ধর্ষণের অভিযোগে ব্রাজিলের সাবেক ফরোয়ার্ড রবিনিওকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ইতালির আদালত। তিনি এই সাজা ব্রাজিলে খাটবেন কি না, সে বিষয়ে ব্রাজিলের আদালত আজ সিদ্ধান্ত নেবেন।
২০১৭ সালে রবিনিওকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় ইতালির আদালত। ২০২২ সালে এই শাস্তি অনুমোদন করে ব্রাজিল সরকারকে তা কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছিল ইতালি। ব্রাজিলের সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিস (এসটিজে) পর্যালোচনা করে দেখবে এই শাস্তি রবিনিওকে দেওয়া যায় কি না। রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান ও ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক এ ফুটবলার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। গত রোববার ব্রাজিলের নেটওয়ার্ক ‘টিভি রেকর্ড’কে ৪০ বছর বয়সী রবিনিও বলেছেন, ‘আশা করি ব্রাজিলে আমি সেভাবে কথা বলতে পারব, যেটা আমার ওখানে (ইতালি) ছিল না।’
ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে খেলাকালীন ২০১৩ সালে মিলানের এক নৈশ ক্লাবে আলবেনিয়ান এক নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে রবিনিওর বিরুদ্ধে। সেই নারী নিজের ২৩তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে গিয়েছিলেন। আর তাঁকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল যে ছয়জনের বিরুদ্ধে, রবিনিও তাঁদের একজন।
রবিনিও ব্রাজিলে মুক্তভাবেই জীবন যাপন করছেন। ইতালির সর্বোচ্চ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রায় বহাল রেখেছিলেন। এরপর ইতালির কৌঁসুলিরা রবিনিওর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বাইরের কোনো দেশে অপরাধ সংঘটনের পর সেই দেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের নাগরিককে হস্তান্তর করে না ব্রাজিল। ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রবিনিওর শাস্তি যেন ব্রাজিলেই কার্যকর করা হয়। গত রোববার ইতালির বিচারিক ব্যবস্থাকে ‘বর্ণবাদী’ আখ্যা দেন রবিনিও।
টিভি রেকর্ডকে রবিনিও বলেছেন, সেই নারীর সঙ্গে সবকিছু সম্মতির ভিত্তিতেই করেছিলেন, ‘এটা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে। আমি তা কখনো অস্বীকার করিনি। অস্বীকার করতে পারতাম। কারণ, আমার ডিএনএ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমি মিথ্যাবাদী নই। ইতালিতে চার বছর খেলেছি এবং সেখানে বর্ণবাদের ঘটনা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কিছুই না করা লোকজনই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।’
ব্রাজিলের বিচারিক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত রবিনিওর বিরুদ্ধে গেলেও তিনি মুক্ত থাকতে পারেন। কারণ, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ আছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বলেছেন, তিনি আশা করেন রবিনিও ব্রাজিলের মাটিতে সাজার মেয়াদ ‘পূরণ’ করবেন।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা ইতালির অনুরোধ রাখবেন বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
রবিনিও ও দানি আলভেজের ঘটনায় সমালোচনা চলছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বার্সেলোনার নৈশ ক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণের অপরাধে গত ফেব্রুয়ারিতে বার্সেলোনার সাবেক ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক দানি আলভেজকে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেন স্পেনের আদালত। ব্রাজিলের ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ), আলভেজের সাবেক ক্লাব এবং তাঁর সতীর্থরা এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি।
ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে রবিনিও এক ঝরে পড়া তারার নাম। পেলের ক্লাব সান্তোসে শুরুতে এতটাই ঝলক দেখিয়েছিলেন যে পেলের উত্তরসূরিও ভাবা হতো তাঁকে। রোনালদো, রিভালদো ও রোনালদিনিওদের সোনালি প্রজন্মের উত্তরসূরিও ভাবা হতো রবিনিওকে। সান্তোস ছেড়ে ২০০৫ সালে রিয়ালে যোগ দেন রবিনিও। রিয়ালে ও মিলানে লিগ জিতেছেন। ব্রাজিলের জার্সিতে জিতেছেন কোপা আমেরিকা ও কনফেডারেশন কাপ।
কিন্তু রবিনিও নিজের প্রতিভার সুবিচার করতে পারেননি। ২০০৯ সালে এক তরুণীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ইংল্যান্ডে আটক হয়েছিলেন। পরে অবশ্য তদন্তে ছাড়া পান। রবিনিও ২০২০ সালে সান্তোসে ফিরলেও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি। ধর্ষণের অভিযোগ থাকায় ভক্ত, স্পনসর এবং সংবাদমাধ্যমের চাপে সান্তোস তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।