বেটিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির কারণে জাতীয় রেডিও স্টেশনের কাজ থেকে থেকে সরে যেতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার মিচেল জনসনকে। আগামী রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে সিরিজে এবিসি রেডিওর হয়ে কাজ করার কথা ছিল জনসনের।
তবে বিপত্তি বেধেছে জনসনের সঙ্গে বেট নেশন নামের একটি কোম্পানির চুক্তি থাকায়। তাঁকে জানানো হয়েছে, এবিসি রেডিওর নীতি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা অবস্থায় কোনো বেটিং কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা যাবে না।
এবিসি রেডিওর এমন নিয়ম অবশ্য পুরোপুরি ‘নৈতিকতার’ ওপরই নির্ভরশীল। এমনিতে আইন অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় বেটিং বৈধ। শুধু তা–ই নয়, তাদের ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও বেট৩৬৫ নামের একটি বেটিং কোম্পানির চুক্তি দীর্ঘদিনের। ক্রিকেটের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগেরও (এএফএল) চুক্তি আছে বেটিং কোম্পানির সঙ্গে। রুলস ফুটবলের বিভিন্ন ক্লাবেরও আলাদা এমন চুক্তি আছে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও কেন রাষ্ট্রায়ত্ত একটি রেডিও স্টেশন বেটিং নিয়ে এমন কঠোর নীতি মেনে চলবে, জনসন বুঝতে পারছেন না সেটিই। দ্য অস্ট্রেলিয়ানের সঙ্গে কথা বলার সময় জনসন প্রশ্ন তুলেছেন এ নিয়ে। তাঁর যুক্তি, এবিসি রেডিওর অর্থায়ন করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। যে সরকার বেটিং থেকে বড় রাজস্বই পায়। অথচ সেই এবিসি রেডিওই আবার বেটিংয়ের ব্যাপারে এমন কঠোর।
ব্যাপারটিকে ভণ্ডামি হিসেবেই দেখছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৩ টেস্ট খেলে ৩১৩টি উইকেট নেওয়া জনসন, ‘এ নিয়মের মধ্যে বেশ বড়সড় ভণ্ডামি আছে। আমি বুঝতে পারছি না। তাদের হয়ে ধারাভাষ্য দিতে গেলে কী বলা যাবে আর কী বলা যাবে না, সেটিও ভাবাচ্ছে আমাকে।’
এবিসি রেডিওর এমন নীতিতে বিস্মিতই হয়েছেন জনসন, ‘আমি আসলে আকাশ থেকে পড়েছি…তাদের নৈতিকতা নির্ধারণের যে মাপকাঠি, আমাদেরও কি তাহলে এটির সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে? আমার আসলে কিছু করার নেই। এটিই নিয়ম এবং আমার মনে হয় না তাদের সঙ্গে কাজ করব।’
এমনিতে এবিসির হয়ে কাজ করা উপভোগ করছিলেন জনসন, জানিয়েছেন এমন। এ সিরিজেও কাজ করতে মুখিয়ে ছিলেন তিনি।
জনসনের বেটিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আপত্তির ব্যাপারটি এবিসি রেডিও প্রথমে জানায় তাঁর ব্যবস্থাপনা দলকে। তাঁকে নিয়ে সমস্যা আছে, বলা হয় এমন। জনসনের ম্যানেজার টনি বক্স বলেছেন, ‘আমরা যখন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছি, মিচ আসলে অনেক হতাশ হয়েছে। তার মনে হয়েছে এখানে পরিষ্কার ভণ্ডামি আছে। যেখানে ওই খেলা বেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে একই কারণে শাস্তি পেতে হচ্ছে। আবার এবিসি চলেও ওই খেলার স্পন্সরশিপ বা আয়কর থেকে পাওয়া টাকায়।’
সম্প্রতি বেটিংসংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পর বিতর্কে পড়েছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বেটউইনার নিউজ নামের ওই সংস্থাটি নিজেদের স্পোর্টস নিউজ ওয়েবসাইট বললেও সেটি আদতে বেটউইনার নামের বেটিং কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান। অবশ্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বেটিংসংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বিসিবির নীতি অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের আইনেও বেটিং বা জুয়া অবৈধ।