ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন তারকা হুলিয়ান আলভারেজ
ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন তারকা হুলিয়ান আলভারেজ

আলভারেজকে কি ভুল কৌশলে খেলাচ্ছেন গার্দিওলা

প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর মধ্যে থেমেছে ঘরের মাঠে তাদের টানা ২৩ ম্যাচে জয়ের ধারাও। চেলসি, লিভারপুল ও টটেনহামের বিপক্ষে হারানো এই ৬ পয়েন্ট মৌসুম শেষে সিটির জন্য বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগে ১ পয়েন্টই যখন শিরোপার পার্থক্য গড়ে দেয়। লিগে শেষ তিন ম্যাচে যেভাবে খেলে সিটি পয়েন্ট হারিয়েছে, তার মধ্যে কিছু মিলও আছে।

এই তিন ম্যাচের প্রতিটিতে বেশ কিছু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছে সিটি এবং শেষ দিকে গিয়ে হজম করেছে গোলও। মাঠের খেলায় অবশ্য তিন ম্যাচেই আধিপত্য ছিল সিটির। ম্যাচগুলো দারুণভাবে জেতার সুযোগও ছিল, কিন্তু সেই কাজ শেষ পর্যন্ত করতে পারেনি সিটি।

সিটির এমন টানা পয়েন্ট হারানোর পর বেশ কিছু প্রশ্নও উঠেছে। বিশেষ করে গার্দিওলা দলকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে পেরেছেন কি না এবং হুলিয়ান আলভারেজকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছেন কি না, সেই আলাপ সামনে এনেছে ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক।

আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা আলভারেজ শেষ ১২ মাস দারুণ খেলেছেন। ভূমিকা রেখেছেন সিটির ট্রেবল জয়েও। তারকাখচিত দলে ভালো খেলেই নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে হয়েছে তাঁকে। গত এক বছরের আলভারেজ গার্দিওলার এতটাই আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন যে চোটের কারণে না থাকা কেভিন ডি ব্রুইনার দায়িত্বও বর্তেছে তাঁর কাঁধে। সামগ্রিকভাবে নিজের দায়িত্বটা ভালোই পালন করেছেন আলভারেজ। কিন্তু বড় ম্যাচগুলোয় সিটির যখন ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন ছিল, তখন তাঁর এই জুয়া খুব একটা কাজে আসেনি

এ মৌসুমে সিটির মাঝমাঠ অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল ছিল। দলের অন্যতম তারকা মিডফিল্ডার ডি ব্রুইনা খেলতে পেরেছেন মাত্র ২০ মিনিট। ইলকাই গুন্দোয়ানের যোগ্য বিকল্পও আনতে পারেনি তারা। জন স্টোনসের ওভারল্যাপ করে মিডফিল্ডে উঠে আসা কার্যকর পাসগুলোও মিস করেছে দলটি। ম্যানুয়াল আকাঞ্জি কাজটা করার চেষ্টা করেছেন বটে। তবে তা স্টোনসের মতো অতটা নিঁখুত ও আত্মবিশ্বাসী ছিল না। ফলে সবচেয়ে বেশি চাপ যার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, তিনি হলেন রদ্রি। বল পায়ে এবং বল ছাড়া অনেক কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে।

গোলের পর হুলিয়ান আলভারেজ

যদি স্টোনস ফিট থাকতেন কিংবা রদ্রির পাশে গুন্দোয়ান থাকতেন, তবে আলভারেজকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হতো না। কিন্তু তারা না থাকায় যে পারফরম্যান্স আলভারেজের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা তিনি দেখাতে পারছেন না। আর্লিং হলান্ডকে সহায়তা করতে আলভারেজকে এখন সামনে এগিয়ে যেতে এবং মাঝের জায়গা ব্যবহার করে খেলতে দেখা যাচ্ছে। মাঠের তাঁর পারফরম্যান্স ছিল অনেকটা দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের মতোই।

তবে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে টটেনহাম ম্যাচে গার্দিওলা আলভারেজকে বাঁ পাশে ব্যবহার করেছেন এবং বের্নার্দো সিলভাকে ব্যবহার করেছেন ডানে। এ মৌসুমে কিন্তু এর আগে উল্টোটাই করে আসছিলেন তিনি। এ পরিবর্তনের ফলে সিটি দুই পাশ দিয়ে খুব কমই হুমকি তৈরি করতে পেরেছে। সিটির লক্ষ্য ছিল মূলত দুই উইং ব্যবহার করে দুজন করে খেলোয়াড় ভেতরে ঢুকবেন। বাঁ প্রান্তে ছিলেন ডান পায়ের দুই খেলোয়াড় ডকু ও আলভারেজ। আর ডান প্রান্তে ছিলেন বাঁ পায়ের দুজন খেলোয়াড় সিলভা ও ফিল ফোডেন।

এটি করার ফলে যা হয়েছে, তা হলো সিটিকে অনেক বেশি অসংগঠিত মনে হয়েছে। পাশাপাশি যে সুযোগগুলো তারা তৈরি করেছে, সেগুলো স্বভাবসুলভ ইতিবাচক পাসিং ফুটবলের বদলে প্রেসিংয়ের কারণে বেশি হয়েছে। এ পরিবর্তনের কারণে আলভারেজ তো বটেই, সিলভাকেও অনেক কম কার্যকর মনে হয়েছে। পাশাপাশি বল রিসিভের সময় ডান প্রান্তে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতেও দেখা গেছে তাঁকে, যা পতুর্গিজ মিডফিল্ডারকে আরও কম বিপজ্জনক করে তুলেছে।

ম্যাচে সিটি দারুণ মুহূর্তগুলো তখনই উপহার দিয়েছে, যখন সিলভা ও আলভারেজ জায়গা পরিবর্তন করে নিজেদের স্বভাবসুলভ পজিশনে খেলেছেন। শেষ মুহূর্তে জায়গা পরিবর্তন করে তেমনই এক আক্রমণ থেকে বল পেয়ে দারুণ একটি শটও নিয়েছিলেন আলভারেজ। শেষ পর্যন্ত বল পোস্টে না লাগলে গোলটাও প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। এ ম্যাচে কখনো কখনো সিলভাকে জায়গা পরিবর্তন করে আলভারেজের জায়গায়ও চলে আসতে দেখা গিয়েছিল। গার্দিওলা হয়তো চেয়েছিলেন, বাঁ প্রান্তে আলভারেজের সঙ্গে জুটি গড়ে এই জোন থেকে হুমকি তৈরি করবেন সিলভা। যদিও সিটিকে সচরাচর এভাবে খেলতে দেখা যায় না।

ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা

এ মৌসুমে কিছু ম্যাচে আলভারেজ অবশ্য দুর্দান্ত ছিলেন। বিশেষ করে ফুলহাম, ওয়েস্ট হাম এবং উলভসের বিপক্ষে। এই ম্যাচগুলোয় হলান্ডের সঙ্গে দারুণভাবে সমন্বয় তৈরি করতে পেরেছিলেন হলান্ড। কিন্তু বড় ম্যাচগুলোয় আলভারেজকে নিয়ে নতুন করে হয়তো ভাবতে হবে গার্দিওলাকে। আলভারেজের মূল গুণ কিন্তু তাঁর প্রেসিং, সেট পিস ও গোলের হুমকি। পজিশনাল ডিসিপ্লিন ও নিখুঁত পাসে তিনি কমই ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু এগুলোর ওপরই গার্দিওলা নির্ভর করেন অনেক বেশি। এ পরিস্থিতিতে সামনের ম্যাচগুলোয় এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে গার্দিওলা বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।