বার্সেলোনার চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে লা লিগা শিরোপা জয়ের পথেই আছে রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ রাতে মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোয় রিয়াল জিতে গেলে বার্সার সঙ্গে ব্যবধান বেড়ে হবে ১১। তখন লা লিগায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে কার্লো আনচেলত্তির দলের সঙ্গে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাটুকুও আর থাকবে না বার্সার। বিপরীতে বার্সা আজ জিততে পারলে রিয়ালের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান কমে হবে ৫। সে ক্ষেত্রে জাভি হার্নান্দেজের দল লিগ শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল-বার্সার লড়াইটা প্রায়ই দল ছাড়িয়ে ব্যক্তি পর্যায়ের হয়ে ওঠে। আজও বেশ কয়েকটি পজিশনে হতে পারে দুই দলের দুজনের মধ্যে তীব্র লড়াই। সেটাই গড়ে দিতে পারে ব্যবধান। মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোর ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে, এমন ৪ লড়াই নিয়েই এ আয়োজন—
গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুজন দুই রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে আজ লা লিগায় মুখোমুখি হতে চলেছেন। ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের রিয়াল। রোনাল্দ আরাউহোর বার্সেলোনা নিজেদের মাঠে পিএসজির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে। বার্সা ছিটকে পড়ায় অনেক সমর্থক আরাউহোকেই দায়ী করেছেন। পিএসজির ব্র্যাডলি বারকোলাকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় উরুগুইয়ান ডিফেন্ডারকে। ম্যাচের তখন ২৯ মিনিট। বাকি সময় এক খেলোয়াড় কম নিয়ে পিএসজির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি বার্সা।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেই দারুণ ছন্দে থাকা ভিনিসিয়ুসকে সামলানো আরাউহোর জন্য ভীষণ কঠিন হবে। লেফট উইঙ্গার হলেও রিয়াল কোচ আনচেলত্তি এ মৌসুমে বেশির ভাগ ম্যাচেই ভিনিকে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলিয়েছেন। পিএসজির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা বার্সা রক্ষণভাগের ওপর আজ নিশ্চিতভাবেই ছড়ি ঘোরাতে চাইবেন ভিনি। বার্সার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে (স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনাল) পাওয়া হ্যাটট্রিক ব্রাজিলের ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে বাড়তি প্রেরণা জোগাবে।
বয়স মাত্র ১৬ বছর হলে কী হবে, লামিনে ইয়ামাল এরই মধ্যে বার্সেলোনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন। প্রতিভাবান এই কিশোরের গতি, সৃজনশীলতা, ড্রিবলিং ও গোলের সুযোগ তৈরির দক্ষতা জাভির দলের জন্য আশীর্বাদ। পিএসজির বিপক্ষে গত সপ্তাহে নিজেকে মেলে ধরার তেমন সুযোগ পাননি ইয়ামাল। আরাউহো লাল কার্ড দেখায় তাঁর জায়গায় বিকল্প ডিফেন্ডার হিসেবে ইনিগো মার্তিনেজকে নামাতে বাধ্য হন বার্সা কোচ জাভি। মার্তিনেজকে খেলার সুযোগ দিতে ম্যাচের ৩৪ মিনিটেই নিজেকে ‘বলিদান’ দিতে হয় ইয়ামালের। আজ পুরো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে রুডিগার-কারভাহাল-মেন্দি-নাচোদের নিয়ে গড়া রিয়ালের রক্ষণভাগের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন ইয়ামাল। তাঁকে আটকানোর দায়িত্ব থাকবে ফারলাঁ মেন্দির ওপর। ফরাসি এই লেফ্ট ব্যাককে গত সপ্তাহে ১২০ মিনিট সিটির আক্রমণ ঠেকানোর দুরূহ কাজ করতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আজ কিছুটা হলেও মেন্দির মধ্যে ক্লান্তি ভাব থাকার কথা। ইয়ামাল সেটারই ফায়দা লুটতে চাইবেন। বড় ম্যাচগুলোতে আনচেলত্তি বরাবরই মেন্দির ওপর আস্থা রাখেন। আজও তাঁর কাছ থেকে দারুণ কিছুর আশা করবেন।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলে খেললেও জুড বেলিংহাম ও ইলকায় গুন্দোয়ানের মধ্যে দুটি মিল আছে। দুজনই বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সাবেক মিডফিল্ডার। স্প্যানিশ ফুটবলে দুজনেরই পথচলা শুরু হয়েছে এবারের মৌসুমেই। বেলিংহাম যোগ দিয়েছেন রিয়ালে, গুন্দোয়ান নাম লিখিয়েছেন বার্সায়। আরেকটি মিল জানতে চান? তাহলে লা লিগায় রিয়াল-বার্সার সর্বশেষ মুখোমুখি হওয়া ম্যাচটির কথা মনে করুন। দুই দলের হয়ে গোল করেছিলেন এই দুজন। গুন্দোয়ানের গোলে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা, দ্বিতীয়ার্ধে বেলিংহামের জোড়া গোলে ম্যাচ জিতে নেয় রিয়াল।
মাঝমাঠে বেলিংহাম-গুন্দোয়ান দ্বৈরথ আজও জমে উঠতে পারে। আনচেলত্তির কৌশলের সঙ্গে শুরু থেকেই মানিয়ে নেওয়া বেলিংহাম রিয়ালের আক্রমণ আর মাঝমাঠের সেতুবন্ধন হয়ে উঠেছেন। বার্সার বর্তমান স্কোয়াডে ওরিয়ল রোমেউ ছাড়া স্বীকৃত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নেই। রোমেউয়েরও শুরুর একাদশে নিয়মিত জায়গা হয় না। বেলিংহাম এই সুযোগই সদ্ব্যবহার করতে চাইবেন। জাভি তাঁর দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের অভাব পূরণের বাড়তি দায়িত্ব দিতে পারেন গুন্দোয়ানকে। প্লেমেকিংয়ের পাশাপাশি বেলিংহামকে আটকানোর কাজটাও করতে হতে পারে তাঁকে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ততা—রিয়ালের টনি ক্রুস আর বার্সার পেদ্রির সৌজন্যে আজ দেখা যেতে পারে এমন লড়াই। মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা অনেকাংশেই নির্ভর করছে এ দুজনের ওপর। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেঙে আক্রমণের সুর বেঁধে দেওয়ার সব রকম সামর্থ্য আছে ক্রুস ও পেদ্রির।
তবে কাজটা ক্রুসের জন্য যতটা সহজ, পেদ্রির জন্য ততটা সহজ হবে না। দারুণ ছন্দে থাকা রিয়ালের মাঝমাঠে ক্রুস সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন মদরিচ-কামাভিঙ্গা-ভালভের্দেদের। ভালভের্দে তো সিটির বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন। বিপরীতে পেদ্রির মাঝমাঠের সঙ্গী গুন্দোয়ান-ডি ইয়ং-ক্রিস্টেনসেনরা ততটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না। চোটে মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়া গাভির অনুপস্থিতি বার্সাকে বেশ ভোগাচ্ছে। আজ মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাই পেদ্রিকে নিজের সেরাটা দিতে হবে।