টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে হেক্সা (ষষ্ঠ বিশ্বকাপ) অভিযান শেষ হয়েছে ব্রাজিলের। অথচ অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের অনিন্দ্য সুন্দর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সেলেসাওরা। ওই গোলে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা পেলেকে ছুঁয়ে ফেলেন নেইমার। দুজনের গোলসংখ্যা সমান ৭৭টি।
সেমিফাইনাল থেকে ব্রাজিল যখন নিশ্বাস দূরত্বে, ঠিক তখনই দূরপাল্লার শটে গোল করে সমতা আনেন ব্রুনো পেতকাভিচ। এরপর ক্রোয়াট গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচের বীরত্বে ব্রাজিলের সর্বনাশ।
উত্তরসূরিদের খেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে উপভোগ করছিলেন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা পেলে। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হারে তাঁর মতো কোটি কোটি ব্রাজিল ভক্তের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কষ্ট পেলেও ৮২ বছর বয়সী জীবন্ত কিংবদন্তি দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে গোলসংখ্যায় তাঁকে স্পর্শ করায় নেইমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে নেইমারের উদ্দেশে পেলে লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে বেড়ে উঠতে দেখেছি। তোমার জন্য গলা ফাটিয়েছি। অবশেষে ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে আমার গোলসংখ্যা ছুঁয়ে ফেলায় তোমাকে অভিনন্দন জানাতে পারছি। দুজনই জানি, এটা শুধুই একটা সংখ্যা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করা।’
ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় ব্যথিত পেলে, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিনটি (গতকাল) আমাদের জন্য সুখকর ছিল না। তবে তুমি সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। অনেকে তোমার মতো হতে চায়। ৫০ বছর আগে যে রেকর্ড গড়েছিলাম, একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ এর পিছু তাড়া করতে পারেনি। তুমি করে দেখিয়েছ, প্রিয়।’
লিওনেল মেসি–ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো এটা তাঁরও শেষ বিশ্বকাপ, এমন কথা ঘনিষ্ঠজনদের বেশ কয়েকবার বলেছেন নেইমার। কাল গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিয়েও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিদায় নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবে নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগছেন ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ২০২৬ বিশ্বকাপ দূরের কথা, ব্রাজিলের হয়ে আর খেলবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা দেননি।
পেলে মনে করেন, ব্রাজিলকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে নেইমারের, ‘আমি এখন ৮২ বছরের বুড়ো। তোমাকে শুরু থেকে যেভাবে উৎসাহিত করে এসেছি, এখনো সেভাবেই করছি। এটা তোমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। তার চেয়েও বড় কথা, তোমার অর্জন লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। তারা তোমাকে অনুসরণ করে। যা অসম্ভব মনে হয়, সেটা সম্ভব করার চ্যালেঞ্জ নিতে চায়।’
ফুটবলের নক্ষত্র নেইমারের উদ্দেশে তাঁর বার্তার শেষটা করেছেন এভাবে, ‘(ব্রাজিলের হয়ে) তোমার দায়িত্ব এখনো শেষ হয়নি। আমাদের অনুপ্রাণিত করতে থাকো। তোমার প্রতিটি গোলের আনন্দে শূন্যে ঘুষি মারতেই থাকব।’
এ বার্তার পর নিশ্চিত দোটানায় পড়ে যাবেন নেইমার। তিনি কার কথা শুনবেন—নিজ মনের নাকি পেলের?