কোচিং ক্যারিয়ারে তাঁরা নতুন নন। এই চার কোচের মধ্যে কেউ কম অভিজ্ঞ, কেউ আবার একটু বেশি। একজনের ক্যারিয়ার অবশ্য প্রায় দুই দশকের। তবে এই চার কোচ একটি বিশেষ জায়গায় এসে মিলে যাচ্ছেন এক বিন্দুতে। তাঁরা প্রত্যেকেই এ মৌসুমে নতুন দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। এই চার কোচ যে ক্লাবগুলোর দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের আবার অতীতে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার ইতিহাসও আছে। পাশাপাশি দলগুলো এবার শিরোপাপ্রত্যাশীও।
সেই চার কোচ হলেন লিভারপুলের আর্নে স্লট, এসি মিলানের পাওলো ফনসেকা, বায়ার্ন মিউনিখের ভিনসেন্ট কোম্পানি ও জুভেন্টাসের থিয়াগো মোতা। তাঁদের মধ্যে দুজনের মধ্যে আরও একটি মিল আছে—মোত্তা ও কোম্পানি এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগে কোচ হিসেবে ডাগআউটে দাঁড়াবেন।
আর এই চারজন এমন চারটি দলের কোচ, যাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাসংখ্যাকে যোগ করলে মোট শিরোপা হয় ২১টি। এই চার দলের অতীত ইতিহাস ও সমর্থকদের বিপুল প্রত্যাশার কারণে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগটা তাঁদের জন্য বেশ চাপেরও হতে যাচ্ছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সফল দলগুলোর একটি হলো বায়ার্ন মিউনিখ। এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছে তারা। এবারও শিরোপার লক্ষ্য সামনে রেখে চ্যাম্পিয়নস লিগের যাত্রা শুরু করবে তারা। মৌসুম শুরুর আগে দলটির ভার কাঁধে নিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি। কোচ হিসেবে এ মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর। ব্যর্থতার দায়ে টমাস টুখেলের বিদায়ের পর বায়ার্নকে সঠিক পথে ফেরানোর লক্ষ্যে কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে বেলজিয়ান ক্লাব অ্যান্ডারলেখটের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন কোম্পানি। এরপর ২০২২ সালে তিনি দায়িত্ব নেন বার্নলির। এ মৌসুম শুরুর আগে বায়ার্নের কোচ হিসেবে আসেন সাবেক এই ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার। তাঁর অধীন বুন্দেসলিগার শুরুটাও দারুণভাবে করেছে বায়ার্ন। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে বাভারিয়ান ক্লাবটি। এই তিন ম্যাচে বায়ার্ন সব মিলিয়ে করেছে ১১টি গোল। তবে ঘরোয়া লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের চ্যালেঞ্জ কিন্তু এক নয়। ইউরোপসেরার মঞ্চে প্রতিযোগিতার মাত্রাটা ভিন্ন। কোম্পানি সেই ভিন্ন চ্যালেঞ্জটা নিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
কোচ হিসেবে স্লটের দায়িত্বটা একেবারেই আলাদা। সম্ভবত তাঁর মতো চাপ নিয়ে এ মৌসুমে আর কোনো কোচ কাজ শুরু করেননি। লিভারপুলের মতো ক্লাবে দায়িত্ব নেওয়া বিষয়টি তো আছেই, তার ওপর তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো কিংবদন্তির। ফলে প্রত্যাশার চাপ যে পাহাড়সম, তা বোধহয় না বললেও চলে। এই চাপ নিয়েই লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাগআউটে দাঁড়াবেন স্লট।
চাপটা বিশাল হলেও ডাচ লিগে ফেইনুর্দকে চ্যাম্পিয়ন করানোর অভিজ্ঞতা আছে স্লটের। পাশাপাশি দলকে বড় লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও আছে তাঁর। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম তিন ম্যাচে জয় দিয়ে শুরুও করেছেন তিনি। যদিও সর্বশেষ ঘরের মাঠে নটিংহাম ফরেস্টের কাছে হেরেছে তাঁর দল লিভারপুল। তবে সেই হার বাদ দিলেও তাঁর ‘স্লট বল’কৌশল অনেকেই পছন্দ করেছেন। এখন লিভারপুলকে ইউরোপসেরার মঞ্চে স্লট সাফল্য এনে দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
গত চার মৌসুমে বিশেষ কোনো সাফল্য নেই জুভেন্টাসের। খেলোয়াড় ও কোচ বদল করেও কোনো সাফল্য পায়নি তারা। তবে জুভদের এবার নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইতালিয়ান-ব্রাজিলিয়ান কোচ মোতা। তাঁর অধীন এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছে ক্লাবটি। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের মঞ্চটা একেবারেই ভিন্ন।
এই মঞ্চে জুভেন্টাসের জেতা দুই শিরোপার শেষটি এসেছিল ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে। তার ওপর মোতার এটি আবার কোচ হিসেবে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ আসর। এর আগে জেনোয়া, স্পেশিয়া ও বোলোনার কোচ হিসেবে কাজ করলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি তাঁর। এখন অভিষেকেই মোতা কোনো চমক উপহার দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এসি মিলান চ্যাম্পিয়নস লিগে রাজত্ব করা দল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭টি শিরোপাও জিতেছে তারা। যদিও এই গল্পটা অনেক পুরোনো। ২০০৭ সালের পর আর শিরোপা জেতা হয়নি মিলানের। এমনকি খেলা হয়নি ফাইনালেও। সাম্প্রতিক সময়ে সিরি ‘আ’ জিতলেও ইউরোপে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা। এবার দলটিকে পথে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন ফনসেকা।
এর আগে শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন ফনসেকা। দলটিকে দ্বিতীয় রাউন্ডেও নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে মিলান নিশ্চয়ই আরও বড় কোনো অর্জনের দিকে তাকিয়ে। তবে কাজটা সহজ হবে না। লিগে মিলানের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। এখন চ্যাম্পিয়নস লিগে ফনসেকার দল কীভাবে শুরু করে, সেদিকেই তাকিয়ে মিলানের ভক্ত-সমর্থকেরা।