ঐতিহাসিক জয়ের পর মরক্কোর মেয়েদর উদ্‌যাপন
ঐতিহাসিক জয়ের পর মরক্কোর মেয়েদর উদ্‌যাপন

প্রথম গোলেই বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল মরক্কো

ম্যাচ শেষ হতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মরক্কোর মেয়েরা। এই কান্না অবশ্য বেদনার নয়, আনন্দের। বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের আনন্দ। তা–ও নিজেদের অংশগ্রহণ করা প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম গোল করেই পাওয়া জয়, যা এসেছে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই। এই জয়ের আনন্দ তো বাঁধভাঙা হবেই। মরক্কোর মেয়েদের এই জয়োল্লাস চলল অনেকক্ষণ ধরে। কেউ তখন উচ্ছ্বাসে লাফাচ্ছেন, কেউ আবার একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভাসছেন আনন্দাশ্রুতে।

অন্য দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের চোখেমুখে অবিশ্বাস। মরক্কোর মতো নবাগত দলের বিপক্ষে হার যেন মানতেই পারছে না তারা। তবে হারের কষ্টের চেয়ে হতভম্বের অভিব্যক্তিই ছিল কোরিয়ান মেয়েদের চোখেমুখে। ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দাপুটে খেলেও জয় পায়নি তারা। শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই নয়, গ্যালারিতে থাকা কোরিয়ান সমর্থকদের চোখেমুখেও দেখা গেছে হতাশা। তাঁরাও যেন মানতে পারছিল না দলের এই হার। মরক্কোর বিপক্ষে এই হার বিশ্বকাপ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদায়ও নিশ্চিত হয়ে গেছে।

এদিন প্রথমার্ধের ৬ মিনিটে পাওয়া একমাত্র গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়টি পেয়েছে মরক্কো। এর আগেও গত ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলে সবাইকে চমকে দিয়েছিল মরক্কোর ছেলেরা। এবার মেয়েরাও ফুটবলে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিল দেশটিকে।

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে মরক্কোর মেয়েদের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। জার্মানির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৬-০ গোলে। সেদিন মাঠে পাত্তায় পায়নি তারা। তাই এই ম্যাচেও সব মিলিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিল ফেবারিট। কিন্তু ম্যাচ শুরু হতেই দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র। ৬ মিনিটের মাথায় ইবতিসাম জারাইদির গোলে লিড নেয় মরক্কো। আইত এল হাজের ক্রসে বলে মাথা ছুঁয়ে লক্ষ্যভেদ করে মরক্কোকে এগিয়ে দেন জারাইদি। কাছাকাছি জায়গা থেকে দূরের পোস্ট পাঠিয়ে করা সেই গোলটিই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।

গোলের পর ইবতিসাম জারাইদির উল্লাস

ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য চেষ্টা চালিয়ে যায় ম্যাচে ফেরার। দারুণ সব আক্রমণও তৈরি করে তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলটি যেন সোনার হরিণ, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টার পরও যা ধরা দেয়নি। তবে এই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার ফিনিশিং ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৬টি শট নিলেও কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। অন্যদিকে পাল্টা আক্রমণ থেকে মরক্কোও সুযোগ পায় ব্যবধান বাড়ানোর, কিন্তু তারাও সেই সুযোগকে গোলে রূপান্তর করতে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। এরপরও মরক্কোর মেয়েরা হয়তো মন খারাপ করবেন না। জয়ের জন্য একটি গোলই যে যথেষ্ট প্রমাণিত হয়েছে।

এদিন শুধু ঐতিহাসিক জয় দিয়েই নয়, ভিন্ন একটা কারণেও ইতিহাস গড়েছে মরক্কো। যদিও ইতিহাসটি গড়েছেন মরক্কোর ২৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার নুহাইলা বেনজিনা। ইতিহাসের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে হিজাব পরে খেলতে নেমেছিলেন এই ফুটবলার।

২০১৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে ধর্মীয় কারণে খেলার সময় মেয়েদের হিজাব পরার অনুমতি দেয় ফিফা। ডিফেন্ডার হলেও এদিন গোলও পেয়ে যেতে পারতেন বেনজিনা। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া করায় গোলটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি তাঁর। তবে গোল না পেলেও তাঁর মনে নিশ্চয় আক্ষেপ থাকবে না। দল যে স্মরণীয় এক জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

এই জয়ে পরের পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনাটা টিকে থাকল মরক্কোর। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তারা খেলবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে জয় পেলেই নকআউট পর্বের টিকিট পাওয়ার সুযোগ পেতে পারে আফ্রিকার আরব দেশটি। সব মিলিয়ে নিজেদের স্বপ্নের পরিধিটাকে এখন তারা চাইলে আরও বড় করতেই পারে।