১৯৮৫ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়াকে ৮-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল আবাহনী লিমিটেড। এই ভ্যালেন্সিয়াই ১৯৯৩ সালে একই প্রতিযোগিতায় মোহামেডানের কাছে হেরেছিল ৮-০ গোলে। আবাহনীর গোল-উৎসবের মঞ্চ ছিল শ্রীলঙ্কার কলম্বো। মোহামেডানের জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। মালদ্বীপের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে লড়াইটা এখন আর আগের মতো একপেশে নেই। গত তিন দশকে মালদ্বীপ ফুটবলে ওপরের দিকে উঠে আসায় এশীয় ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় দুই দেশের ক্লাবের লড়াইয়েও এসেছে ভারসাম্য। সর্বশেষ ১০ বছরে মালদ্বীপের ক্লাবগুলোই বাংলাদেশের শীর্ষ ক্লাবের বিপক্ষে বেশি দাপট দেখিয়েছে। তবে জয়-পরাজয়ের বিচারে এখনো বাংলাদেশের ক্লাবগুলো এগিয়ে আছে মুখোমুখি লড়াইয়ে।
এশিয়ান ক্লাব টুর্নামেন্টে মালদ্বীপের ক্লাবগুলোর সঙ্গে মোট ২১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো। মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, সাইফ স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংস—বাংলাদেশের এ পাঁচটি ক্লাব খেলেছে মালদ্বীপের ক্লাবের বিপক্ষে। এর মধ্যে আছে—ক্লাব ভিক্টরি, ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া, নিউ রেডিয়েন্ট, ক্লাব ল্যাগুন্স, মাজিয়া, টিসি স্পোর্টস ও ক্লাব ইগলস। ২১ মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশের ক্লাব জিতেছে ১২টি ম্যাচে, মালদ্বীপের ক্লাব ৭টিতে। ড্র হয়েছে বাকি দুটি। গোলের দিক থেকে অবশ্য বাংলাদেশের ক্লাবগুলো দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর মোট গোল যেখানে ৫১, মালদ্বীপের ২৫। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সাফল্যের হার ৫৭.১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশি ক্লাবের ১২ জয়ের প্রথম আটটি এসেছে টানা, ১৯৮৫ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে। এই সময় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে মোহামেডান—ছয়টি। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৩ সালের সেই ৮-০ গোলের জয় ছাড়াও সাদা-কালো শিবির বড় ব্যবধানে জিতেছে আরও দুটি ম্যাচে। ১৯৮৯ সালে ইরানের আহওয়াজে এশিয়ান ক্লাব কাপে মালদ্বীপের ক্লাব ভিক্টরিকে মোহামেডান হারিয়েছিল ৭-২ গোলে। এরপর ১৯৯০ সালে ঢাকায় ক্লাব ল্যাগুন্সকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৫-০ গোলে। নিউ রেডিয়েন্ট ক্লাবও ১৯৯১ সালে ঢাকায় মোহামেডানের কাছে হেরেছিল ৩-০ গোলে। রেডিয়েন্টের বিপক্ষে মালেতে ১৯৯১ সালেই মোহামেডানের ২-০ গোলের আরও একটি জয় আছে। ১৯৯৩ সালের পর মালদ্বীপের আর কোনো ক্লাবের বিপক্ষে খেলেনি মোহামেডান।
মালদ্বীপের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি জয় মোহামেডানের। আর সবচেয়ে বেশি হার আবাহনীর। ১৯৮৫ সালে কলম্বোতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৮-১ গোলে হারানোর পর আবাহনী মালদ্বীপের কোনো ক্লাবের বিপক্ষে জিতেছে গত আগস্টে, সিলেটে। ৩৮ বছর পর মালদ্বীপের ইগলস ক্লাবকে এএফসি কাপের প্রাথমিক রাউন্ডে ২-১ গোলে হারায় আবাহনী। এর মাঝে আবাহনী হেরেছে চারটি ম্যাচ, ড্র করেছে দুটিতে। ২০১৮ সালে মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্টের বিপক্ষে মালেতে ৫-১ গোলে হেরেছিল আবাহনী। মালদ্বীপের কোনো ক্লাবের বিপক্ষে সেটিই বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার। আবাহনী ২০১৭ সালে মাজিয়ার বিপক্ষে ঢাকা ও মালে দুই ম্যাচেই হেরেছিল ২-০ গোলে। ২০১৮ সালে মালেতে রেডিয়েন্টের বিপক্ষে ৫-১ গোলের হারের পাশাপাশি ঢাকায় আবাহনী হেরেছিল ১-০ গোলে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও সাইফ স্পোর্টিং দুটি করে ম্যাচ খেলেছে মালদ্বীপের ক্লাবের সঙ্গে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার জয়ের হার শতভাগ। ২০০১ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপে মুক্তিযোদ্ধা ঢাকায় নিউ রেডিয়েন্টের বিপক্ষে জিতেছিল ২-১ গোলে। মালেতে ১-০ গোলে। সাইফ অবশ্য ২০১৮ সালে এএফসি কাপের প্রাথমিক রাউন্ডে টিসি স্পোর্টসের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছিল। ঢাকায় ১-০ গোলে আর মালেতে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারে সাইফ।
আজ এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলতে নামবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। গত সেপ্টেম্বরে মালেতে প্রায় অপ্রত্যাশিতভাবেই এই মাজিয়ার কাছে ৩-১ গোলে হেরে গিয়েছিল কিংস। আজ সে কারণেই লড়াইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। পরের রাউন্ডে যেতে হলে আজ মালদ্বীপের ক্লাবটির বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার উপায়ই নেই। মাজিয়ার বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য কিংসই এগিয়ে। এ ক্লাবটির বিপক্ষে এএফসি কাপে তিনটি ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমটি ২০২১ সালে মালেতে (২-০), দ্বিতীয়টি ২০২২ সালে কলকাতায় (১-০)। সে কারণেই গত সেপ্টেম্বরের হারটি কিংসের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত।
মালদ্বীপের কোনো ক্লাবের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্লাবের রেকর্ডটা আরও একটু সমৃদ্ধ হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।