দারুণ একটা অভিজ্ঞতাই হলো তপু বর্মণের। এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে শারজা এফসির বিপক্ষে প্রাথমিক রাউন্ডের ম্যাচটি বসুন্ধরা কিংস হেরে গেলেও এমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই থেকে ইতিবাচক অনেক কিছুই খুঁজে নিয়েছেন বসুন্ধরার ফুটবলাররা। তপু যেমন বললেন, ‘এ ম্যাচে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটি অমূল্য। আমার ফুটবলজীবনের বড় ঘটনা। এত উঁচু মানের দল, এত উঁচু মানের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলে অনেক কিছু শিখেছি। সেটি ভবিষ্যতে আমাদের খুব কাজে আসবে।’
মঙ্গলবার কিংস–শারজা ম্যাচ নিয়ে কিছুটা শঙ্কাই ছিল ফুটবলপ্রেমীদের মনে। সেটি শারজা দলের শক্তি বিচার করেই। কিন্তু মাঠে কিংস শারজার মতো দলের বিপক্ষে লড়াইটা খারাপ করেনি। ম্যাচটি তারা হেরেছে ২–০ গোলে। নিজেরাও গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করেছিল অস্কার ব্রুজোনোর দল। তুলনামূলক সহজ গোলের সুযোগই নষ্ট করেছেন দলের দুই ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন গোমেজ আর মিগেল ফেরেইরা। তাঁরা গোল করতে পারলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হলেও হতে পারত, যে দলে বার্সেলোনার সাবেক দুই ফুটবলার মিরালেম পিয়ানিচ ও পাকো আলকাসার খেলেছেন। এ দুজনের বাইরেও বিশ্বমানের বিদেশি ফুটবলাররা খেলেছেন, তাঁদের বিপক্ষে ২–০ গোলে হারটাও খুব খারাপ নয়।
তপু বর্মণ রক্ষণের খেলোয়াড় বলেই পিয়ানিচ আর আলকাসার মাঠের টক্করটা তাঁর বেশি হয়েছে, ‘দুজনই আক্রমণের খেলোয়াড়। একজনের জার্সি নম্বর ১০, আরেকজনের ৯। তাই তাদের ঠেকানোর দায়িত্বটা বেশি ছিল, আমরা যারা রক্ষণে খেলেছি, তাদের ওপর। পিয়ানিচের কথাই বলি, কতটা উঁচু মানের খেলোয়াড়, সেই ঝলক সে দেখিয়েছে প্রথম গোলের সময়। ভিড়ের মধ্য থেকে সে কীভাবে বেরিয়ে গিয়ে বলটা কাটব্যাক করল, বুঝতেই পারিনি।’
পিয়ানিচ আলকাসারের বাইরে শারজার বাকি বিদেশি খেলোয়াড়দেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন তপু। অন্য বিদেশিরাও তাঁর চোখে বিশ্বমানের, ‘আমাদের নজরটা হয়তো পিয়ানিচ, আলকাসারের ওপর ছিল, তবে অন্যদের নিয়েও সতর্ক ছিলাম। বাকিরাও বিশ্বমানের খেলোয়াড়। গোল দুটিই তো করল ব্রাজিলিয়ান লুয়ানজিনিও। সুযোগের সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে হয়, লুয়ানিজিনিওর মতো খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেটি শেখা যায়। কাইও নামের আরেক ব্রাজিলিয়ানের খেলাও ভালো লাগল। গিনির একজন খেলোয়াড় খেলেছে, কামারা নামের, সেও বিশ্বমানের। মোটকথা, এমন সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলাটাও রোমাঞ্চকর।’
ম্যাচের পর মাঠে দাঁড়িয়েই বসনিয়ান তারকা পিয়ানিচের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে তপুর। সেটা মনে করে কিংস ডিফেন্ডার বলছিলেন, ‘পিয়ানিচকে বলেছি, “তোমার খেলা দেখেছি বার্সেলোনা, জুভেন্টাসের জার্সিতে। ভালো লাগে।” পিয়ানিচ ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছে। বলেছে, “তোমরা আজ খুব ভালো খেলেছ। ডিফেন্স খুব আঁটসাঁট রেখে খেলেছ। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা অন্য রকম হতো হয়তো।’”
আলকাসারও একই কথা বলেছেন বলে জানালেন তপু, ‘আলকাসারও আমাদের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছে। আমাদের রক্ষণভাগের প্রতিরোধের কথা আলাদাভাবে বলেছে।’
এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতাটাও তপুকে রোমাঞ্চিত করছে, ‘এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ক্লাব খেলল। আমরা তো এই পর্যায়ে খেলার তেমন সুযোগ পাই না। শারজার বিপক্ষে জিতলে পরের রাউন্ডে যেতাম। সেটি হয়নি। কিছুটা খারাপ লাগছে, মিশনটা আরও দীর্ঘ হলো না। তবে একটি ম্যাচ খেলেই আমরা অনেক কিছু শিখেছি। বুঝতে পেরেছি, কোন কোন জায়গায় বেশি করে কাজ করতে হবে।’
শারজা এফসির বিপক্ষে জয় হয়তো পায়নি কিংস। কিন্তু এ ম্যাচে পিয়ানিচ–আলকাসারদের সঙ্গে খেলার সুযোগটা তপু–বিশ্বনাথ–সাদদের জন্য অমূল্য এক স্মৃতি। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আরও বেশি করে হতে চান তাঁরা।