি সংখ্যায় তাঁর বর্ণনা আছে। তারিখটা ছিল ১৯৮৯ সালের ২২ অক্টোবর। একটি সোনার পদকের জন্য তখন হন্যে গোটা বাংলাদেশ শিবির। ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সেদিন ১০ দশমিক শূন্য ৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছিলেন মোখলেস। ইসলামাবাদের সুইমিং কমপ্লেক্সে তখন বাংলাদেশি সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ ও অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে আনন্দের বন্যা। প্রায় সবার চোখে আনন্দাশ্রু। অনন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত। পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত! এরপর অনেকবারই পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজেছে। কিন্তু প্রথমবারের অনুভূতি সব সময়ই অন্য রকম।
মোখলেস ছিলেন ব্রেস্ট স্ট্রোকের তারকা সাঁতারু। অনেকেই বলেন, একটা সময় বুক সাঁতারে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ১৯৮৭ সালে কলকাতা সাফ গেমসে ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে ব্রোঞ্জ জিতে শুরু তাঁর। ১৯৯১ সালে কলম্বোয় পঞ্চম সাফে তিনি ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে অবশ্য অল্পের জন্য সোনা জিততে পারেননি। পরে ২০০ মিটারে ঠিকই সোনা জেতেন। ১৯৯৩ সালে দেশের মাটিতে ষষ্ঠ সাফ গেমসে তিনি নিজের তৃতীয় সোনার পদক জেতেন। টানা তিনটি সাফ গেমসে দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সোনার পদক জেতার রেকর্ড বাংলাদেশের আর কোনো ক্রীড়াবিদেরই নেই।