এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও সেনেগাল। কিন্তু ‘প্রথম’ মোকাবিলাটা বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে হওয়ায় সেটি দুই দলের জন্যই স্মরণীয় হয়ে রইল। ইংল্যান্ড এই ম্যাচটিকে মনে রাখবে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল-যাত্রার মঞ্চ হিসেবে, সেনেগালের কাছে এটি হয়ে থাকবে দীর্ঘ দিন তাড়িয়ে বেড়ানো এক দুঃসহ স্মৃতি হিসেবেই। দারুণ একটা লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও যে তারা কুড়ি বছর আগের শেষ আটের স্বপ্নযাত্রার পুনরাবৃত্তিটা করে দেখাতে পারেনি। আল বায়ত স্টেডিয়ামে অনেকটা হেসে খেলেই সেনেগালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে হ্যারি কেইনের ইংল্যান্ড। শেষ আটে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
অনেকটা চাপহীন ফুটবলই আজ খেলতে পেরেছে ইংল্যান্ড। ম্যাচের শুরুর দিকে সেনেগাল ভালো একটা লড়াইয়ের ইঙ্গিতই দিয়েছিল। গোলের সুযোগও তৈরি করেছিল দুই-একটি। এর মধ্যে ২৩ মিনিটে তো আফ্রিকান দলটি এগিয়েই যেতে পারত। কিন্তু প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার খেসারত তারা দিয়েছে। ৩৮ মিনিটে অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতেই গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন জর্ডান হেন্ডারসন। দ্বিতীয় গোলটি আসে ইংল্যান্ডের চমৎকার এক প্রতি আক্রমণ থেকে—হ্যারি কেইনের পা থেকে। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ইংলিশরা ম্যাচের ৫৭ মিনিটে জয় নিশ্চিত করে বুকোয়ো সাকার গোলে।
জুড বেলিংহাম থেকে ফিল ফোডেন-প্রথম রাউন্ডে ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করেছেন ছয়জন। সেই ছয়জনে নাম ছিল না হেন্ডারসন ও হ্যারি কেইনের। হেন্ডারসনকে নিয়ে ইংল্যান্ডের গোলদাতার সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল সাত। কেইনের অপেক্ষাও ফুরাল ১০ মিনিট পর। তিনি ইংল্যান্ডের অষ্টম।
দারুণ এক দলীয় প্রচেষ্টার অংশ হেন্ডারসনের গোল। নিজেদের অর্ধে নেমে যাওয়া কেইন মাপা এক পাস বাড়ান বেলিংহামকে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সেনেগালের বক্সে ঢুকে তরুণ মিডফিল্ডার পাস দিলেন আগুয়ান হেন্ডারসনকে। সেই পাস থেকে গোল করে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ গোলদাতা হয়ে গেলেন লিভারপুল তারকা। ৩২ বছর ১৭০ দিন বয়সী হেন্ডারসনের চেয়ে বেশি বয়সে গোল পেয়েছেন শুধু টম ফিনি, ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ৩৬ বছর ৬৪ দিন বয়সে। আর হেন্ডারসনের এই গোল ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে গোলে সহায়তার রেকর্ড উপহার দিয়েছে বেলিংহামকে (১৯ বছর ১৫৮ দিন)।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোল পান কেইন। দারুণ এক প্রতি আক্রমণ থেকে বেলিংহামের পা ঘুরে বল গেল ফোডেনের কাছে। ডান প্রান্ত থেকে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাওয়া কেইনের কাছে বলটা পাঠালেন ফোডেন। সেনেগাল গোলরক্ষক এদুয়ার্দ মেন্দিকে ফাঁকি দিতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি ইংল্যান্ড অধিনায়কের।
২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করা ইংল্যান্ড তৃতীয় গোলটি পায় ৫৭ মিনিটে। এবারও গোলের উৎস ফোডেন। বাঁ প্রান্ত ধরে এগিয়ে যাওয়া ফোডেনের শট সেনেগালের পোস্টের সামনে খুঁজে নেয় বুকায়ো সাকাকে। মেন্দিকে দর্শক বানিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোলটি পেয়ে যান আর্সেনাল ফরোয়ার্ড।
এর আগে প্রথম গোলের আগে অবশ্য ইংলিশদের চাপেই রেখেছিল সেনেগালিজরা। ২৩ ও ৩২ মিনিটে তো গোল করার ভালো সুযোগও পেয়েছিল দলটি। হ্যারি ম্যাগুয়ারের ভুলে প্রথম সুযোগটি পায় সাদিও মানেকে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলা সেনেগাল। ক্রেপিন দিয়াত্তা বল কেড়ে ক্রস বাড়ান পেনাল্টি বক্সে। বুলায়ে দিয়ার ঠিকঠাক পা চালাতে না পারলেও বল পেয়ে যান ইসমাইলিয়া সার। ছয় গজ দূর থেকে সেনেগাল স্ট্রাইকার বার উঁচিয়ে বাইরে মারলেন।
৩২ মিনিটে সেনেগালের পাওয়া দ্বিতীয় সুযোগটি ব্যর্থ করেছেন ইংল্যান্ড গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। ইংল্যান্ডের পোস্টের ডান দিক বরাবর নেওয়া দিয়ার শট বাঁ হাত বাড়িয়ে ফিরিয়ে দেন পিকফোর্ড।
৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও সেনেগালের রক্ষণে আক্রমণে গেছে ইংল্যান্ড। তাদের আক্রমণের ধারে মনে হচ্ছিল ইংলিশরা হয়তো ব্যবধার আরও বাড়াবে। সুযোগও এসেছিল। কিন্তু সেগুলো থেকে ব্যবধান বাড়েনি। বাকিটা সময় ব্যবধানটা ধরে রেখে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা থেকে দূরত্বটা আরেক ধাপ কমিয়েছে ইংল্যান্ড।