অনলাইনে গ্র্যান্ডমাস্টার বানাচ্ছেন জিয়া

ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য ছিল না। মনের মধ্যে তবু স্বপ্নটা ছিল। দাবা খেলে যে প্রাইজমানি পেতেন, তা জমিয়ে রাখতেন ফ্ল্যাট কেনার জন্য। এরপর বেছে নেন কোচিং পেশা। নিয়মিত টুর্নামেন্ট খেলার পাশাপাশি কোচিং করিয়েই কিনে ফেলেন নিজের একটা ফ্ল্যাট।

ফেডারেশন ও দেশের বাইরেও কোচিং করান দাবাড়ুদের। তবে জিয়ার ছাত্র বেশি অনলাইনেই। বর্তমানে ইংল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের ২০ জন দাবাড়ু ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে নিয়মিত কোচিং করছেন জিয়ার কাছে।

চেস ডটকম ও চেস ক্লাব ডটকম নামে দাবার দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দাবাড়ুদের খেলা শেখান জিয়া। করোনাকালে অবশ্য জুম দিয়েই চলছে কার্যক্রম। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগসহ জিয়া তাঁর প্রশিক্ষণে ব্যবহার করেন কম্পিউটার এবং দাবা খেলার সফটওয়্যার চেজ বেইজড।

করোনাকালের আগে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে জিয়া।

জিয়ার কাছে কোচিং করেই গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়েছেন ভারতের দীপ্তায়ন ঘোষ। জিএম নর্মের অপেক্ষায় আছেন আরেক ভারতীয় সায়ন্তন দাস। মালয়েশিয়ার দাবাড়ু ইয়ো লিটিয়ান হয়েছেন আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন (এশিয়ান জোনাল দাবার ৩.৩ অঞ্চলে)। ছাত্রদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দাবাড়ুই বেশি। আছেন মুম্বাই, দিল্লি ও চেন্নাইয়ের দাবাড়ুও।

বিশ্বের অনেক গ্র্যান্ডমাস্টারই বর্তমানে অনলাইনে কোচিং করাচ্ছেন। জিয়াও পেশাটাকে গুরুত্ব দিয়েই নিয়েছেন। অথচ কোচিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। কাল জিয়া বলছিলেন সেই গল্পটাই, ‘গ্র্যান্ডমাস্টারদের জন্য এটা একটা বিকল্প পেশা। বেঁচে থাকার জন্যই আমাকে এটা বেছে নিতে হয়েছে। যারা ক্যারিয়ারে খুব একটা সাফল্য পায় না, তারা এভাবে কোচিং লাইনে চলে যায়। টেনিস বা ক্রিকেটে যেমন স্পনসর আছে, দাবায় তেমন নেই। বিমানে নিয়মিত খেলতাম, কিন্তু সেই দলটাও একসময় বন্ধ হয়ে গেল। এরপর বিদেশে ভালো মানের টুর্নামেন্টে খেলতে গেলেও স্পনসর পেতাম না। এসব কারণেই কোচিংয়ের পথে আসা।’

২০০৬ সাল থেকে অনলাইনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেন জিয়া, প্রশিক্ষণও নিতেন। অনলাইনে কোচিংয়ের ধারণাটা পান তখনই। ২০১০ সালে জিয়ার ক্যারিয়ার প্রোফাইল অন্তর্ভুক্ত করে চেস ডটকম। অনলাইনে জিয়ার ফিদে রেটিং দেখে অনেকেই তাঁর সঙ্গে কোচিংয়ের জন্য যোগাযোগ করেন।

তবে জিয়ার ছাত্র জোগাড়ের পেছনে বড় অবদান ভারতীয় দাবা সংগঠক সৌমেন মজুমদারের। জিয়ার কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা, ‘ওনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের। ভারতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে তিনি উঠতি দাবাড়ুদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতেন।’

বিদেশিরা জিয়ার কাছে খেলা শিখতে আগ্রহী হলেও দেশে দেশি ছাত্র তেমন নেই। এই হতাশা পোড়ায় জিয়াকে, ‘আমাদের কেউ আগ্রহ নিয়ে দাবায় আসতে চায় না। বাবা-মা ভাবে এখানে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নেই। ফেডারেশন নিয়মিত টুর্নামেন্ট দেয় না। সবাই ক্রিকেটে যেতে চায়। কিন্তু এখান থেকেও কার্লসেন হওয়া সম্ভব, সেটা কে বোঝাবে অভিভাবকদের!’

নিজের সন্তান তাহসিন তাজওয়ারকে অবশ্য ধরাতে পেরেছেন দাবার নেশা। ছেলের কোচও বাবা। ছেলেকে নিয়েই এখন যত স্বপ্ন জিয়ার, ‘আমার ছেলে যেন ভালোভাবে দাবা খেলে, দ্রুত জিএম হতে পারে, এটাই চাওয়া। আমি ক্যারিয়ারটা গড়তে পারিনি, ছেলেকে সেই সুযোগ দিতে চাই।’