গোললাইন থেকে

আলভারেজ দেখাল আর্জেন্টিনার নতুন প্রজন্ম তৈরি

আর্জেন্টিনার জয় নিয়ে সংশয় ছিল কমই। তবে প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া বলে কিছুটা শঙ্কাও ছিল। যে দলে আছেন লুকা মদরিচের মতো ফুটবলার, তারা সহজে ছাড়বে কেন! কিন্তু মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল দেখে লড়াইয়ের কোনো ঝাঁঝ খুঁজে পেলাম না। কোথায় ক্রোয়েশিয়া, যারা কিনা ব্রাজিলিয়ানদের বাড়ি পাঠিয়েছে! কোথায় লুকা মদরিচ, যাঁর ট্রফিঘরে কিনা ইউরোপের সব ক্লাব ট্রফি!

ক্রোয়েশিয়া খেলেছে আসলে প্রথম ২০–২৫ মিনিট। এই সময় তাদের বল পজিশন ছিল ৫৭ ভাগ। কিন্তু তাতে লাভ হলো কী? আমি আগেই বলেছিলাম, মাঠে ডানে–বাঁয়ে বল চালাচালি করে করে কোনো ফায়দা তোলা যাবে না, যদি না প্রতিপক্ষ রক্ষণে ঝাঁকুনি দেওয়া যায়। এই কাজটাই করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফলে শুরুর দিকে বল বেশি পায়ে রাখাটা তাদের কোনো কাজে আসেনি। সবই গেছে বৃথা।

৩৯ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটার পরই আসলে খেলা শেষ। ক্রোয়েশিয়া তখন হাল ছেড়ে দেয়। মনে হয়েছিল, তারা শেষ বাঁশি শোনার অপেক্ষায়। কারণ, ততক্ষণে মদরিচরা বুঝে গিয়েছিল যে আজ আর হবে না। ফুটবলাররা আসলে বুঝতে পারেন, কখন খেলাটা শেষ হয়ে যায়।

আর্জেন্টিনার প্রথম ও দ্বিতীয় গোলের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৫ মিনিটের। দ্বিতীয় গোলের আগে আরও কিছু সময় পেলে হয়তো ক্রোয়েশিয়া চেষ্টা করে দেখতে পারত। তাতে গোলটা শোধ হলে ম্যাচের গতিপথ পাল্টাতেও পারত। কিন্তু এই রাতে সেটা হয়নি। এই রাত শুধুই আর্জেন্টিনার।

লিও মেসিকে টিভির পর্দায় প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম, তিনি কেমন মেজাজে আছেন। প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করার যে বাসনা আর খিদা, সেটা পরিষ্কারই ছিল এদিন, যাকে বলে ‘কিলিং অ্যাটিচ্যুড’। তৃতীয় গোলটা যেভাবে করালেন তিনি, তাতে বোঝা যায়, মেসি কেন মেসি!  ওভাবে সব ভেঙেচুরে ঢোকা মেসির পক্ষেই সম্ভব। নিজে পোস্টে শট না নিয়ে কাছেই নীল–সাদা জার্সি দেখে চূড়ান্ত পাসটা দিয়ে দিল। আর কী নিখুঁতভাবে! এটাই মেসি। অন্য গ্রহের মেসি।

ডিয়েগো ম্যারাডোনার ছিয়াশির গোলের সঙ্গে অনেকে হয়তো হুলিয়ান আলভারেজের প্রথম গোলের তুলনা করতে পারেন। ম্যারাডোনার গোলটা ছিল পাঁচ–ছয়জনকে কাটিয়ে। আলভারেজেরটা সে রকম নয়। তবে এই তরুণ অনেকটা পথ সোজা দৌড়ে যেভাবে বক্সের ভেতর গেছেন, সেটা এককথায় অনন্য। বল ছাড়া দৌড়ানো আর বল নিয়ে দৌড়ানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। দৌড়ের সময় ভারসাম্য রাখতে হয় শরীরের। সেটা রেখেছে আলভারেজ। তারুণ্যের ঝলকে গোলটা অসম্ভব সুন্দর।

২২ বছরের তরুণ আলভারেজ জোড়া গোল করে আসলে বোঝালেন, আর্জেন্টিনার নতুন প্রজন্ম তৈরি। মার্তিনেজ, থিয়াগো আলমাদাদের মধ্যেও দারুণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সময়মতো বলের কাছে যাওয়া, গতি, বুদ্ধি সবই আছে এই তরুণদের। কোচ লিওনেল স্কালোনি খুব সুন্দরভাবে তরুণদের ব্যবহার করছেন। এ কারণেই সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পরও আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালে।

যোগ্যতার দল হিসেবেই ওরা জিতেছে সেমিফাইনাল। গোটা দলই খেলেছে দারুণ ফুটবল। গোলকিপার ছিলেন নির্ভরযোগ্য। রক্ষণ ভারসাম্য রাখতে পেরেছে। কোনো ফাঁকফোকড় বের হতে দেয়নি। মাঝমাঠ দেখিয়েছে দাপট। আর আক্রমণভাগ তো লাজবাব। মনে হয় না, এই আর্জেন্টিনা কাপ ছাড়া এবার দেশে ফিরবে।