মোরছালিনের এমন উল্লাস বারবার চায় বাংলাদেশ
মোরছালিনের এমন উল্লাস বারবার চায় বাংলাদেশ

কত দূর যাবে এই বাংলাদেশ 

শক্তিশালী লেবাননের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ড্র। সামনে আরও ভালো কিছু করার আশা বাংলাদেশের। 

‘আমি চাই এশিয়ার সেরা ২০ দলের একটি হবে বাংলাদেশ।’ কয়েক বছর আগে কথাটা খুব জোর দিয়ে বলতেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু তাঁর চাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খেলতে পারছিলেন না ফুটবলাররা। যে কারণে কাজী সালাউদ্দিন কথাটা বলা বন্ধ করে দেন। তবে এখন আবার আশাবাদী বাফুফে সভাপতি।

ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে কয়েক বছর পর হলেও এশিয়ার সেরা ২০-এ ওঠা অসম্ভব নয়। পরশু ঘরের মাঠে লেবাননের সঙ্গে ১-১ গোলের দুর্দান্ত ড্রটা সেই স্বপ্নই দেখতে সাহস জোগাতে পারে।

পরবর্তী এশিয়ান কাপ ২০২৭ সালে সৌদি আরবে। তাতে বাংলাদেশের পক্ষে খেলার সুযোগ পাওয়া আপাতত দূর কল্পনাই। চলমান বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনের গ্রুপ থেকে সেরা দুইয়ে থাকতে পারলে সরাসরি এশিয়ান কাপের টিকিট মিলবে। সেটা একরকম অসম্ভবই বলা চলে। কারণ, ২৭ ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে খেলে। সকারুরা প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছে ৭-০ গোলে। ফিলিস্তিনের র‍্যাঙ্কিং ৯৬, লেবানন ১০৪। ১৮৩ র‍্যাঙ্কিংয়ের বাংলাদেশের পক্ষে এই দুই দলকে টপকে গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়া বলতে গেলে অসম্ভবই।

তৃতীয় হওয়ার স্বপ্ন দেখাও বাড়াবাড়ি। পরশু কুয়েতে নিজেদের হোম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ১-০ গোলে হেরে ফিলিস্তিন শক্তির জানান দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে শারজায় তারা গোলশূন্য ড্র করেছে লেবাননের সঙ্গে। 

বাস্তবতা বুঝে গ্রুপে দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়ার উচ্চাভিলাষ দেখাচ্ছে না বাংলাদেশ। তৃতীয় বা চতুর্থ হলেও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত বাংলাদেশের। তাতে ম্যাচ পাওয়া যাবে আরও ছয়টি। গ্রুপে অবস্থান নিয়ে না ভেবে বাংলাদেশ চাইছে সামনের ম্যাচগুলোয় নিজেদের মেলে ধরতে। সেটাই বলছেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার রহমত মিয়া, ‘আমাদের লক্ষ্য সামনে আরও ভালো খেলা। অ্যাওয়ে ম্যাচে যতটা সম্ভব লড়াই করা আর হোম ম্যাচে পয়েন্ট পাওয়া।’

লেবাননের সঙ্গে ড্র করার পর উল্লাস

ঘরের মাঠে লেবাননের কাছ থেকে পয়েন্ট নেওয়ার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ পরের ম্যাচও ঘরের মাঠেই। প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন। আরও চার মাস বাকি।

ফুটবলাররা এখন চলে যাচ্ছেন ক্লাব তাঁবুতে। আর বাংলাদেশের ক্লাব ব্যবস্থাপনার গলদে অনেক ফুটবলারই ফিটনেস ও পারফরম্যান্স হারিয়ে ফেলেন। লেবানন ম্যাচে দারুণ খেলা ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম অবশ্য আশাবাদী ফুটবলাররা আরও শক্তিশালীভাবে ফিরবেন মার্চে, ‘এই বিরতিতে কোনো সমস্যা হবে না ফুটবলারদের। সবাই খেলার মধ্যেই থাকবে। পারফরম্যান্স আর ফিটনেস হারালেই বাদ, পেশাদার ফুটবলাররা তা ভালোই জানে। তাই পরের ম্যাচে আরও ভালোভাবে ফিরবে আশা করি।’

গত কয়েক মাসে বিরতি শেষে সেটা দেখাও গেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে এ পর্যন্ত খেলা ১০ ম্যাচে ৩ জয়, ৪ ড্র বাংলাদেশের। মাত্র ৩টি হার। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে হতাশা থাকতে পারে। তবে লেবাননের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ড্র আত্মবিশ্বাসী করছে বাংলাদেশকে।

মালদ্বীপের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডে মালেতে ৮৭ মিনিটে গোল খেয়ে যোগ করা সময়ে সমতা আনে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। মালদ্বীপ ও ভুটানের সঙ্গে সাফে পিছিয়ে পড়ে আসে বড় জয়। বাংলাদেশ এখন গোল খেয়ে ফিরতে পারছে ম্যাচে। 

ফুটবলারদের লড়াকু মানসিকতাকে সম্মান জানাচ্ছেন ২০১১ সালে ঢাকায় লেবাননকে ২-০ গোলে হারানো ম্যাচের অন্যতম গোলদাতা জাহিদ হাসান এমিলি। কিংস অ্যারেনায় পরশু বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে মুগ্ধ সাবেক স্ট্রাইকার বলছিলেন, ‘এই দলটা গত বেশ কয়েকটি ম্যাচে গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরেছে। গত কিছুদিনে নতুন বাংলাদেশ দলে এটা বড় পরিবর্তন। বদল এসেছে মানসিকতায়ও।’

মোরছালিনের গোল মুগ্ধ করেছে সবাইকে

গোলকিপার আনিসুর রহমান, ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, রাকিব হোসেন, সাদ উদ্দিনদের মতো একাদশের চেনা মুখ ছিলেন না লেবানন ম্যাচে। তাঁদের বিকল্প তৈরি হচ্ছে। শেখ মোরছালিনের মতো গোলের রাস্তা চেনা তরুণ এসেছে। লেবানন ম্যাচে যাঁর গোল মুগ্ধ করেছে সবাইকে। তরুণদের নিয়ে বাংলাদেশকে অনেকটা বদলে দিয়েছেন কাবরেরা। এটাই আশা দেখাচ্ছে আগামীর।