ইউরোর ‘গ্রুপ অব ডেথে’ নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে আজ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল দুই পরাশক্তি স্পেন ও ইতালি। এ ম্যাচে জিতলেই নিশ্চিত শেষ ষোলো, এমন পরিস্থিতিতে স্পেনের সামনে অবশ্য পাত্তা পায়নি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ম্যাচটি স্পেন আত্মঘাতী গোলে ১–০ ব্যবধানে জিতলেও, এ ফল মোটেই সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না।
ম্যাচে স্পেনের গতিময় ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে ছিল ইতালি। নিকো উইলিয়ামস, লামিনে ইয়ামাল, পেদ্রি এবং আলভারো মোরাতারা ম্যাচজুড়ে ছিলেন অনন্য। রক্ষণে দৃঢ়তা না দেখালে এবং গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা বারবার ত্রাতা না হলে এ ম্যাচে ইতালির হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত।
প্রথম ম্যাচে ২৩ সেকেন্ডে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল ইতালি, শালকের মাঠে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল হজম করতে পারত তারা। তবে বক্সের ভেতর পেদ্রির হেড দারুণ দক্ষতায় বাইরে পাঠিয়ে দলকে উদ্ধার করেন দোন্নারুম্মা। গোল না পেলেও দ্রুত আরও কয়েকবার ইতালির রক্ষণে আক্রমণ চালায় স্পেন।
বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে নিকো উইলিয়ামস ছিলেন দারুণ গতিময় ও অপ্রতিরোধ্য। তাঁকে থামাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছিল ইতালিকে। এর মধ্যে ১০ মিনিটের মাথায় গোলের কাছাকাছি গিয়ে হতাশ হয় ইতালি। একটু পর পাল্টা আক্রামণে দারুণ একটি সুযোগ মিস করেন উইলিয়ামস। আলভারো মোরাতার ক্রসে তাঁর হেড অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
স্পেনের গতি ও প্রেসিংয়ের ঝড়ে শুরুতে সংগ্রাম করলেও, ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে ইতালি। পাল্টা আক্রমণে কয়েকবার স্পেনের রক্ষণে হামলার চেষ্টা চালায় তারা। তবে গোলের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেনি ইতালিয়ান ফরোয়ার্ডরা। শুরুর ঝড়ের পর স্পেন মনোযোগ দেয় বলের দখল রেখে আক্রমণে যাওয়ার দিকে। এ সময় বল পেতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল লুসিয়ানো স্পালেত্তির দলকে। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে প্রতি–আক্রমণে গেলেও ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল পজিশনিংয়ের কারণে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি ইতালির খেলোয়াড়রা।
২৪ মিনিটে দারুণভাবে ইতালির রক্ষণে ঢুকে মোরাতাকে বল বাড়ান লামিনে ইয়ামাল। কিন্তু মোরাতার শট ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে বাঁচান দোন্নারুম্মা। একটু পর বক্সের বেশ বাইরে থেকে ফাবিয়ান রুইজের শট ফের অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাইরে পাঠান ইতালিয়ান গোলরক্ষক।
প্রথমার্ধে লড়াইটা ছিল মূলত স্পেনের আক্রমণের সঙ্গে ইতালির রক্ষণের। বিশেষ করে ইতালির অধিনায়ক ও গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা ছিলেন অনন্য। পোস্টের সামনে পিএসজির এ গোলরক্ষক দেয়াল তুলে না দাঁড়ালে এ অর্ধে অন্তত ৩–৪ গোল হজম করতে পারত বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধে খেলা এতটাই একমুখী ছিল যে স্পেনের ৯ শটের বিপরীতে ইতালি শট নিতে পেরেছি মাত্র ১টি। আজ্জুরিদের সেই একমাত্র শটটিও পোস্টের আশপাশে ছিল না।
বিরতির পরও অব্যাহত ছিল স্পেনের দাপুটে ফুটবল। ৫২ মিনিটে আবারও অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয় স্পেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে গিয়ে মার্ক কুকুরেয়া বল বাড়ান পেদ্রিকে। পোস্টের কাছাকাছি জায়গা থেকে পেদ্রির শট চলে যায় বাইরে দিয়ে। একটু পর বক্সের বাইরে থেকে পেদ্রির শট ঠেকান দোন্নারুম্মা। স্পেন না পারলেও স্প্যানিশ আক্রমণের চাপ সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে ইতালি।
মোরাতার ফ্লিক ইতালির সেন্টারব্যাক রিকার্ডো কালাফিওরির পায়ে লেগে জালে জড়ায়। গোল পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে আক্রমণে যায় স্পেন। একের পর এক আক্রমণে গিয়ে ইতালিয়ান রক্ষণকে কাঁপিয়ে দেয় পেদ্রি–মোরাতারা। তবে দোন্নারুম্মা, ইতালিয়ান রক্ষণ ও গোলপোস্টের কারণে দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি তাদের।
৭০ মিনিটে ম্যাচজুড়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলা উইলিয়ামসের বুলেট গতির শট ফিরে আসে বারে লেগে। শেষ দিকে দুই একবার অবশ্য সমতা ফেরানোর কাছাকাছি গিয়েছিল ইতালি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়েই। এখন শেষ ষোলোয় যাওয়ার লড়াইয়ে সোমবার রাতে শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ইতালি।