ইউরো থেকে বিদায়ের পর হতাশ জশুয়া কিমিখ
ইউরো থেকে বিদায়ের পর হতাশ জশুয়া কিমিখ

স্বপ্ন ভাঙার পর নিস্তব্ধ জার্মানি

খেলাটি ছিল নাটকের মতো। ফুটবল–পাগল জার্মানরা খেলাটি নিয়ে মেতেছিল দেশজুড়ে। হঠাৎ করেই সর্বত্র নিস্তব্ধতা নেমে এল। ১২০ মিনিট লড়াই করেও জার্মানির ফুটবল–ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো না। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বদেশের মাটিতে জার্মানির শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে দিল স্পেন, সঙ্গে ছিল রেফারির দ্বিচারিতাও।

গতকাল ম্যাচ শেষ হওয়ার পর রাতেই জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ‘জার্মান ফুটবল দলটির পুরো দেশকে তাদের পেছনে সমবেত করেছে। এই পরাজয়ে আমরা ব্যথিত হলেও, জার্মান ফুটবল দল মাথা উঁচু করে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে।’

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি স্টুটগার্ট শহরের এমএইচপি অ্যারেনায় হলেও গতকাল জার্মানিজুড়ে বসেছিল ফুটবলের হাট। কেউ জার্মান ফুটবল দলের জার্সি, কেউ পতাকা নিয়ে অনেকেই মুখে কালো–লাল–হলুদ জার্মানির পতাকা আঁকিয়ে খেলা দেখতে এসেছিল। সব বড় শহরের ফুটবল ফ্যান চত্বর খেলা শুরুর অনেক আগেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দৃশ্য ছিল উত্তরের হামবুর্গ থেকে শুরু করে, হ্যানোভার কোলন, ডুসেলডর্ফ ফ্রাঙ্কফুর্ট, স্টুটগার্ট, মিউনিখ ও রাজধানী বার্লিনে।

স্পেনকে টপকাতে পারেনি জার্মানি

গতকাল জার্মানিতে আবহাওয়া রৌদ্র আর মেঘের লুকোচুরি। এই চমৎকার ফুটবলময় আবহাওয়ায় খেলা দেখছিলাম হ্যানোভার শহরের ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। অনেক আগে হাজির হয়েও দেখেছি তিল ধারণের জায়গা নেই। খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই হাজার খানেক মানুষ জড়ো হয়েছে। অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছে। খেলা শুরুর আগে থেকেই আনন্দ উন্মাদনা শুরু হয়েছে। অনেকে চিৎকার করছিল ডয়েচল্যান্ড, ডয়েচল্যান্ড; অর্থাৎ জার্মানি, জার্মানি।

ম্যাচ শুরুর পর উল্লাস আর হুল্লোড় আরও বেড়ে গেল। জার্মানির বিরুদ্ধে ৫১ মিনিটে স্পেনের দানি ওলমো প্রথম গোল করার পর অনেকেই শঙ্কিত হলেও, জার্মান দলের খেলা সবাইকে উদ্দীপ্ত করেছিল। জার্মান দলের ফ্লোরিয়ান ভির্টজ ৮৯ মিনিটের গোলে সমতা ফিরে এলে সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন। অতিরিক্ত সময়ে ১২০ মিনিটে খেলা চলাকালে স্পেনের মিকেল মেরিনোর দর্শনীয় হেডের গোল জার্মানির ইউরো ২০২৪–এর স্বপ্ন ভেঙে দেয়।

স্পেনের জয়োল্লাসে জার্মানির স্তব্ধতা

হঠাৎ করেই হ্যানোভার শহরের ফাউস্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ফ্যান চত্বরের রূপ পাল্টে গেল। অনেকেই চোখ মুছছে, অনেকে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকেই টেলিভিশন পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার আগ্রহ নিমেষেই হারিয়ে ফেলল। খেলা শেষে জার্মান ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের অনেকেই মাঠে বসে পড়েছে। কেউ চোখ মুছছে। স্টুটগার্ট শহরের এমএইচপি অ্যারেনায় মাঠের সেই বেদনাভরা আবহ জার্মানজুড়ে ফুটবল ভক্তদের সংক্রমিত করেছিল।

জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকাটি লিখেছে, জার্মান দলের কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমান ও তাঁর খেলোয়াড়রা স্পেনের বিপক্ষে নাটকীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হলেও এই হারের মধ্য ছিল দুর্দান্ত সাফল্য। খেলা শেষে ইউলিয়ান নাগেলসমান রেফারির প্রতি ক্ষোভের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সে কথাও লিখেছে পত্রিকাটি। জার্মান দলের ইয়োশুয়া কিমিখ বলেছেন, ‘এই পরাজয় আজ আমাদের প্রাপ্য ছিল না। কারণ, রেফারি স্পেনের পক্ষে অনেকবার বাঁশি বাজিয়েছেন।’

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচের পর টনি ক্রুস

আর জার্মান দলের টনি ক্রুস বলেছে, ‘এটি এমন একটি খেলা, যেখানে আমরা সবাই আমাদের পুরো উজাড় করে দিয়েছিলাম। দুঃখের পাশাপাশি আমরা সবাই গর্বিত হতে পারি। আমরা সবাই আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি করেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দল এই পথেই চলবে। কিন্তু আজ আমরা একটু বেদনাহত।’

গতকালকের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি-স্পেন ম্যাচটি পরিচালনা করেছিলেন ব্রিটিশ রেফারি অ্যান্থনি টেলর। খেলা পরিচালনায় জার্মান দলের বিরুদ্ধে তাঁর নানা সিদ্ধান্ত ও অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি এলাকায় ইয়ামাল মুসিয়ালার শট স্পেনের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় মার্ক কুকুরেয়ার হাতে বলটি লাগলেও সম্ভাব্য পেনাল্টি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জার্মানির নানা পত্রপত্রিকাতে রেফারির দ্বিচারিতা নিয়ে লেখা হয়েছে।