ম্যাচের বয়স ঘণ্টার কাঁটা পার হবে, আর বদলি হিসেবে নামবেন আঁতোয়ান গ্রিজমান—চলতি মৌসুমে এমনই নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
এ পর্যন্ত লিগে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে আতলেতিকো। এর মধ্যে দিয়েগো সিমিওনে গ্রিজমানকে কীভাবে কখন ব্যবহার করেছেন, তা একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। হেতাফের বিপক্ষে তাঁকে মাঠে নামানো হয়েছে ৬২ মিনিটে। এ ছাড়া ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ৬২ মিনিট, ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৬৪ মিনিট, সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৬৩ মিনিট আর পোর্তোর বিপক্ষে ৬১ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছেন গ্রিজমান।
বার্সেলোনা থেকে ধারে আনা ফরাসি ফরোয়ার্ডকে ইচ্ছা করেই কম সময় খেলাচ্ছে আতলেতিকো—এমনটাই দাবি বার্সেলোনার। এ দাবির পেছনে যুক্তিও আছে ক্যাম্প ন্যুয়ের ক্লাবটির।
ধারের চুক্তিতে মাঠে গ্রিজমানের খেলার সময় নিয়ে একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিল বার্সেলোনা। নির্দিষ্ট সেই সময়ের চেয়ে তাঁকে বেশি সময় খেলালে বার্সেলোনাকে চার কোটি ইউরো বাড়তি ফি দিতে হবে—শর্তটি ছিল এ রকমই।
আতলেতিকো বাড়তি ফি এড়াতে যত যা–ই করুক, বার্সেলোনা মনে করছে এরই মধ্যে গ্রিজমানকে বেশি সময় খেলানো হয়ে গেছে। তাই আতলেতিকোর কাছে চার কোটি ইউরো পাওনা হয়ে গেছে তাদের। আর সেই অর্থ আদায় করতে আতলেতিকোর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্সা।
কাতালুনিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভোর খবর, আতলেতিকোকে বলেও সমাধান পায়নি বার্সেলোনা। এ কারণেই মামলার পথে হাঁটার চিন্তা করছে ক্যাম্প ন্যুয়ের ক্লাবটি। ৩১ বছর বয়সী গ্রিজমানকে ২০২১ সালের আগস্টে দুই বছরের জন্য ধারে আতলেতিকোয় পাঠায় বার্সা। চুক্তি ছিল আতলেতিকো তাঁকে অর্ধেক বা তার বেশি (মৌসুমের ক্ষেত্রে অর্ধেক ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সময়, ম্যাচের ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট) সময় খেলালে বাড়তি চার কোটি ইউরো বার্সেলোনাকে দেবে।
বার্সেলোনার আইনি বিষয়গুলো যে বিভাগ দেখে, তাদের মতে, ২০২১–২২ মৌসুমেই শর্ত ভঙ্গ করে গ্রিজমানকে বেশি খেলিয়েছে আতলেতিকো। কারণ, খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এমন ৩৭ ম্যাচের ৩০টিতেই গ্রিজমানকে খেলানো হয়েছে। যেখানে ৫০ শতাংশ হলেই শর্ত পূরণ হয়, সেখানে ৮০ শতাংশ সময় খেলানো হয়েছে গ্রিজমানকে।
বার্সেলোনার আইনি বিষয়গুলো দেখা বিভাগের ভাষ্য—প্রথম মৌসুমে শর্ত না মানায় তারা এখন অর্থ পাওয়ার যোগ্য। চলতি মৌসুমে কতক্ষণ খেলানো হচ্ছে, সেটি এখন আর বিবেচ্য নয়।
আতলেতিকো অবশ্য হিসাব করছে দুই মৌসুম মিলিয়ে। তাদের কথা—গ্রিজমানকে প্রথম মৌসুমে একটু বেশি খেলানো হলেও চলতি মৌসুমে খুবই কম খেলানো হচ্ছে। দুই মৌসুম মিলিয়ে ৫০ শতাংশের নিচে থাকবে গ্রিজমানের ‘প্লেয়িং টাইম’।
দুই ক্লাবের মতবিরোধে প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, গ্রিজমানের ‘প্লেয়িং টাইম’ হিসাব করতে কত মৌসুম বিবেচনায় নেওয়া হবে। উভয় পক্ষই মনে করছে তারা সঠিক জায়গায় আছে।
বার্সেলোনা–আতলেতিকোর এই বচসায় সমস্যায় পড়েছেন গ্রিজমান। সামনেই বিশ্বকাপ, দলে জায়গা পেতে হলে বেশি সময় মাঠে থাকা দরকার তাঁর। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পোর্তোর বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে গোল করে দলকে জিতিয়েছেন গ্রিজমান। মাঠে তাঁর আরও বেশি সময় থাকা দরকার কি না, ম্যাচ শেষে এমন প্রশ্নের উত্তরে ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি আরও বেশি সময় খেলতে চাই। কিন্তু এটা তো আমার হাতে নেই।’
আতলেতিকোর কোচ দিয়েগো সিমিওনে গ্রিজমানকে আরও বেশি ‘প্লেয়িং টাইম’ দেওয়া সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটাতে স্পষ্ট হয়েছে এ ক্ষেত্রে তাঁর হাত–পা বাঁধা। ‘আমি ক্লাবের একজন, ক্লাবের স্বার্থ চিন্তা করেই কাজ করি এবং করব’—এই ছিল সিমিওনের উত্তর।