ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই গ্যালারি প্রকম্পিত হচ্ছিল জর্ডান সর্মথকদের উল্লাসে। শেষ বাঁশি বাজতে একই দৃশ্যের দেখা মিলল মাঠেও। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে, কেউ পতাকা হাতে নিয়ে এবং কেউ মাটিতে শুয়ে ভেসে যাচ্ছিল উদ্যাপনের আনন্দে। প্রথমবারের মতো এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালে যাওয়ার উদ্যাপনটা অবশ্য এমনই হওয়ার কথা! এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে ফেবারিট দক্ষিণ কোরিয়াকে ২–০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে জর্ডান।
এর আগে ইতিহাস গড়ে এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল জর্ডান। তবে সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে জর্ডানের জন্য কঠিন বাধা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। সন হিউং–মিনসহ ইউরোপিয়ান ফুটবলে খেলা একাধিক তারকা যেখানে আছেন, সেই দলকে হারানো নিশ্চয়ই সহজ হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এর আগে ৬ দেখায় কখনোই দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাতে পারেনি জর্ডান। ৩ হারের বিপরীতে ছিল ৩টি ড্র।
সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার পর দুই দলের শক্তির পার্থক্য নিয়ে কথাও বলতে হয়েছিল জর্ডানের কোচ মরোক্কান কোচ হুসাইন আমাতোকেও। তবে ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর আমাতো সে সময় বলেছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ কারা, এটার ওপর নয়, আমাদের ফল নির্ভর করছে নিজেদের পারফরম্যান্সের ওপর।’
আমাতোর সেই কথা যে নিছক কথার কথা ছিল না মাঠেই তার প্রমাণ দিল জর্ডান। দাপুটে ফুটবল খেলেই ফাইনালে উঠেছে তারা। ম্যাচজুড়ে গতিময় ফুটবল, প্রেসিং, আক্রমণ ও আত্মবিশ্বাসী ফুটবলে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তারা। অন্যদিকে আরও একবার হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হলো ১৯৬০ সালের পর এশিয়ান কাপ জিততে না পারা দক্ষিণ কোরিয়াকে।
শক্তি, সামর্থ্য কিংবা পরিসংখ্যানে জর্ডান পিছিয়ে থাকলেও সেমিফাইনালের শুরু থেকে চিত্রটা ছিল একেবারে ভিন্ন। বল দখলে দক্ষিণ কোরিয়া কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণ ও সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল জর্ডানই। ৪ মিনিটের মাথায় দক্ষিণ কোরিয়ার পোস্ট লক্ষ্য করে প্রথম শটটি নেয় জর্ডান।
এরপর একের পর এক আক্রমণে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণের পরীক্ষা নিতে শুরু করে জর্ডান। এ সময় বেশ নড়বড়ে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের দলের এমন ছন্নছাড়া অবস্থার সুযোগ নিয়ে ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে জর্ডান। ১৯ মিনিটে অবশ্য সন হিউং–মিন বল জালে জড়ান। যদিও সেটি ছিল অফসাইড। এদিন অবশ্য শুরু থেকে সনকে বেশ ভালোভাবেই মার্কিংয়ে রাখে জর্ডান ডিফেন্স। আক্রমণে যাওয়ার জন্য টটেনহাম তারকাকে খুব বেশি জায়গা দেয়নি তারা।
ম্যাচের প্রথম ২৪ মিনিটে জর্ডান ছয়টি শট নিয়ে একটি লক্ষ্যে রাখলেও দক্ষিণ কোরিয়া কোনো শটই নিতে পারেনি। ২৫ মিনিটে গোলরক্ষক ত্রাতা না হলে তখনই গোল খেয়ে বসতে পারত দক্ষিণ কোরিয়া। ২৮ মিনিটে অবশ্য পেনাল্টি পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। যদিও ভিএআরে যাছাইয়ের পর বাতিল হয় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে অবশ্য দুদলের সামনেই গোলের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু কোনো দলই জালের ঠিকানা খুঁজে না পেলে শেষ হয় নিষ্ফলা প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রেসিং ফুটবল খেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু ৫৪ মিনিটে ১৯৬০ সালের চ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দিয়ে এগিয়ে যায় জর্ডান। দক্ষিণ কোরিয়ার ভুলের সুযোগ নিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আল–নিয়ামাত।
৬৪ মিনিটে কোরিয়ান গোলরক্ষক বাধা হয়ে না দাঁড়ালে তখনই ব্যবধান ২–০ করতে পারত জর্ডান। তবে ২ মিনিট পর ঠিকই দারুণ এক গোল আদায় করে নেয় জর্ডান। দৃষ্টিনন্দন ফিনিশিংয়ে গোলটি করেন মুসা আল–তামারি। দ্বিতীয় গোল হজম করার দক্ষিণ কোরিয়ার মনোবল একরকম ভেঙে পড়ে। শেষ দিকে অবশ্য কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া জর্ডানকে চাপে ফেলে কিছু সুযোগ তৈরি করে দক্ষিণ কোরিয়া। যদিও সেগুলো জর্ডানের রক্ষণ–দুর্গ ভেঙে গোল আদায়ের সেটা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত জর্ডানের ঐতিহাসিক এক জয়েই শেষ হয় এ ম্যাচ।