বলের দখল, আক্রমণ, পাস এবং সুযোগ তৈরি সব জায়গাতেই বার্সেলোনার চেয়ে এগিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এমনকি ম্যাচের একমাত্র গোলটিও করেছে তাদের খেলোয়াড়। এরপরও কোপা দেল রের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার কাছে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল। রিয়াল যে এদিন নিজেদের জালেই বল জড়িয়েছে! ম্যাচে অবশ্য গোলের জন্য একের পর এক শট নিলেও কোনো শটই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা।
বিপরীতে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পাওয়া এই জয়ে কোপা দেল রের ফাইনালের পথে এখন এক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সা। আগামী ৫ এপ্রিল রাতে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। এর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপে ফাইনালেও বার্সার কাছে ক্লাসিকোতে ৩-১ গোলে হেরেছিল কার্লো আনচেলত্তির দল।
ঘরের মাঠে প্রতিশোধের ম্যাচে শুরু থেকেই বার্সার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে রিয়াল। ম্যাচের শুরুতে সুযোগও এসেছিল রিয়ালের সামনে। তবে অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় কাজে লাগানো যায়নি সে সুযোগ। মাঝমাঠের দখল রেখে আক্রমণে গিয়ে বার্সাকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করে রিয়াল। মাঝমাঠে এ সময় দারুণ খেলছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
১২ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন করিম বেনজেমা। তবে অফসাইডের কারণে গোল বঞ্চিত থাকতে হয় রিয়ালকে। ম্যাচের প্রথম দিকে সেভাবে বলই পাচ্ছিলেন না বার্সা খেলোয়াড়েরা। বিশেষ করে রবার্ট লেভানডফস্কি এবং পেদ্রির না থাকাটা ভালোই ভুগিয়েছে বার্সাকে।
এর মাঝে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজেনাও ছড়িয়ে পড়ে। হলুদ কার্ডও দেখেন ভিনিসিয়ুস। রিয়াল বড় ধাক্কা খায় ম্যাচের ৩০ মিনিটে। অনেকটা নিজেদের ভুলেই গোল খেয়ে বসে তারা। বার্সার গোলের প্রচেষ্টা থিবো কোর্তোয়া ঠেকিয়ে দিলেও পরে ফিরতি বল এদের মিলিতাওয়ের গায়ে লেগে জালে জড়ালে উল্লাসে মাতে বার্সা। ঘরের মাঠে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠার চেষ্টা করে রিয়াল। তবে রিয়ালের সে চেষ্টায় ছিল না পরিকল্পনার কোনো ছাপ। গোল খেয়ে তারা যেন পথই হারিয়ে ফেলে। মাঝে দু-একবার বেনজেমারা বার্সার রক্ষণে হানা দিলেও গোল পাওয়া হচ্ছিল না তাদের।
৪১ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ এসেছিল রিয়ালের সামনে। কিন্তু টনি ক্রুসের ক্রসে ঠিকঠাক বল পায়ে লাগাতে পারেননি দানি কারভাহাল। পরের কয়েক মিনিটে একাধিকবার আক্রমণে যায় রিয়াল। তবে কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছিল তাদের। রিয়ালের পজেশন নির্ভর খেলায় এ সময় বার্সা কিছুটা চাপে থাকলেও, রক্ষণ-নৈপুণ্যে রিয়ালকে প্রথমার্ধে ঠিকই গোল বঞ্চিত রাখতে সমর্থ হয় বার্সা।
বিরতির পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রিয়াল। শুরুতেই একাধিক আক্রমণ তৈরি করে তারা। তবে প্রয়োজনীয় গোলটিই পাওয়া হচ্ছিল না মাদ্রিদ পরাশক্তিদের। ৪৯ মিনিটে ফের বার্সার দুর্দান্ত ডিফেন্সের কারণে গোল বঞ্চিত থাকতে হয় ভিনিসিয়ুসকে। এ সময় বল বার্সার রক্ষণের আশপাশে থাকলেও নিশ্চিত সুযোগ পাওয়া হচ্ছিল না রিয়ালের। ৫৮ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের দারুণ একটি প্রচেষ্ঠা ঠেকান বার্সা গোলরক্ষক টার স্টেগেন।
এ সময় আক্রমণ তৈরির চেয়ে রিয়ালের আক্রমণগুলো ঠেকানোতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় বার্সাকে। আক্রমণ ঠেকাতে অনেক সময় বার্সার ১০ জন খেলোয়াড়কেই নিচে নেমে আসতে দেখা যায়। ৬৯ মিনিটে অবশ্য প্রতিআক্রমণ থেকে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। কিন্তু রাফিনিয়ার ক্রসে ঠিক সময়ে বলের কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ হন ফেরান তরেস।
৭২ মিনিটে আশ্চর্যজনকভাবে দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি বার্সার। কিয়েসের শট গোল মুখে দাঁড়ানো আনসু ফাতির গায়ে লেগে দিক বদলে অন্য দিকে চলে যায়। ম্যাচে সময় যতই গড়িয়েছে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছে রিয়াল। তবে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত গোলটি পাওয়া হয়নি তাদের। মাঠ ছাড়তে হয়েছে আত্মঘাতী গোলের হার নিয়ে।