ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা
ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা

কী শাস্তি হতে পারে সিটির

শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের ফুটবলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ। দীর্ঘ চার বছর তদন্তের পর যে অভিযোগ এনেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনে এখন সিটির এসব অভিযোগের শুনানি হবে। ২০০৮ সালে আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ মালিকানা কেনার পর ইংলিশ ফুটবলের পরাশক্তি হয়ে ওঠা ম্যানচেস্টার সিটি এই সময়ে ছয়বার জিতেছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা, এর মধ্যে পেপ গার্দিওলার অধীনে সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমেই জিতেছে চারবার। শুধু সাফল্যই যে পাচ্ছে এমন নয়, গার্দিওলার এই দলটা আকর্ষণীয় ফুটবল খেলেও নজর কেড়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। সেই সিটি কীভাবে এই ঝামেলায় জড়াল, কতটা গুরুতর তাদের বিপক্ষে ওঠা অভিযোগগুলো, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী শাস্তি হতে পারে সিটির—উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

কেন অভিযুক্ত সিটি

চার বছরের তদন্তের পর গত সোমবার প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিটির বিরুদ্ধে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শতাধিক আর্থিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ, ফুটবল অর্থনীতি বিশ্লেষক ও লেখক কাইরান ম্যাগুয়ের বিবিসিকে দুই ধরনের অভিযোগের কথা ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথমত, অভিযোগ হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ দুর্নীতি করে বাড়িয়ে দেখিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এসব অর্থ মালিকপক্ষের কাছ থেকে এসেছে, যা অর্থিক নীতির আওতায় পড়ে না। কিন্তু সিটি সেগুলোকে বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ বলে চালিয়ে দিয়েছে। আরেক ধরনের অভিযোগ হচ্ছে, ম্যানচেস্টার সিটি দুর্নীতি করে ক্লাবের পরিচালনা ব্যয় কমিয়ে দেখিয়েছে। ক্লাবটি বিভিন্ন সময় এর কোচদের সিটিরই মালিকপক্ষের অধীনে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপনে চুক্তিবদ্ধ করেছে। ক্লাব থেকে কোচদের বেতন কম দেখিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোচদের বেতন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ক্লাবের পরিচালন ব্যয় কম দেখানো গেছে।

এ ধরনের অভিযোগে সীমাহীন শাস্তি হতে পারে। “আর এ রকম করা যাবে না”—এই ধরনের সাবধানবাণী থেকে শুরু করে লিগ থেকে নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত যেকোনো শাস্তিই হতে পারে, প্রমাণ সাপেক্ষে
কাইরান ম্যাগুয়ের

কীভাবে এটা নজরে এল

২০১৮ সালের নভেম্বরে জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেল কিছু নথি ফাঁস করে একই রকম কিছু অভিযোগ তোলে সিটির বিরুদ্ধে। এর জের ধরে উয়েফা তদন্ত শুরু করে এবং সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্লাবটিকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। যদিও ২০২০ সালের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত সিটির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয় রায় দিয়ে উয়েফার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। প্রিমিয়ার লিগ এ নিয়ে আলাদা তদন্ত শুরু করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। সেই তদন্তের ফলই তারা প্রকাশ করেছে কয়েক দিন আগে।

ম্যানচেস্টার সিটির মালিক শেখ নাহিয়ান

অভিযোগ কতটা গুরুতর

বিবিসির ক্রীড়া সম্পাদক ড্যান রোয়ান বলেছেন, ‘এটা সম্ভবত প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। আর কোনো ক্লাব কখনো এত অভিযোগের মুখোমুখি হয়নি। এটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে শুধু সিটির মালিকপক্ষেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হবে না, ইংলিশ ফুটবলেরই ক্ষতি হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্লাব এবং স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার ধারণা বিশাল ধাক্কা খাবে। সিটি ওদের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ পেপ গার্দিওলাকে হারাবে এবং প্রিমিয়ার লিগের ওপর একটা কালো ছায়া নেমে আসবে।’

কী বলছে ম্যানচেস্টার সিটি, কী করছে

সিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা এই ধরনের অভিযোগে ‘বিস্মিত’। তারা আরও বলেছে, ‘ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাব একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে বিষয়টির পর্যালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। কমিশন নিরপেক্ষভাবে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে সিটির বিশ্বাস। ক্লাবও এটি চিরতরে সুরাহা করতে চায়।’
ক্লাবের পক্ষ হয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্য সিটি বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড প্যানিককে নিয়োগ দিয়েছে, যিনি এর আগেও সিটির হয়ে বিভিন্ন মামলা লড়েছেন। আইনি পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকেও।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে কি গার্দিওলা কোচ হিসেবে থাকবেন সিটিতে?

অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী শাস্তি হতে পারে সিটির

কাইরান ম্যাগুয়ের বিবিসিকে বলেছেন, ‘এ ধরনের অভিযোগে সীমাহীন শাস্তি হতে পারে। “আর এ রকম করা যাবে না”—এই ধরনের সাবধানবাণী থেকে শুরু করে লিগ থেকে নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত যেকোনো শাস্তিই হতে পারে, প্রমাণ সাপেক্ষে।’ ইংলিশ ফুটবল ও ফৌজদারি আইনের বিষেশজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক জরিমানা, পয়েন্ট কর্তন, নিষেধাজ্ঞা, অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে কমিশন যেকোনো শাস্তিই দিতে পারে ম্যানচেস্টার সিটিকে। ফলে এ সময় জেতা সিটির সব ট্রফি কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে সিটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতেও আপিল করতে পারবে না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু বিষয়টি লিগ কর্তৃপক্ষের, রায় পছন্দ না হলে সেখানকারই আপিল কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে।