আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার আগে জাতীয় দলের ফুটবলারদের উজ্জীবিত করেন কাজী সালাউদ্দিন। ব্যতিক্রম হচ্ছে না আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দুটি সামনে রেখেও। তবে বাফুফে সভাপতি চোখ রাখছেন আরও সামনে। ফুটবলারদের মনে করিয়ে দিয়েছেন আগামী মাসে মালদ্বীপের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দুটি জিতলে ওঠা যাবে গ্রুপ পর্বে। যেখানে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পাবে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে।
এর আগে ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ পড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে। ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর পার্থে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৫-০ গোলে। ঢাকায় ১৭ নভেম্বর হার ৪-০ গোলে। তবে হার নয়, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার সুযোগই ছিল বড়। এবারও সেই সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। এ জন্য হারাতে হবে মালদ্বীপকে। আর মালদ্বীপ ম্যাচের প্রস্তুতি হিসেবেই আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলা হচ্ছে।
বাফুফের সভাপতি আজ দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতে বাংলাদেশ দলের হোটেলে যান। ফুটবলারদের সঙ্গে সভায়ও বসেন। এ সময় কোচ হাভিয়ের কাবরেরা সাফে লেবানন ও কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ দেখান পর্দায়। কোচ তুলে ধরেন ফুটবলারদের ভালো-মন্দের নানা দিক। সেখানে সালাউদ্দিন ফুটবলারদের বলেছেন, ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ তোমরা ভালো খেলছ। এরপর আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলেও খেলেছ অনেকে। এখন সময় এসেছে নিজেদের প্রমাণ করা, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভালো খেলা। ম্যাচ দুটি জিততে হবে।’
কাজী সালাউদ্দিন এরপর পরোক্ষে ফুটবলারদের সামনে বোনাসের হাতছানিও রাখলেন, ‘তোমরা সাফে ভালো করায় আমি বোনাস দিয়েছি। মালদ্বীপকে হারাও, তাহলে আরও বেশি বোনাস যেন পাও, সেটা আমি দেখব।’
গোলকিপার আনিসুর, রাকিবদের ডেকে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘সেরাটা দাও। এখন তোমাদের খেলা দেখে খুশি হয় মানুষ।’ কুয়েতের বিপক্ষে সাফের সেমিফাইনালের শুরুতেই কেন অমন সহজ গোলের সুযোগ মিস করলেন শেখ মোরছালিন, তা জানতে চান এই তরুণের কাছে। প্রশ্ন করেন, সে সময় তাঁর মাথায় কী কাজ করছিল?
মোরছালিন বলেন, তিনি বুঝতে পারেননি সুযোগটা এভাবে চলে আসবে। সালাউদ্দিন তাঁকে উপদেশ দেন, ‘ভালো খেলোয়াড় হতে গেলে এমন মিস আর করা যাবে না। বড় ম্যাচে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। তাই তোমার উচিত আরও বেশি অনুশীলন করা। আর আরও বেশি অনুশীলন করতে তোমার শারীরিক শক্তি বাড়াতে হবে।’
ফুটবলারদের সঙ্গে এই সভা শেষে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় দলের অনুশীলন দেখতে যান সালাউদ্দিন। সেখানে মোরছালিনকে ডেকে সালাউদ্দিন বলেন, ‘যে উপদেশ দিয়েছি সব মনে রাখবে। তোমারই এখন সময়। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে। শৃঙ্খলা রাখতে হবে জীবনে। তাইলে ভালো ফুটবলার হওয়া যাবে।’
ওদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি এক দিন এগিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় হচ্ছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়। এক দিন এগোনোর কারণটা টেকনিক্যাল। ফিফা আগেই জানিয়ে দেয় কোন উইন্ডোতে একটি দেশ কটি ম্যাচ খেলতে পারবে। সে হিসাবে ৪-১২ সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে সর্বোচ্চ দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলা যাবে। ফিফা উইন্ডো আর উইন্ডোর বাইরে প্রীতি ম্যাচের খেলায় পার্থক্য আছে। দুটিতে র্যাঙ্কিং পয়েন্টের ব্যবধান ৫। উইন্ডোর ম্যাচগুলো ফিফা টায়ার ওয়ান এবং ১০ পয়েন্টের। উইন্ডোর বাইরে খেললে সেটিও টায়ার ওয়ান ফিফা প্রীতি ম্যাচ, তবে র্যাঙ্কিং পয়েন্ট ৫। অর্থাৎ উইন্ডোর বাইরের ম্যাচে জয়-পরাজয় র্যাঙ্কিংয়ে তেমন বড় প্রভাব ফেলে না।
এই উইন্ডোতে আফগানিস্তান চেয়েছে দুটি ম্যাচ খেলতে। একটি বাংলাদেশের সঙ্গে ৭ সেপ্টেম্বর, অন্যটি ১২ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের সঙ্গে। আবার অন্য কোনো দল না পাওয়ায় বাংলাদেশও চেয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলতে এবং প্রথমটি ফিফা উইন্ডোর অংশ হবে না। বাফুফে তা আগে থেকেই জানত। বাফুফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ম্যাচ ৪ সেপ্টেম্বর আয়োজন করতে ফিফা অনুমোদনও দেয়। এতে দেখা যায়, ৪-১২ সেপ্টেম্বর ফিফা উইন্ডোতে আফগানিস্তানের ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে তিনটি।
এই জটিলতার কারণেই ফিফার নির্দেশে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান প্রথম ম্যাচটি এখন উইন্ডোর বাইরে চলে এসেছে। এই ম্যাচে জয়-পরাজয় র্যাঙ্কিংয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। ফিফার নিয়মে ৫ র্যাঙ্কিং পয়েন্টের প্রীতি ম্যাচ খেলা যায় বছরের যেকোনো সময়ই। এমন ম্যাচ খেললে ক্লাব জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য নয়। ক্লাব খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য ফিফা উইন্ডো বা অন্য প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে। যেখানে এএফসি ম্যাচ খেললে ফিফা র্যাঙ্কিং পয়েন্ট থাকে ২০। বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের জন্য জন্য র্যাঙ্কিং পয়েন্ট ৪০।