ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও শোনা গিয়েছিল কথাটা। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর ওয়ানডেতে ফিরে যেন স্বস্তি পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা—এটিই যে তাঁদের ‘পছন্দের’ সংস্করণ। সেই দাবির সমর্থন মিলেছিল সিরিজের ফলেও। যখন বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর আবার শোনা গেল কথাটা—এবার আসছে ওয়ানডে!
তবে অবশ্য ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ভাগ্য ফেরেনি। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হার। সেই হারও জিম্বাবুয়ের কাছে ৯ বছরের বেশি সময় এবং টানা ১৯ ম্যাচ জয়ের পর। সেটিও আগে ব্যাট করে, ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়ে। শক্তিমত্তা, দুই দলের র্যাঙ্কিং, মূল ক্রিকেটারদের থাকা—জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ছিল সব দিক দিয়েই। তবে দুর্দান্ত লড়াইয়ের মানসিকতায় তাঁদের পার করিয়েছেন সিকান্দার রাজা, ইনোসেন্ট কাইয়ারা। আর বাংলাদেশ আবার পুড়েছে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপে।
হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ব্যাটিংয়ে ১৫-২০ রান কম করে ফেলেছেন তাঁরা। সঙ্গে তামিম দেখছেন ক্যাচ হাতছাড়া করার দায়ও। বেশ কিছুদিন ধরেই ক্যাচ হাতছাড়া করার প্রসঙ্গটি ঘুরেফিরে আসে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে। সেটির মাশুল কোনো না কোনো দিন দিতেই হতো, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক।
প্রথম ১০ ওভারে অবশ্য এগিয়ে ছিল উইকেট না হারানো বাংলাদেশই। শুরুটা বেশ সতর্কভাবে করেছিলেন তামিম ও লিটন। হারারেতে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শুরু ম্যাচে শুরুতে ব্যাটিংটা সহজ নয়, সেটি আগের দিনই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তামিম। গতকালও ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বললেন সেটিই, ‘আগে ব্যাটিং করলে, এই কন্ডিশনে প্রথম ১০-১২ ওভারে বোলারের জন্য কিছু থাকে। এরপর সহজ হয়ে যায়। আমরা সেটা ভালোই সামাল দিই। আমাদের জুটিও ভালো হয়েছিল। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি।’
তামিমের আক্ষেপ, অমন একটা ভিতে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত কিছু রান আদায় করে নিতে হতো তাঁদের, ‘আমাদের আরও ১৫-২০ রান বেশি করা উচিত ছিল। আমরা ১ উইকেটে ২৫০ রানের মতো অবস্থায় ছিলাম। এ অবস্থায় থাকলে একটু দ্রুত রান তোলা দরকার ছিল, যেন আমরা ওই অতিরিক্ত ১৫-২০ রান করতে পারি।’
অবশ্য তামিম যে শেষের কথা বলছেন, ওই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ অবশ্য তুলেছে ওভারপ্রতি ৯ করে রান। তবে তৃতীয় পাওয়ারপ্লে বাংলাদেশ শুরু করেছিল মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে (চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন লিটন)। ৯ উইকেট বাকি রেখেও ৯০ রানকে যথেষ্ট না-ই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ সুযোগ হারিয়েছে মাঝের ওভারগুলোতেও। দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লেতেও উইকেট ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে ৩০ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে ১৬২ রান, সেখানে রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ে তুলেছে ১৯৪। ওই সময় চোট পেয়ে লিটনের উঠে যাওয়াও ভালোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। আবার এটাও তো ঠিক যে লিটন যখন উঠে যান, তখনো বেশ শক্ত ভিতেই দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ।
ইনিংসের মাঝপথে ৩০৩ রানের স্কোরকে অবশ্য খুব একটা কম মনে হওয়ার কারণ ছিল না। জিম্বাবুয়ে নিজেদের ইতিহাসে এর আগে ৩০০ বা এর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে মাত্র দুবার। এরপর প্রথম ২ ওভারে ২ উইকেট তুলে নেওয়ার পর তো বোলিং-ফিল্ডিংয়ে আরও উজ্জীবিত হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু তাঁদের শরীরী ভাষায় সেটি মনে হয়নি। যে দুজন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হন্তারক হয়ে উঠলেন, সেই সিকান্দার রাজা ও ইনোসেন্ট কাইয়া—দুজনই জীবন পেয়েছেন বাংলাদেশের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে।
তামিম এ প্রসঙ্গে যেটি বললেন, সেটির অর্থ হতে পারে এমন—প্রতিদিন ‘ভুল’ করে পার পাওয়া যাবে না। তাঁর ভাষায়, ‘প্রতিদিন আমি ক্যাচিংয়ের কথা বলি। কোনো না কোনো দিন তো এটা আমাদের হারের কারণ হতো। এটাই হয়তো সেই দিন ছিল। কারণ, টি-টোয়েন্টিতে আমরা অনেকবার ক্যাচ ফেলেছি। কিন্তু ম্যাচ জিতে গিয়েছি। কিন্তু যখন এমন ভালো উইকেটে আপনি ৪টা ক্যাচ ফেলবেন, তাহলে আপনি বেশি ম্যাচ জিতবেন না। এখন মনে হচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে পরের ম্যাচের আগে।’
শুধু ক্যাচিং নয়, তামিম হতাশ পুরো ফিল্ডিং নিয়েই, ‘অনেক সহজ রান দিয়েছি। এই মাঠে ২ রান হবে। কারণ, এক পাশটা বিশাল। এটা নিয়ে আমি ভাবছি না। কিন্তু সহজগুলো, যেগুলো সহজেই ডট বল হতে পারত, সেগুলো থামাতে পারলে আমরা আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারতাম। এগুলো অবশ্যই কষ্ট দেয়।’
জিতলেও যে একই কথা বলতেন, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তামিম, ‘আমি সব সময়ই বলি, হারের পর অনেক কিছুর দিকেই আঙুল তোলা যায়। কিন্তু এই কথাগুলো আমি জিতে এসেও অধিনায়ক হিসেবে বলতাম। জেতার পরও আমি সব সময় বলি, এটা ভুলে গেলে হবে না যে আমরা কী কী জায়গায় ভুল করেছি। আজকের দিনটা দারুণ একটা উদাহরণ—এত দিন যে আমরা ক্যাচ ফেলে, বাজে ফিল্ডিং করেও জিতেছি, একদিন না একদিন এটা আপনাকে এসে ধরতই। আজকেই সেই দিনটা।’