চলতি মৌসুমে সিরি ‘আ’তে শিরোপা দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে ইন্টার মিলান। ২৯ ম্যাচ শেষে ইন্টারের পয়েন্ট এখন ৭৬। দুইয়ে থাকা এসি মিলানের চেয়ে ইন্টার এগিয়ে আছে ১৪ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে ইন্টারের শিরোপা পুনরুদ্ধার করা কেবল সময়ের ব্যাপার।
সিরি ‘আ’তে ইন্টারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা লাওতারো মার্তিনেজের। এ মৌসুমে লিগে এখন পর্যন্ত ২৬ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার। কিন্তু ক্লাবের হয়ে ঝলমলে মার্তিনেজ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুললেই কেমন যেন ম্লান হয়ে পড়েন। যদিও একসময় পরিস্থিতি মোটেই এমন ছিল না।
লিওনেল স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার পর একপর্যায়ে মার্তিনেজই ছিলেন আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু সেই মার্তিনেজই ঢুকে পড়েন লম্বা সময়ের ‘শীতনিদ্রা’য় এবং তাঁকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে থাকেন লিওনেল মেসি। স্কালোনির অধীন এখন মেসির গোলসংখ্যা ৪১, আর মার্তিনেজ আটকে আছেন সেই ২১ গোলেই।
গোল–খরায় সমালোচনার মুখে থাকা মার্তিনেজ স্বাভাবিকভাবেই জায়গা হারান মূল একাদশে। বিশ্বকাপে মার্তিনেজের জায়গায় সুযোগ পেয়ে হুলিয়ান আলভেরেজ জ্বলে উঠলে ইন্টার স্ট্রাইকারের কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়যাত্রার বেশির ভাগটাই মার্তিনেজকে উপভোগ করতে হয়েছে ডাগআউটে বসে।
সর্বশেষ এল সালভাদরের বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য ৯০ মিনিট খেলার সুযোগ পান মার্তিনেজ। একটি গোল বানিয়ে দিলেও কোনো গোল অবশ্য করতে পারেননি এই স্ট্রাইকার। আগামীকাল কোস্টারিকার বিপক্ষে অবশ্য একাদশে ফিরতে পারেন আলভারেজ। ফলে গোল–খরা দূর করার জন্য মার্তিনেজ পুরো ৯০ মিনিট পাবেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে করা গোলটি বাদ দিলে মার্তিনেজ ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সর্বশেষ গোলের দেখা পেয়েছেন ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হুন্ডুরাসের বিপক্ষে। এর পর থেকে ৭৭৫ মিনিট (সময়টাকে ম্যাচের হিসাবে বিবেচনা করলে প্রায় সাড়ে ৮ ম্যাচ) মাঠে থেকেও কোনো গোল আদায় করতে পারেননি মার্তিনেজ। এ সময় দলের হয়ে মার্তিনেজের অবদান কেবল দুটি ‘অ্যাসিস্ট’। মার্তিনেজের ব্যর্থতার এ তালিকায় বিশ্বকাপের ম্যাচ যেমন ছিল, তেমনি জ্যামাইকা, পানামা, কুরাসাও এবং এল সালভাদরের মতো অপেক্ষাকৃত খর্ব শক্তির দলও ছিল।
টানা গোল–খরায় জাতীয় দলের জার্সিতে চাপে থাকলেও মার্তিনেজ অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী। এল সালভাদর ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘আশা করি, আমি গোল করার আরেকটি সুযোগ পাব এবং যারা আমার সম্পর্কে অনেক কথা বলেন, তাদের দেখিয়ে দিতে পারব যে তারা ভুল। কারণ, আমি সব সময় নিজেরা সেরাটা উজাড় করে দিই।’
লম্বা গোল–খরার পরও মার্তিনেজের ওপর আস্থা না হারানোর কথা বলেছেন কোচ স্কালোনিও। এল সালভাদর ম্যাচে এই স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথা হচ্ছে, আমি চিন্তিত নই। সে খুব ভালো ম্যাচ খেলেছে। কেবল গতিময়তার দিক থেকেই নয়, শারীরিকভাবেও সে দারুণ ছিল। অবশ্যই একজন স্ট্রাইকার গোল করতে চাইবে। যখন সে সেটা করতে পারবে না, আমরা তা পছন্দ করি না। কিন্তু আমরা শান্ত আছি।’
তবে দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ম্যাচের পর ম্যাচে গোলহীন থাকলেও স্কালোনি কত দিন পর্যন্ত শান্ত থাকতে পারবেন, সে প্রশ্ন কেউ চাইলে তুলতেই পারেন। এরই মধ্যে একাদশে গুরুত্ব হারিয়েছেন, দ্রুত গোলে না ফিরলে দলেও গুরুত্ব হারাতে পারেন মার্তিনেজ।
মার্তিনেজের জায়গায় সুযোগ পেয়ে বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা হুলিয়ান আলভারেজ। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে সর্বশেষ ১১ ম্যাচ ধরে তিনিও কোনো গোল পাননি। আলভারেজ গোল–খরা দেখেছিলেন ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালেও। সেদিন ১০১ মিনিট মাঠে থেকে গোল পাননি আলভারেজ। এরপর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ বাছাই মিলিয়ে আরও ১০ ম্যাচ খেলে কোনো গোলের দেখা পাননি এই স্ট্রাইকার। সব মিলিয়ে আলভারেজের গোল–খরার সময় ৬৫০ মিনিট।
আর্জেন্টিনা দলে দুই স্ট্রাইকারের গোল করার ঘাটতিটা কেউ না কেউ এগিয়ে এসে পুষিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু কোপা আমেরিকার মতো বড় আয়োজন সামনে রেখে দুই সেরা স্কোরারের গোলে না থাকা নিশ্চিতভাবেই স্কালোনির দুশ্চিন্তা বাড়াবে। এখন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরুর আগে দুই স্ট্রাইকার গোলে ফিরতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।