ব্রাজিল নারী দলের ফরোয়ার্ড মার্তা
ব্রাজিল নারী দলের ফরোয়ার্ড মার্তা

যে কীর্তিতে মেসি-রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেলেন মার্তা

ছয়বারের ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলার তিনি, নারী বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ (১৭) গোলও তাঁর। আরেক নাম ‘পেলে উইথ স্কার্ট’। এরপর মনে হয় না, কারও বুঝতে বাকি আছে কার কথা হচ্ছে। তাঁর নাম মার্তা, ব্রাজিলের নারী ফুটবলার। হাঁটুর চোটে পড়ায় এবারের বিশ্বকাপ দলে যাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল।

তবে শেষ পর্যন্ত মার্তাকে রেখেই গতকাল দল ঘোষণা করেছেন ব্রাজিল কোচ পিয়া সুন্ধাগে। সব ঠিক থাকলে আগামী মাসে নিজের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ৩৭ বছর বয়সী মার্তা।

আগামী ২০ জুলাই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে শুরু হবে নারী বিশ্বকাপ। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এবারই প্রথম ওশেনিয়া মহাদেশে হতে চলেছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। সেই আসরের দলে জায়গা করে নিয়ে নতুন এক কীর্তিও গড়লেন মার্তা। সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ আসরের দলে থাকার তালিকায় ছাড়িয়ে গেলেন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লোথার ম্যাথাউসের মতো কিংবদন্তিদের।

ছেলেদের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫টি করে বিশ্বকাপ খেলছেন ৬ জন। মেসি, রোনালদো ও ম্যাথাউসের সঙ্গে এই তালিকায় আছেন মেক্সিকোর তিন ফুটবলার আন্তোনিও কারবাহাল, আন্দ্রেস গারদাদো ও রাফায়েল মার্কেজ। আর সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ দলে থাকার তালিকায় ওই ছয়জন ছাড়াও আছেন জিয়ানলুইজি বুফন ও গিয়ের্মো ওচোয়া। ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়ে মার্তা ছাড়িয়ে গেলেন তাঁদের সবাইকে।

২০০২ সালে অভিষেকের পর থেকেই ব্রাজিল নারী দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন মার্তা। তর্কযোগ্যভাবে নারী ফুটবলের সর্বকালের সেরা এই ফরোয়ার্ড প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন এর পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে। সর্বশেষটি খেলেছেন ২০১৯ সালে ফ্রান্সে। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ২০ ম্যাচে করেছেন সর্বোচ্চ ১৭ গোল। তবে শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ রয়েই গেছে।

নারী বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১৭ গোল করেছেন মার্তা

ছেলেদের ফুটবলে ব্রাজিল রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও মেয়েদের ফুটবলে উল্টো। এখনো পর্যন্ত একবারও সোনালি ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি ব্রাজিলিয়ান মেয়েদের। ২০০৭ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়াই দলটির সেরা সাফল্য।

ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিলেও মার্তা কিন্তু সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার নন। এ তালিকায় সবার ওপরে মার্তারই সাবেক সতীর্থ ফোরমিগা। ব্রাজিল নারী দলের সাবেক এই মিডফিল্ডার ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা সাতটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি সাতবার অলিম্পিক ফুটবলে অংশ নেওয়া একমাত্র খেলোয়াড়ও তিনি। ব্রাজিলের হয়ে রেকর্ড ২৩৪ ম্যাচ খেলা ফোরমিগা ২০২১ সালে ৪৩ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেছেন।

নারী–পুরুষ ফুটবল মিলিয়ে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড সাতটি বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে খেলেছেন ব্রাজিলের ফোরমিগা

তালিকার দুইয়ে আছেন জাপানের হোমারে সাওয়া। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেছেন এই মিডফিল্ডার। ২০১১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ জিতেছিল জাপান। তিনি পেয়েছিলেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। এবারের বিশ্বকাপে মার্তা মাঠে নামলেই সাওয়াকে ছুঁয়ে ফেলবেন। একই সুযোগ থাকছে ওনোমে এবিরও। নাইজেরিয়ার এই ডিফেন্ডারও এবার নিয়ে ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ দলে থাকার রেকর্ডে মার্তার সঙ্গী হতে পারতেন সতীর্থ ক্রিস্তিয়ানে। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সী ক্রিস্তিয়ানেকে দলে রাখেননি ব্রাজিল কোচ সুন্ধাগে। ২৩ সদস্যের দলে ১১ জনের এবার বিশ্বকাপ অভিষেক হতে পারে।

মার্তা স্কোয়াডে থাকলেও বাঁ হাঁটুর চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় তাঁর মাঠে নামা নিয়ে শঙ্কা আছে। দল ঘোষণার পর কোচ সুন্ধাগে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মার্তা হলো ফুটবলের রানি, একজন আদর্শ। দলে ওর থাকাটা অনেক বড় ব্যাপার। চূড়ান্ত পাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে সে অন্যতম সেরা। তবে শুরুর একাদশে সে থাকছে কি না, এখনই বলতে পারছি না।’

নারী বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল 【 গোলরক্ষক : লেতিসিয়া ইজিদোরো, বারবারা, কামিলা। 【রক্ষণভাগ : আন্তোনিয়া, বুরুনিনিয়া, কাথেলেন, লরেন, মনিকা হিকমান, রাফায়েল, তামিরেস। 【মাঝমাঠ : দুদা সামপাইয়ো, কেরোলিন, লুয়ানা, আদ্রিয়ানা, আনা ভিতোরিয়া, আরাই বোরগেস।【আক্রমণভাগ : আন্দ্রেসা আলভেস, গেইসে, নিকোল, বিয়া জানেরাত্তো, দেবিনিয়া, গাবি নুনিয়েজ, মার্তা।【 রিজার্ভ : তাইনারা, আঞ্জেলিনা, আলিন গোমেস।
ছয়বার ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের স্বীকৃতি পেয়েছেন মার্তা

বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে রোববার চিলির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। ২৪ জুলাই অ্যাডিলেডে পানামার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ব্রাজিলিয়ান মেয়েদের আসল পরীক্ষা। তাদের গ্রুপে বাকি দুই দল ফ্রান্স ও জ্যামাইকা।