এই মুহূর্তে আর্সেনালের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় নিকোলাস পেপে
এই মুহূর্তে আর্সেনালের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় নিকোলাস পেপে

ক্লাবের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিচ্ছে আর্সেনাল

প্রায় পুরো মৌসুম দাপটের সঙ্গে খেলে ১৯ বছর পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের আশা জাগিয়েছিল আর্সেনাল। সব মিলিয়ে ২৪৮ দিন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল দলটি। সেই আর্সেনালই কিনা লিগের শেষ ভাগে এসে গুবলেট পাকিয়ে ফেলল। গত এপ্রিল থেকে অবিশ্বাস্য ছন্দপতনে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে শীর্ষ স্থান খুইয়েছিল আর্সেনাল। পরে তো ৩ ম্যাচ বাকি রেখে শিরোপাই জিতে নিয়েছে সিটি।

তবে আগামী মৌসুমে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে এরই মধ্যে দল গোছাতে শুরু করেছে আর্সেনাল। ৬ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে লন্ডনের ক্লাবটি নগর প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি থেকে দলে ভিড়িয়েছে কাই হাভার্টজকে। চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা জার্মান ফরোয়ার্ডকে কিনেই বসে নেই আর্সেনাল। লন্ডনেরই আরেক ক্লাব ওয়েস্ট হাম থেকে ডেকলান রাইস ও নেদারল্যান্ডসের সফলতম ক্লাব আয়াক্স থেকে ইউরিয়েন টিম্বারকে নিয়ে আসা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা।

রাইসকে পেতে হলে ১০ কোটি ৫০ লাখ ও টিম্বারের জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড খরচ করতে হবে আর্সেনালকে। এর অর্থ হলো হাভার্টজ, রাইস ও টিম্বার—এই তিনজনকে আনতেই ২১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড দিতে হচ্ছে গানারদের, যেটা দলবদলের ক্ষেত্রে ক্লাবের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি থেকে পুরোপুরি আলাদা। কারণ, আর্সেন ওয়েঙ্গার দীর্ঘ ২২ বছর আর্সেনালের কোচ থাকাকালে দলবদলের বাজারে কখনোই আদাজল খেয়ে নেমে পড়েননি। ওয়েঙ্গারের নীতি ছিল, কম দামে খেলোয়াড় কিনে কিংবা নিজেদের একাডেমি থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা। তারকা হয়ে ওঠার পর তাঁকে চড়া দামে বেচে দিয়ে সেই টাকায় আরও কয়েকজন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় কেনা।

প্রত্যাশার দাম দিতে পারেননি পেপে

তবে উনাই এমেরি আর্সেনালের কোচ হওয়ার পর দলবদলের ক্ষেত্রে ক্লাবের পুরোনো সংস্কৃতি বদলাতে শুরু করে। বর্তমান কোচ মিকেল আরতেতাও এমেরির পথে হাঁটছেন। সেটারই জলজ্যান্ত উদাহরণ হাভার্টজ, রাইস ও টিম্বারের পেছনে এত টাকা ব্যয়। ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে রাইসকে আনলে তিনিই হবেন আর্সেনাল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ফুটবলার। আর সেটা করতে গেলে বর্তমানে নিজেদের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে বিক্রি করে দিতে হবে।

এ মুহূর্তে আর্সেনালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড় নিকোলাস পেপে। ২০১৯ সালে তাঁকে ৭ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডে নিয়ে এসেছিল গানাররা। কিন্তু এত টাকার প্রতিদান সেভাবে দিতে পারেননি আইভরি কোস্টের এই উইঙ্গার। ক্লাবটির হয়ে ১১২ ম্যাচে করেছেন মাত্র ২৭ গোল। গত মৌসুমে তাঁকে ফরাসি ক্লাব নিসে ধারে পাঠানো হয়েছিল। মৌসুম শেষে আবারও ফিরেছেন আর্সেনালে।

তবে স্কাই স্পোর্টস জানিয়েছে, পেপেকে আর রেখে দেওয়ার ইচ্ছা নেই আর্সেনালের। এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইছে আরতেতার দল। লন্ডনের ক্লাবটির সঙ্গে পেপের চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে আগামী বছরের জুনে। এরপর হয়ে যাবেন মুক্ত খেলোয়াড় (ফ্রি এজেন্ট)। তখন পেপের দলবদল থেকে কোনো টাকা পাবে না আর্সেনাল। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে ছেড়ে দিতে চায়।

শুধু তাই নয়, হাভার্টজ, রাইস, টিম্বারের পর আরও খেলোয়াড় কিনতে চায় আর্সেনাল। দলটির ‘শপিং লিস্টে’ আছেন ‘তুরস্কের মেসি’খ্যাত আর্দা গুলের। তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার গুলেরকে পেতে উঠেপড়ে লেগেছে বার্সেলোনাও। তিনজনকে কিনতেই আর্সেনালকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতে হয়েছে। বার্সাকে টপকে গুলেরকে আনতে আরও খরচ হবে তাদের। দলবদলের খরচে ভারসাম্য আনতে তাই পেপেসহ আরও পাঁচ খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে চায় আর্সেনাল। তাঁরা হলেন ফোলারিন বালোগান, আলবার্ট সাম্বি–লোকোঙ্গা, নুনো তাভারেস, সেদরিক সোয়ারেস ও মার্কিনিওস।

পেপের মতো বালোগানকেও গত মৌসুমে ফ্রান্সে ধারে পাঠিয়েছিল আর্সেনাল। ক্লাবটির একাডেমি থেকে উঠে আসা যুক্তরাষ্ট্রের এই স্ট্রাইকার ধারে খেলতে গিয়েছিলেন রেসে। সেখানে বেশ সাফল্যও পেয়েছেন। ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আ’ মৌসুমে করেছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ ২১ গোল। এ কারণে তাঁকে একেবারে নিজেদের করে নিতে চাইছে রেস। স্কাই স্পোর্টস জানিয়েছে, বালোগানকে কিনতে আর্সেনালকে ৫ কোটি পাউন্ডের প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে ফরাসি ক্লাবটি।

ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার মার্কিনিওসকেও গত মৌসুমে ধারে পাঠানো হয়েছিল। তিনি খেলেছেন ইংলিশ ক্লাব নরউইচ সিটির হয়ে। এবারের দলবদলে বিক্রি করতে দিতে না পারলে মার্কিনিওসের সঙ্গে সাম্বি-লোকোঙ্গা, তাভারেস ও সোয়ারেসকেও ধারে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে আর্সেনাল।