ক্যামেরুনের বিপক্ষে আজ বেঞ্চ শক্তি বাজিয়ে দেখবে ব্রাজিল
ক্যামেরুনের বিপক্ষে আজ বেঞ্চ শক্তি বাজিয়ে দেখবে ব্রাজিল

৬০ বছরের মধ্যে ব্রাজিলের সবচেয়ে তরুণ আক্রমণভাগ দেখা যাবে আজ

শেষ ষোলো আগেই নিশ্চিত করায় বলা হচ্ছে, ব্রাজিলের জন্য ক্যামেরুন ম্যাচটা স্রেফ নিয়মরক্ষার লড়াই। কিন্তু আসলেই কি তাই? ‘জি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল এখনো ঠিক হয়নি।

আজ রাতে ‘জি’ ও ‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচগুলো শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো ঠিক হবে। শেষ ষোলোর সমীকরণ হচ্ছে, ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের মুখোমুখি হবে ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ। ‘এইচ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল আবার শেষ ষোলোয় ‘জি’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের মুখোমুখি হবে। অর্থাৎ শেষ ষোলোয় সহজ কিংবা কঠিন প্রতিপক্ষ পাওয়া নির্ভর করবে নিজ নিজ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হওয়ার ওপর। সে হিসেবে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচটিকে আর যা–ই হোক, শুধু নিয়মরক্ষার লড়াই বলা যায় না।

কিন্তু ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচেই ব্রাজিলকে একটু অচেনা লাগতে পারে। নেইমার তো চোটের কারণে আগেই ছিটকে পড়েছেন গ্রুপপর্ব থেকে। আজকের ম্যাচেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা নেই। এর বাইরে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন ব্রাজিল কোচ তিতে। খেলাতে পারেন রিজার্ভ দলের কয়েকজনকে। একদম গোলপোস্ট থেকে শুরু করতে পারেন তিতে। আলিসনের জায়গায় ব্রাজিলের পোস্টে দাঁড়াতে পারেন এদেরসন। ৩৯ বছর বয়সী চিরসবুজ দানি আলভেজের মাঠে নামা নিশ্চিত। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডও নাকি তাঁর হাতে থাকবে—জানিয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম।

মাঝমাঠে ফাবিনিও ছাড়াও ব্রাজিলের আক্রমণভাগে দেখা যেতে পারে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ও আন্তনিকে। তিতের এই একাদশ পাল্টানোর পেছনে প্রধান যুক্তি হতে পারে একটাই, শেষ ষোলো যেহেতু আগেই নিশ্চিত হয়েছে, তাই নকআউট পর্বের আগে নিয়মিত খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।

ব্রাজিলের শুরুর একাদশে আজ দেখা যেতে পারে গিমারায়েস ও পেদ্রোকে

তিতের এই যুক্তি খণ্ডনের পথ নেই। নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষ কে—তা নিয়ে নিশ্চয়ই খুব বেশি মাথাব্যথা নেই পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। অনেকে বলতে পারেন, ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্য নিয়ে আসা দলের এসব নিয়ে ভাবাটা অনুচিত। প্রতিপক্ষে যে–ই হোক, খেলতে হবে নিজেদের খেলা। আর কে না জানে, নিজেদের খেলা খেলতে আক্রমণভাগই ব্রাজিলের বড় ভরসার জায়গা। সেখানেও তিতে এমনকিছু ভেবে রেখেছেন, যা ব্রাজিল–ভক্তদের ফিরিয়ে নিতে পারে পেলের সময়ে।

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, ব্রাজিলের আক্রমণভাগে আজ রদ্রিগো, আন্তনি, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিকে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ ‘চতুষ্টয়’ আক্রমণভাগ। কিন্তু তিতে একাদশ চূড়ান্ত করার আগপর্যন্ত কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, এই ৪ খেলোয়াড়কে নিয়ে তিতে একাদশ গড়লে তা রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নেবে। বিশ্বকাপে গত ৬০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এটাই হবে ব্রাজিলের সর্বকনিষ্ঠ আক্রমণভাগ। এই চার খেলোয়াড়ের গড় বয়স ২২.৯ বছর। তাঁদের মধ্যে তিনজনের জন্ম এই শতাব্দীতে—রদ্রিগো (৯ জানুয়ারি, ২০০১), আন্তনি (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০) ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (১৮ জুন, ২০০১)। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আর্সেনাল উইঙ্গার মার্তিনেল্লিই সবচেয়ে কম বয়সী।

আক্রমণভাগে ব্রাজিলের এই চার খেলোয়াড় একাদশের হয়ে মাঠে নামলে ফিরে আসবে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের স্মৃতি। সে বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচে চার খেলোয়াড় নিয়ে আক্রমণভাগ সাজিয়েছিল ব্রাজিল—পেলে, গারিঞ্চা, মারিও জাগালো ও মাজ্জোলা। সে সময় এই চার খেলোয়াড়ের গড় বয়স ছিল ২২.২ বছর। পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ৭ মাস, গারিঞ্চার ২৪ বছর ৭ মাস, মাজ্জোলা ১৯ বছর ১০ মাস ও জাগালোর বয়স ছিল ২৬ বছর ১০ মাস।

অনুশীলনে ব্রাজিল দল

বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ইতিহাসে মাত্র দুটি আসরে এর চেয়ে কম বয়সী আক্রমণভাগ মাঠে নামিয়েছে ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালের তথ্য–উপাত্ত তো আগেই দেওয়া হলো। আর আছে ১৯৩৪ আসর—যেখানে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ২২.১ বছর।

তবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ সে বিশ্বকাপে চারজন নয় পাঁচজনকে নিয়ে ‘ডব্লিউএম’ ছকে সাজানো হয়েছিল। তিনজন সামনে এবং দুজনকে পেছনে রেখে ছকটা এমনভাবে করা হয় যে সোজা করে দেখলে ইংরেজি বর্ণ ‘ডব্লিউ’ আর উল্টো করে দেখলে ‘এম’–এর মতো লাগে। সেই আক্রমণভাগে উইঙ্গার হিসেবে পঞ্চম খেলোয়াড়টি ছিলেন লুইজিনহো। তখন তাঁর ২৩ বছর বয়স বিবেচনা করলে ১৯৩৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের গড় বয়স দাঁড়ায় ২২.৬ বছর। বিশ্বকাপে ব্রাজিল আক্রমণভাগে অন্তত চার খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে, সেসব ম্যাচ দেখে এই হিসেবটি করা হয়েছে।