আর্থিক নীতি ভাঙার অভিযোগ ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে
আর্থিক নীতি ভাঙার অভিযোগ ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে

আর্থিক নীতি ভাঙার একাধিক অভিযোগ ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে

চার বছর তদন্তের পর আর্থিক নীতিমালা ভাঙার দায়ে ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। বিবিসি জানিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভাঙার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এ জন্য ক্লাবটিকে একটি স্বাধীন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ নিয়ে তদন্ত শুরুর পর সিটি তাতে কোনো সহযোগিতা করেনি বলেও অভিযুক্ত করা হয়েছে ক্লাবটিকে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘আর্থিক সংগতি নীতিতে মারাত্মক নিয়ম লঙ্ঘনের’ কারণে সিটিকে উয়েফা আয়োজিত প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সে বছরেরই জুলাইয়ে উয়েফার রায়কে নাকচ করে সিটিকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় খেলার অনুমতি দেন ক্রীড়াজগতের সর্বোচ্চ আদালত ‘কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট’।

প্রিমিয়ার লিগ এবারের বিবৃতিতে বলেছে, ‘ক্লাবের আর্থিক অবস্থা নিয়ে পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়, এমন সঠিক আর্থিক তথ্য না দেওয়ায়’ নিয়ম ভেঙেছে সিটি। এর মধ্যে সিটির রাজস্ব, স্পনসর থেকে আয় ছাড়াও ক্লাবের পরিচালনা খরচও অন্তর্ভুক্ত। সিটি আরও কিছু ধাপে নিয়ম ভেঙেছে বলে জানিয়েছে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। ২০০৯–১০ থেকে ২০১২–১৩ মৌসুম পর্যন্ত কোচের পারিশ্রমিক, যখন সিটির কোচ ছিলেন রবার্তো মানচিনি—সে সময় কোচের বেতনসংক্রান্ত নিয়ম ভেঙেছে সিটি। এ বিষয়ে সিটি সবিস্তার সবকিছু জানায়নি। ২০১০–১১ মৌসুম থেকে ২০১৫–১৬ মৌসুম পর্যন্ত খেলোয়াড়দের বেতনসংক্রান্ত বিষয়েও সিটি সবিস্তার কিছু না জানানোয় নিয়ম ভাঙার অভিযোগ গঠন করেছে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি ও প্রিমিয়ার লিগে লাভ ও টেকসই হওয়ার বিষয়েও সিটির বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভাঙার অভিযোগ সিটির বিরুদ্ধে

২০০৮ সালে আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ সিটির মালিকানায় আসার পর গত মৌসুমে ষষ্ঠ লিগ শিরোপা জিতেছে ইংলিশ ক্লাবটি। তবে ইউরোপ–সেরার টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগে এখনো সাফল্য দেখেনি পেপ গার্দিওলার দল। যদিও কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে প্রতি মৌসুমেই তারকা খেলোয়াড়দের সমাবেশ ঘটিয়ে স্কোয়াড শক্তিশালী করেছে সিটি। কিন্তু ২০১৮ সালের নভেম্বরে জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘ডার স্পিগেল’ সিটির বিরুদ্ধে তথ্য–প্রমাণসহ স্পনসর চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশের পর উয়েফা তদন্ত শুরু করে।

প্রিমিয়ার লিগ সিটিকে যে স্বাধীন কমিশনের কাছে হস্তান্তরের কথা বলেছে, সেই কমিশন ‘প্রিমিয়ার লিগের সদস্য ক্লাবগুলো নিয়ে’ গঠিত বলে জানানো হয়েছে। এই ‘বিচারপ্রক্রিয়া গোপনে অনুষ্ঠিত হবে’ বলেও জানিয়েছে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ।

বিবিসি স্পোর্টসের ফুটবল প্রতিবেদক সাইমন স্টোন এই ঘটনার বিশ্লেষণে নিজের মত দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের যেহেতু এ ঘটনার তদন্তে চার বছর লেগেছে, তাই দ্রুতই এর রায় হবে না বলে মনে করেন স্টোন। সিটি সব সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। ক্লাবটি দাবি করেছে ‘ডার স্পিগেল’ উইকিলিকসের কাছ থেকে পাওয়া যেসব তথ্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে, সেসব অসম্পূর্ণ। উয়েফা যখন এসব নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল, সিটির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, এই তদন্তে তাদের আস্থা নেই। এবার প্রিমিয়ার লিগের অভিযোগ খণ্ডনে সিটি সেরা আইনজীবীদের নিয়ে মামলার প্রতিটি লাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে বলেও মতামত দেন সাইমন স্টোন।

প্রিমিয়ার লিগের এই অভিযোগ খণ্ডন করবে সিটি কর্তৃপক্ষ

এই অভিযোগনামায় উয়েফার তদন্তে সিটি কোনোরূপ সাহায্য করেনি, সে বিষয়ও উল্লেখ করা আছে। সাইমন স্টোন মনে করেন, সিটি এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে আইনি লড়াইয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করবে এবং বিষয়টি ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাও বলে এসেছেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে সবকিছু আইনের মধ্যে করার আশ্বাস দিয়েছে। যদিও লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বিভিন্ন সময় সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ করে এসেছেন।

এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিটির সব রকম শাস্তিই হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাইমন স্টোন। এ বিষয়ে ম্যানচেস্টার সিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রিমিয়ার লিগের নিয়ম ভাঙার অভিযোগে বিস্মিত ম্যানচেস্টার সিটি। বিশেষ করে ইপিএল (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ) নিয়ম ভাঙার যে সুবিশাল ফিরিস্তি দিয়েছে, সেসব কারণে। স্বাধীন কমিশনের বিষয়টি মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছে ক্লাব। আমরা এসব অভিযোগ চিরতরে উৎপাটন করার লক্ষ্যে কাজ করব।’