নতুন মৌসুমে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসাতে পারবে লিভারপুল?
নতুন মৌসুমে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসাতে পারবে লিভারপুল?

লিভারপুল কি এবার সেরা চারে থাকবে, কী বলছেন বোদ্ধারা

মাত্র চার বছর আগেও লিভারপুল ছিল ইউরোপীয় ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন। তিন বছর আগে হাতে তুলেছিল প্রিমিয়ার লিগ ট্রফিও। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল এখন উল্টোপথে। গত মৌসুমে লিগের সেরা চারে না থাকায় এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা হবে না লিভারপুলের। নেই ২০২৩–২৪ প্রিমিয়ার লিগের ফেবারিটের তালিকায়ও।

অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের পাশাপাশি ক্লাব ছেড়ে গেছেন ফাবিনিও, জেমস মিলনার আর রবার্তা ফিরমিনোরা। নতুন যুক্ত হয়েছেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, ডমিনিক সোবোসলাইরা। চলে যাওয়াদের না থাকা কতটা ভোগাবে আর নতুন আসারা কতটা অবদান রাখতে পারবেন, তার ওপর নির্ভর করছে লিভারপুলের এবারের মৌসুমের পারফরম্যান্স।

প্রিমিয়ার লিগের ২০২৩–২৪ মৌসুমের সম্ভাব্য সেরা চার দল নিয়ে নানা মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ফুটবল বিশ্লেষকেরা। সাবেক ফুটবলার ও ধারাভাষ্যকারদের এই ভবিষ্যদ্বাণীতে উঠে এসেছে লিভারপুল নিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণ।

আমি এই মুহূর্তে লিভারপুলের দিকে নজর রাখছি না। মনে হয় না তারা লিগ লড়াইয়ে সিটি বা আর্সেনালকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাচ্ছে। আমার দৃষ্টি ইউনাইটেডের দিকেও নেই। ইউনাইটেড, লিভারপুল আর চেলসি যদি সামনের কয়েক সপ্তাহের দলবদলে অলৌকিক কিছু না করে, তাহলে আর্সেনালই একমাত্র দল, যারা সিটির কাছাকাছি যেতে পারার মতো; অন্তত এই মুহূর্তে এমনটাই মনে হচ্ছে।
গ্যারি নেভিল, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ও ধারাভাষ্যকার

জেমি ক্যারাঘার, সাবেক লিভারপুল ডিফেন্ডার ও ফুটবল বিশ্লেষক

আমার মনে হয় লিভারপুল সেরা চারে থাকবে। তারা শুরুতেই অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে ভিড়িয়েছে। গত মৌসুমটা তাদের ভয়ংকর কেটেছিল। অথচ এর মধ্যেও দুই–তিন ম্যাচ বাকি থাকা অবস্থায় দলটি সেরা চারের লড়াইয়ে ছিল। যেটা আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি, বিশেষ করে মৌসুমের মাঝপথে খুব বাজে খেলার কারণে।

এখন দেখার বিষয়, তারা যে মানের দল, সেখানে ফিরতে পারে কি না। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে যেখানে ছিল, সেখানে পৌঁছানোও কঠিন হবে। এরপর আরও ২৫–৩০ পয়েন্ট যোগ করতে হবে আগের জায়গায় ফেরার জন্য। লিভারপুল এবার এত বড় লাফ দিতে পারবে কি না, আমি নিশ্চিত নই।

তবে আমি অবশ্যই মনে করি, তারা ম্যানচেস্টার সিটিকে তাড়া করে সেরাদের লড়াইয়ে থাকতে পারে। আমার মনে হয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবার উন্নতি করবে। আবার এটাও মনে করি, ইয়ুর্গেন ক্লপ গত মৌসুমে তাঁর দল যতটা খারাপ অবস্থায় ছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে উদ্যমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজ করবেন।আমার মনে হয়, এবারের মৌসুমটা জুনের প্রথম দিকে শুরু হলে ক্লপের ভালো লাগত।

