গোললাইন থেকে

মেসির কারণে আর্জেন্টিনাকেই এগিয়ে রাখছি

সেমিফাইনালে থেমেছে মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা। ফাইনালে উঠেছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সই। তবে আরেকটি ইতিহাস তৈরি করতে না পারলেও মরক্কো মন জিতেছে আমার।

পরশু ২–০ গোলে হেরেছে মরক্কো। ফ্রান্সের মতো দলের কাছে মরক্কোর এই হার স্বাভাবিক। তবে উত্তর আফ্রিকার দলটির খেলায় গভীরতা দেখে ভালো লেগেছে। খুব দ্রুত ওরা উঠছিল বল নিয়ে, বল ছাড়া ওদের ছায়া দৌড়গুলো অসাধারণ লেগেছে।

সবচেয়ে বড় কথা, শেষ মিনিট পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াই করেছে মরক্কো। বল দখলের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ, ম্যান ও জোনাল মার্কিংসহ সবই সুন্দরভাবে করেছে ওয়ালিগ রেগরাগুইয়ের ছেলেরা। মনে হচ্ছিল, যেকোনো সময় তারা ম্যাচে ফিরে আসতে পারে সবুজ–মেরুন জার্সিধারীরা। তা না পারলেও ফ্রান্সের মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছে প্রায় সারাক্ষণই।

ফ্রান্সকে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতেই দেয়নি মরক্কো। পাসের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। বল দখলে মরক্কোর খেলোয়াড়েরা জিতেছে বেশি, একজনকে সহায়তা করতে আরেকজন এসে গেছে দ্রুত। বাতাসে ভাসা বলে ফ্রান্সের খেলোয়াড়েরা জিততে হিমশিম খেয়েছে।

কিলিয়ান এমবাপ্পেকে প্রায় বোতলবন্দী করে রাখে মরক্কোর ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। ম্যাচের শেষক্ষণে এমবাপ্পে দারুণভাবে দ্বিতীয় গোলটা করানোর আগে একবার একটা দৌড় দিয়েছিল, সেবার তাকে আটকে যেতে হয়েছে। ফরোয়ার্ড অলিভিয়ের জিরুকে মাঠে সেভাবে দেখাই যায়নি। মাঝমাঠে আঁতোয়ান গ্রিজমান ছোট বক্সের আশপাশে খুব বেশি যায়নি। অন্যদিন সে কার্যকর সব পাস দিয়েছে, এদিন সেটা ছিল না। ফ্রান্স দ্বিতীয় গোলটা করার আগে বারে তেমন শট নেই তাদের। ফ্রান্স আসলে নিজেদের খেলাটা খেলতেই পারেনি।

তাহলে ওরা জিতল কীভাবে? আসলে শুরুতেই দেখার মতো এক গোল পেয়ে যাওয়া অনেকটাই এগিয়ে দেয় চ্যাম্পিয়নদের। সেই গোল ধরে রাখতে ফ্রান্সের রক্ষণ দায়িত্ব পালন করেছে ষোলো আনা। আর এটা তো ঠিক, ফ্রান্স শক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে। তা ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনায় মরক্কোর খেলায় অনেক সময়ই ছন্দের অভাব ফুটে ওঠে। গোল শোধে ওরা তাড়াহুড়া করেছে। কিছু ভুল পাসও হয়েছে মরক্কোর। পোস্টে নিতে পারেনি নিখুঁত শট। এই জায়গায় ফ্রান্সের রক্ষণের প্রশংসা করতেই হবে। খুবই সতর্ক ছিল ওরা। গোলকিপার উগো লরিস যখনই বল ধরেছে, খেলার গতি একটু কমে গেছে। দিদিয়ের দেশম তাঁর খেলোয়াড়দের মেধা ও সামর্থ্য দিয়ে প্রতিপক্ষের ট্যাকটিকস অকেজো করতে নিজের কৌশল সাজান। শেষ পর্যন্ত তা কাজেও এসেছে।

যে কারণে বিশ্বকাপে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা প্রত্যাশিত ফাইনালই হচ্ছে। ফাইনালে ভিন্ন স্বাদের ফুটবল দেখা যাবে, আমার বিশ্বাস। সেমিফাইনালে মরক্কোর রানিং, কড়া চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি থামাতে একরকম কৌশল নিয়েছেন দেশম। ফাইনালে তাঁর কৌশল নিশ্চিতভাবে ভিন্ন হবে।

মরক্কোর মতো খেলবে না আর্জেন্টিনা, লাতিন দলটি ‘ফুটবল’ খেলবে। আর আর্জেন্টিনার ‘ফুটবল’ খেলা মানে ওদের আটকানো কঠিন। মেসিকে অকার্যকর করতে দেশম নিশ্চয়ই নানা ছক কষছেন। লিওনেল স্কালোনিও এমবাপ্পেকে আটকানোর উপায় খুঁজছেন। চারদিকে আলোচনা চলছে, কে জিতবে ফাইনালে? মেসির কারণে আমি আর্জেন্টিনাকেই এগিয়ে রাখছি।