দৃশ্যটা প্রায় একই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানোর পর মোহালি স্টেডিয়ামে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন বিরাট কোহলি। ৫১ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারতকে জেতানোর পরও কোহলির শরীরী ভাষায় ছিল অবিশ্বাস।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেও প্রায় একই রকম ইনিংস খেলে ভারতকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় এনে দিয়েছেন কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে হাঁটু গেড়ে বসেছেন এমসিজির উইকেটে। বাঁধভাঙা উদ্যাপন করতে গিয়ে উইকেটে ঘুষিও মেরেছেন।
সাত বছরের ব্যবধানে খেলা দুটি ইনিংসই বলে দেয় কোহলির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের গল্প। প্রথমটি তিনি খেলেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে। আজকের ইনিংসটিকে কোহলির ক্যারিয়ারের পুনর্জন্মের ইনিংস বললেও ভুল হবে না।
সর্বশেষ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি অর্থহীন ম্যাচে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করলেও কোহলির ব্যাটিং বদলে যাওয়া টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় সঙ্গে মানানসই কি না, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছিল।
আজ সে বিতর্কের জবাবই যেন দিলেন তিনি। সে জন্যই হয়তো মেলবোর্নে ৯০ হাজার মানুষের সামনে খেলা আজকের ইনিংসটিকেই শীর্ষে রাখলেন কোহলি। ম্যাচ শেষে কোহলি নিজেই বলেছেন, ‘আজকে পর্যন্ত আমি সব সময় বলে এসেছি মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা সেই ইনিংসটি আমার সেরা। আমি সেদিন ৫২ বলে ৮২ রান করেছিলাম। আজ আমি ৫৩ বলে ৮২ রান করেছি। প্রায় একই রকম একই ইনিংস। কিন্তু আমি এই ইনিংসটিকে ম্যাচের বিশালতার কারণে শীর্ষে রাখব। ম্যাচের পরিস্থিতি যেমন ছিল, মনে হচ্ছিল জয় অসম্ভব। কিন্তু হার্দিক আমাকে ওই জুটিতে অনুপ্রাণিত করে গেছে। আমরা ম্যাচের গভীরে গিয়েছি এবং যা ঘটার ঘটে গেছে।’
ম্যাচের বিশালতা, সঙ্গে নিজের আবেগ, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর ফর্ম নিয়ে সমালোচনা, সব মিলিয়েই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সে কারণেই ম্যাচ শেষে বলছিলেন, ‘অবিশ্বাস্য আবহ। সত্যি কথা বলতে, আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। হার্দিক আমাকে বারবার বলছিল, শুধু বিশ্বাস করে যাও। তুমি জেতাতে পারবে, শেষ পর্যন্ত টিকে থাক। সত্যি কথা বলতে, আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।’
পাকিস্তানের ১৫৯ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে ভারত ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর সেখান থেকে হার্দিক ও কোহলির জুটিতে ম্যাচে কোনোরকম টিকে থাকে ভারত। শেষ ১৮ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪৮ রান। সেখান থেকে পরের দুই ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফের ওভারে চার-ছক্কা মেরে কোহলি শেষ ওভারে সমীকরণটা নামিয়ে আনেন ১৬ রানে।
ম্যাচের সে মুহূর্তটার কথাই কোহলি আলাদা করে বললেন, ‘যখন শাহিন প্যাভিলিয়ন প্রান্ত থেকে ওভারটা করল, তখন। আমি তখন হার্দিককে বলছিলাম, আমাদের শাহিনকে মারতে হবে। নেওয়াজের একটা ওভার করতেই হতো। আমি যদি হারিসকে মারতে পারি, তাহলে হয়তো ওরা ঘাবড়াবে। কারণ, হারিস তাদের মূল বোলার। আমি নিজেকে জাগিয়ে তুলছিলাম, যেন হারিসের ওভারে ২টি ছক্কা মারতে পারি। তখন ৮ বলে ২৮ রানের সমীকরণ ৬ বলে ১৬ রানে নেমে আসে। আমি আসলে শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না কী বলব।’
১৯তম ওভারে রউফকে লং অন দিয়ে মারা ছক্কার প্রশ্নটা আলাদা করে বলেছেন কোহলি, ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবেই খেলেছি। আমি স্থির থাকতে চেয়েছিলাম। লং অন দিয়ে মারা ছক্কাটা স্লোয়ার বল ছিল। পরেরটায় আমি শুধু ব্যাট চালিয়ে দিয়েছি। এখন এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, এটা হওয়ারই ছিল। এটা বিশেষ মুহূর্ত।’
ইনিংসটি বিশেষ হওয়ার আরও একটি কারণ আছে। ৮২ রানের ইনিংসের সৌজন্যে সতীর্থ রোহিতকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়ে গেছেন কোহলি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন কোহলির রান ৩৭৯৪, রোহিতের রান ৩৭৪১। তবে এমন ইনিংসের পর কোহলির কাছে রেকর্ডটা হারিয়ে একটুও আক্ষেপ থাকার কথা না রোহিতের।