তীব্র গরম না হলেও দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ হয়তো ঝামেলা করছিল ডিন হেন্ডারসনকে। সে কারণেই বোধ হয় ক্যাপ পরে নেমেছিলেন নটিংহাম ফরেস্টের গোলরক্ষক।
লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচ বলে কথা! মোহামেদ সালাহ-রবার্তো ফিরমিনোদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। মনোযোগ একটু এদিক-সেদিক হলেই দিতে হবে চড়া মূল্য। সেসব মাথায় রেখেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ধারে নটিংহামে আসা হেন্ডারসনের ‘বাড়তি সতর্কতা’।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আজ এই হেন্ডারসনই নটিংহামের অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে উঠলেন। সালাহর শট, ভার্জিল ফন ডাইকের হেড কিছুই টলাতে পারেনি তাঁকে। পারেনি লিভারপুলও। মৌসুমের শুরু থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা ইয়ুর্গেন ক্লপের দল হেরে গেছে ১-০ গোলে।
৫৫ মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেছেন নটিংহামের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড তাইয়ো আউওনিয়ি। ফ্রি কিক থেকে জটলায় বল পেয়ে যান স্টিভ কুক। তাঁর নেওয়া শট বারে লেগে ফেরে। তবে ফিরতি শটে ভুল করেননি আউওনিয়ি। জালের উঁচুতে তাক করে নেওয়া হালকা টোকা কোনো সুযোগই দেয়নি লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন বেকারকে। তবে ম্যাচজুড়ে লিভারপুলের গোটা দশেক সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়ে নায়ক ওই হেন্ডারসনই।
অথচ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস ছিল লিভারপুলের সঙ্গী। তাদেরই আটকে দিল পয়েন্ট তালিকার তলানির দল নটিংহাম। লিগে তৃতীয় হারের তিক্ত স্বাদ পাওয়া লিভারপুল ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে সপ্তম স্থানে।
চোটে একের পর এক খেলোয়াড় হারিয়ে এমনিতেই দিশাহারা লিভারপুল। সে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন দুই তারকা ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতা আর দারউইন নুনিয়েজ।
সেরা একাদশের সৈনিকদের ছাড়া ক্লপ যেন কূলহারা এক পথিক! দ্বিতীয় পছন্দের হলেও হাতে যেসব অস্ত্র আছে, সেসব নিয়েই লড়াইয়ে নেমে পড়তে হচ্ছে। তাই বলে ২৩ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফেরা কোনো দলের কাছে হার নিশ্চয়ই কাম্য ছিল না।
নটিংহামের মাঠ সিটি গ্রাউন্ডে আজ ১৬টি শট নিয়েছে লিভারপুল, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। তবু একটিবারও জাল কাঁপাতে পারেনি অলরেডরা। গোল পেতে নাকি মাঝেমধ্যে ভাগ্যেরও সহায়তা লাগে। হেন্ডারসনের বীরত্ব তো ছিলই, সেই ভাগ্যটুকুও সঙ্গে ছিল না অতিথিদের। নয়তো কি আর সালাহ ফাঁকায় বল পেয়েও উড়িয়ে মারেন, ফন ডাইকের ফ্রি হেডারও হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট!
গোল শোধে মরিয়া লিভারপুলকে উদ্ধার করতে অতিরিক্ত সময়ে ফরোয়ার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন গোলরক্ষক আলিসনও। গত মৌসুমে তাঁর গোলেই তো চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত হয়েছিল অলরেডদের। ফটকাটা যদি এবারও লাগে! আজ লাগেনি।
আউওনিয়ির ওই গোল বাদ দিলে গোলবারের নিচে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আলিসনও। নয়তো লিভারপুলকে আরও বড় ব্যবধানে হারতে হতো। সে যা-ই হোক, হার তো হারই।
এ ক্ষতে প্রলেপ দিতে একটু সময়ই লাগবে আলিসনদের। ম্যাচটা জিতলে যে কক্ষপথে ফিরে পারত লিভারপুল। ইউনাইটেডকে টপকে উঠে আসত পয়েন্ট তালিকার পাঁচে। সেটা হতে দেননি ইউনাইটেডেরই ‘মুখোশ’ পরা হেন্ডারসন।
ম্যানচেস্টার সিটি ও ওয়েস্ট হ্যামকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছিল লিভাপুল, সেটা আবার ফিকে হয়ে গেল।