আমি লিভারপুলে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে দেখার অপেক্ষায় আছি। তবে জর্ডান হেন্ডারসনকে হারিয়ে ফেলাটা একটা ধাক্কা। আমার কাছে এখনো হেন্ডারসনই টিমলিস্টের ১ নম্বর নাম। লিভারপুলকে এখন তার শারীরিক উপস্থিতি, মাঝমাঠের গতিশীলতা, চাপ তৈরি করার সক্ষমতা আর ঝুঁকি টের পাওয়ার মতো বিষয়গুলো খুঁজে পেতে হবে। আমি আশা করছি, দলবদল বাজার শেষ হওয়ার আগে লিভারপুল আরও কিছু কেনাকাটা করবে। আর এবারের দলটি সেরা চারে ফিরবে বলেও মনে করি। কারণ, আক্রমণভাগে প্রতিভাবান ফুটবলারের সংযোজন আছে। লুইজ ডিয়াজকে ফিট হিসেবে ফিরে পাওয়াটা নতুন খেলোয়াড় পাওয়ার মতোই। রক্ষণভাগে তাদের আরও দৃঢ় হতে হবে।
ড্যানি মারফি, সাবেক লিভারপুল মিডফিল্ডার

ক্রিস সাটন, সাবেক চেলসি স্ট্রাইকার

গোল করাটা সমস্যা হবে না। কিন্তু রক্ষণভাগে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে, যেটা গত মৌসুমেও ভুগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূল পরিবর্তন দেখার আছে ভার্জিল ফন ডাইকে। সে কি তার পুরোনো ফর্মে ফিরতে পারবে? ২০২০ সালের অক্টোবরে পাওয়া হাঁটুর চোট থেকে সে পুরোপুরি সেরে উঠেছে কি না, আমি নিশ্চিত নই।

মার্টিন কিওন, সাবেক আর্সেনাল ডিফেন্ডার ও ফুটবল বিশ্লেষক

লিভারপুল হেরে গেলে খেলোয়াড়েরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এটা দেখার বিষয়। জেমস মিলনার, হেন্ডারসনরা ড্রেসিংরুমে থাকতে ওদের যে প্রভাব ছিল, সেটাকে আপনি ছোট করে দেখতে পারেন না। এরা ছিল ক্লপের প্রথমদিকের সুবিবেচিত কেনাকাটার মূল প্রভাবক। এমন দুজনকে দলবদল বাজারে হারিয়ে ফেলাটা লিভারপুলের জন্য চিন্তিত হওয়ার মতো।

লিভারপুলের মাঝমাঠের চেহারা পাল্টে গেছে। তারা এখন সিটি আর আর্সেনালের অনুকরণে মাঝমাঠের শূন্যতা পূরণে একজন ফুল ব্যাকের ব্যবহার করবে। এটা হয়তো কাজে লাগতে পারে। তবে পুরোনো লিভারপুলকেই পছন্দ আমার। বিরামহীন সামনের দিকে প্রেস করে যাওয়া, সৃষ্টিশীল ফুল ব্যাকের উপস্থিতি... এসব। যে বিষয়টা ওদের ওপরের দিকে তুলে নিয়েছে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসায় আমি নার্ভাস।
মাইকেল ওয়েন, সাবেক লিভারপুল স্ট্রাইকার

আমার মনে হয় লিভারপুলকে টপকে চেলসিই সেরা চারে ঢুকে যাবে। তবে লিভারপুল এবার ভালোভাবে দল সাজিয়েছে। হ্যাঁ, তারা কয়েকজনকে হারিয়ে ফেলেছ। তবে দলটির শক্তি হচ্ছে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যেতে থাকে।

রবি স্যাভাজ, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার

সিটিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দল শুধু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর আর্সেনাল। এই তিন দলের পর চতুর্থ হতে পারে লিভারপুল
রিও ফার্ডিনান্ড, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার

ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসি সেরা চারে থাকবে। আর্সেনালকে এবার দ্বিতীয় নয়, শিরোপার জন্যই খেলতে হবে। সেরা চারে আমি লিভারপুল, টটেনহাম বা নিউক্যাসলকে দেখছি না।

দিমিতর বেরবাতভ, সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্ট্রাইকার

মন্তব্য সূত্র: বিবিসি, দ্য ওভারল্যাপ, ফোরফোরটু, টিমটক, টিএনটি স্পোর্টস, বেটফেয়ার ও টুইটার