আইরিশ জিমন্যাস্ট রিস ম্যাকলেনাহান
আইরিশ জিমন্যাস্ট রিস ম্যাকলেনাহান

প্যারিস অলিম্পিক

জিমন্যাস্টিকসে ‘গ্র্যান্ড স্লাম’ জিতে ম্যাকলেনাহানের বৃত্তপূরণ

ঘরে সোনার পদকের অভাব ছিল না রিস ম্যাকলেনাহানের। আইরিশ জিমন্যাস্ট কী জেতেননি! দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইউরোপিয়ান শিরোপা জিতেছেন তিনবার। কমনওয়েলথ গেমসের পমেল হর্স ইভেন্টের সোনাও জিতেছেন একবার। তবু তাঁর ট্রফি কেসটা কেমন জানি ফাঁকা ছিল, সবচেয়ে বড় পদকটাই যে ছিল না সেখানে। অবশেষে সেই অভাব ঘুচেছে ম্যাকলেনাহানের। ২৫ বছর বয়সী আইরিশ জিমন্যাস্ট যে প্যারিসে পমেল হর্সে সোনা জিতেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলছে প্যারিসে সোনা জিতে ‘গ্র্যান্ড স্লাম’ পূরণ করেছেন ম্যাকলেনাহান। সম্ভাব্য সব বড় প্রতিযোগিতার সোনাই যে জেতা হয়ে গেল তাঁর।

আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ ম্যাকলেনাহানের কাছে সব সময়ই অলিম্পিকের সোনা জয়টা ছিল পর্বত শিখর জয়ের মতো। প্যারিসে সেই শিখরটা জয়ের পর তিনি বললেন কতটা কঠিন ছিল সেটি, ‘জিমন্যাস্টিকসের সর্বকালে সেরা পমেল হর্স ফাইনাল ছিল এটি।’

ম্যাকলেনাহান এমনটা বলতেই পারেন। রুপাজয়ী কাজাখস্তানের নারিমান কুরবানভের চেয়ে যে মাত্র ০.১ পয়েন্ট বেশি পেয়ে জিতেছেন তিনি। ফাইনালের আট প্রতিযোগীর চারজনই পেয়েছেন ১৫ পয়েন্টে বেশি। দুজন তো অল্পের জন্যই ছুঁতে পারেননি ১৫ সংখ্যাটাকে।

পমেল হর্সে সোনা জিতেছেন রিস ম্যাকলেনাহান

এমন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সোনা জেতা ম্যাকলেনাহান এক যুগের কঠোর পরিশ্রমের ফসলই শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলতে পারলেন। ১২ বছর আগে তাঁর মা ট্রেসি যখন তাঁকে কোচ লুক কারসনের হাতে তুলে দিলেন স্বপ্নের বীজটা রোপিত হয়েছিল সেদিনই। কীভাবে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ম্যাকলেনাহান, ‘১৪ বছর বয়সে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো আমাকে নিয়ে। আমার কোচ আমার মাকে বললেন, “এই ছেলেটা পমেল হর্সে বিশ্বসেরা হতে পারে।”’

অল্প বয়সেই ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাক্স হুইটলক ও লুইস স্মিথের মতো জিমন্যাস্টদের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়েছিলেন ম্যাকলেনাহান। লন্ডন ও রিও অলিম্পিকে পমেল হর্সে রুপা জেতা স্মিথের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার কথা বললেন ম্যাকলেনাহান, ‘অলিম্পিকে আমার অন্যতম সেরা মুহূর্ত হলো লন্ডনে স্মিথকে পারফর্ম করতে দেখা। আমি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলাম, পুরো লন্ডন শহরই তাঁর পোস্টারে ছাওয়া ছিল। তাঁর কাঁধে কত বড় প্রত্যাশার চাপ চাপানো ছিল বোঝাই যায়।’

অলিম্পিকে নিজের সোনা জয়টাকে লন্ডনের স্মিথের সঙ্গেই তুলনা করলেন ম্যাকলেনাহান, ‘আমার মনে হচ্ছে যেন লুইস স্মিথের লন্ডন ২০১২ ফিরে এসেছে। আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর আয়ারল্যান্ডের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম (সোনার) পদক জয়ের হাতছানি ছিল। আর এত বেশি চাপ জয় করে সোনা জেতার কারণেই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’

বহুপ্রতীক্ষিত অলিম্পিক সোনাজয়ের পর রিস ম্যাকলেনাহান

২০১৮ সালে কমনওয়েলথ গেমস ও প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন ম্যাকলেনাহান। তবে তিন বছর পর টোকিও অলিম্পিকে কোনো পদক জিততে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর একবার করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইউরোপিয়ান শিরোপা জয়ের পরই অলিম্পিক সোনার স্বাদ পেলেন ম্যাকলেনাহান, ‘পাগলাটে এক পথচলা এটি। সব অ্যাথলেটরই নিজের গল্প থাকে। আমার গল্পটা কোনো দিকে যায় সেটি দেখতে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম সুখের একটা গল্প লিখতে। আমি সম্ভবত সেটি করতে পেরেছি। এই পদকটা ছিল পথচলার জ্বালানি। আমাদের খেলায় এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী আছে।’