বারবার সাদ উদ্দিনের ভুলে পেনাল্টি পাচ্ছে প্রতিপক্ষ
বারবার সাদ উদ্দিনের ভুলে পেনাল্টি পাচ্ছে প্রতিপক্ষ

সাদ নিজেও জানেন না বারবার কেন তাঁর কারণে পেনাল্টি

বাংলাদেশের ফুটবলে সাদ উদ্দিন নামটা এলেই অনেকের চোখে ভাসে সেই দৃশ্যটা। কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের বিপক্ষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি–কিকে সাদের উড়ন্ত হেডে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গ্যালারি। ৪২ মিনিটের গোলে পাওয়া এই অগ্রগামিতা ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিততে না পারলেও ওই হেড সাদকে রাতারাতি বাংলাদেশের ফুটবলে তারকা বানিয়ে দেয়।

কিন্তু সেই সাদ পরবর্তী সময়ে আলোচনায় আসেন ভিন্ন কারণে। মানে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি দিয়ে। ২০২১ মালদ্বীপ সাফে নেপালের সঙ্গে জিতলে যেখানে ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ—ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে বক্সে তাঁর ফাউলে পিছিয়ে থাকা নেপাল পেনাল্টিতে ১–১ করে। বাংলাদেশ আর ফাইনালে উঠতে পারেনি।

সাদের ভুলেই বাংলাদেশের বিপক্ষে পেনাল্টি পায় সেশেলস

ওই বছরই শ্রীলঙ্কায় চারজাতি টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করলে ফাইনালে উঠত বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে ৯০তম মিনিটে বক্সে বল লাগে সাদের হাতে। পেনাল্টিতে গোল করে স্বাগতিক দল ২–১ গোলে জিতে ফাইনালে উঠে যায়।

সর্বশেষ গত পরশু সিলেটে ফিফা প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ১–০ গোলে সেশেলস হারিয়েছে—গোলের উৎস সাদের একটা ফাউল। ৬১ মিনিটে বক্সে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের মাথার ওপর বিপজ্জনকভাবে পা তুলে দেন সাদ। পেনাল্টিতে গোল করে জিতে যায় সেশেলস।

সেশেলসের কাছে ঘরের মাঠে হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা বোকার মতো পেনাল্টি দিয়েছি। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। এভাবে পেনাল্টি দিলে জিতব কীভাবে।’
এমন কথাও উঠছে, বারবার সাদেরই কেন এমন ভুল হচ্ছে? সাদ নিজেও এর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। সিলেট থেকে আজ বাংলাদেশ দল ঢাকা ফিরলেও সাদ রয়ে গেছেন সিলেট শহরে তাঁর বাসায়। সেখান থেকে আজ ফোনে সাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, কেন বারবার আমি। অবশ্যই ম্যাচে আমার কারণে প্রতিপক্ষ পেনাল্টি পাক, এটা চাই না। কিন্তু ওটা হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছাকৃত এমন করিনি। সত্যি বলতে বলার কিছু নেই।’

সাদের ভুলে বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্‌যাপনের উপলক্ষ্য পায় সেশেলস

তবে ওইভাবে বল ক্লিয়ারের চেষ্টা না করলে গোল হয়ে যেত দাবি ২৪ বছর বয়সী সাদের, ‘আমি ছিলাম শেষ ডিফেন্ডার। তাই মরিয়া হয়ে বল ক্লিয়ারের চেষ্টা করছিলাম। আমার ধারণা, ওটা গোল হয়ে যেত। যাহোক, রেফারি পেনাল্টি দিয়েছেন।’ তবে এই পেনাল্টির কারণে দল হেরেছে মানতে রাজি নন তিনি, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছি ম্যাচে। এলিটা কিংসলে আসার পর দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট হয়েছে। পেনাল্টির পরও আমরা গোল শোধ করে জিততে পারতাম। আসলে আমরা হেরেছি গোল করতে না পারায়। এই জায়গায় আমাদের ঘাটতি ছিল।’

মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে ঘুমাতে পারেননি জানিয়ে সাদ উদ্দিন বলেন, ‘খুবই খারাপ লেগেছে আমরা হেরে যাওয়ায়। রাতে সাহ্‌রি করে ঘুমাই। আসলে মাঠে কেউ চায় না এমন কিছু করতে, যেটা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওটা আসলে হয়ে গেছে।’

তবে মালদ্বীপে তাঁর ফাউলে নেপালকে দেওয়া পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল না মনে করেন সাদ, ‘ওটা পেনাল্টি দেওয়ার মতো ফাউল ছিল না। কিন্তু রেফারি দিয়ে দিয়েছেন। আর রেফারি সিদ্ধান্ত দিলে আপনি আর কী করবেন!’

শুরুতে সাদকে জাতীয় দলের আক্রমণভাগে ব্যবহার করেছিলেন জেমি ডে। ভারতের বিপক্ষে আলোচিত গোলটা পান ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেই। পরে তাঁকে নামিয়ে আনা হয় রক্ষণে। মূলত আবাহনীতে রক্ষণে খেলতেন বলেই পরবর্তী সময়ে জাতীয় দলে রাইট ব্যাক হিসেবে ব্যবহার করা। বসুন্ধরা কিংসেও এখন রাইট ব্যাকে খেলেন সাদ।

তবে সাদকে আক্রমণ বা মাঝমাঠে ব্যবহারের পরামর্শ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, সাদ রক্ষণের খেলোয়াড় নয়। তাকে ফরোয়ার্ড বা মাঝমাঠে খেলালে ভালো হবে। আমি কথাটা বলব কোচকে। রক্ষণে খেলতে থাকলে সে বারবার এমন ভুল করে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি দিতেই থাকবে। এ নিয়ে তিনবার দিল। কাজেই এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’

তবে সাদ নিজে খেলতে চান রাইট ব্যাক হিসেবে, ‘রাইট ব্যাকে খেলতে আমার ভালো লাগে। এই পজিশনেই আমি খেলতে চাই। ভুল যাতে না হয়, সেই চেষ্টা তো আমি করেই যাব।’