চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি হাতে পেপ গার্দিওলা
চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি হাতে পেপ গার্দিওলা

সিটিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে গার্দিওলা বললেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ সাবধান, আমরা আসছি’

ম্যাচের একটু পরপরই ব্রিটিশ টেলিভিশন বিটি স্পোর্টসের সঙ্গে যখন কথা বলতে এলেন, পেপ গার্দিওলা তখনো হাঁপাচ্ছেন। বয়স তো আর কম হয়নি! ৫২ হয়ে গেছে। এই বয়সে এমন বাঁধনহারা উদ্‌যাপন, ছোটাছুটি, আর্লিং হলান্ডের মতো প্রায় সাড়ে ছয় ফুট একজনকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা, এত দম থাকে নাকি! রিও ফার্ডিনান্ড যখন জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগছে? জোরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তেই বললেন, ‘ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত। এই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এত কষ্টের!’

তা কষ্ট কিছুটা হয়েছে বৈকি! ফাইনালের আগে তো মনে হয়েছিল, গার্দিওলার দল ম্যানচেস্টার সিটি বুঝি উড়িয়েই দেবে প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলানকে। আসলে সে রকম কিছু হলো না। ইন্টার লড়েছে সমানে সমানে। রোমেলু লুকাকু মিস না করলে এই ম্যাচের ফল অন্য রকম হতেও পারত, কিংবা নিদেনপক্ষে বাড়ত কষ্ট আরও বাড়ত।

শেষ পর্যন্ত সিটি জিতল মাত্র ১-০ গোলে। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে যে গোলটা করেছেন সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। গার্দিওলা অবশ্য ব্যবধান নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল দল জিতবে এবং শেষ পর্যন্ত যে জিতেছে, তাতেই তিনি খুশি। ফাইনাল যেমনই খেলুক সিটি, এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন তাঁর দলেরই প্রাপ্য, এমনটাই মনে করেন গার্দিওলা, ‘এটা নিয়তিই ঠিক করে রেখেছিল, আমরা জিতব এবার। পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা দারুণ খেলেছি।’

ম্যাচ শেষে সিটির খেলোয়াড়দের উদযাপন


আসলেই সিটি এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেছে দারুণ। বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে সিটির পারফরম্যান্স তো চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা। আর শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ কেন, পুরো মৌসুমেই তো সিটি খেলেছে অসাধারণ। যার পুরস্কার ইংল্যান্ডের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের এই ট্রেবল জয়।

এমন দিনের অপেক্ষাতেই ছিলেন ইস্তাম্বুলের ফাইনালে সিটির নায়ক রদ্রি, ‘আমি খুবই আবেগাপ্লুত। স্বপ্ন সত্যি হলো আমাদের। আমাদের এই সমর্থকেরা কেউ ২০ বছর, কেউ ৩০ বছর, কেউ ৪০ বছর ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল। আমি তো মাত্র ৪ বছর হলো এসেছি। আমাদের সবার স্বপ্নপূরণ হলো আজ।’

ফাইনালের নায়ক রদ্রি

ট্রেবল জয়ের আনন্দ তুলনাহীন সিটির অধিনায়ক ইলকায় গুন্দোয়ানের কাছেও, ‘এটা যেকোনো ক্লাবের জন্যই চূড়ান্ত সাফল্য। আমরা আজ এই কীর্তি গড়েছি। এই আনন্দের তুলনা হয় না।’ একই সুর সিটি উইঙ্গার জ্যাক গ্রিলিশের কণ্ঠেও, ‘আপনি সারা জীবন এমন একটা কীর্তি গড়ার জন্যই পরিশ্রম করেন। আজ আমি খুব বাজে খেলেছি, কিন্তু এসব এখন আর ভাবছি না। এখন আনন্দের সময়। এই দলটার অংশ হওয়া, সবাই মিলে ট্রেবল জেতা, এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার।’

চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি হাতে ড্রেসিং রুমে জ্যাক গ্রিলিশ


গ্রিলিশের কৃতজ্ঞতা তাঁর কোচ পেপ গার্দিওলার কাছে, ‘তিনি আসলেই জিনিয়াস। আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁর জন্যই আমি এই কীর্তির ভাগীদার হলাম। আমার ওপর তিনি এত বিশ্বাস রেখেছেন। এত টাকা দিয়ে আমাকে কিনেছেন। আমি যখন খারাপ খেলছিলাম, তখন আমাকে এত সমর্থন দিয়েছেন। যতই ধন্যবাদ দিই তাঁকে, কম হয়ে যাবে।’

আমাদের আর মাত্র ১৩টা চ্যাম্পিয়নস লিগ লাগবে, মাত্র ১৩, সুতরাং রিয়াল মাদ্রিদ সাবধান, আমরা আসছি। একটু যদি গা ছাড়া দাও, আমরা তোমাদের ধরে ফেলব
পেপ গার্দিওলা

এই মৌসুমের শুরুতেই পেপ গার্দিওলার দলে যোগ দিয়েছিলেন আর্লিং হলান্ড। মৌসুম শেষে তিনি প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়, গোল্ডেন বুট জয়ী। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগেও। সিটির এই ট্রেবলজয়ী দলের অংশ হয়ে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসেও। হলান্ডের কাছে এসব স্বপ্নের চেয়েও বেশি, ‘অবিশ্বাস্য। আমি স্বপ্নেও এমন কিছু কখনো কল্পনা করিনি। গার্দিওলার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর অধীনে খেলা, বিশ্বের সেরা কোচের অধীনে ট্রেনিং করা, এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার।’

চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি হাতে আর্লিং হলান্ড


হলান্ড না চাইলেও অবশ্য গার্দিওলা ঠিকই চাইবেন। আগামী মৌসুমে নিশ্চয়ই আরও দারুণ ফর্মে হলান্ডকে দেখতে চাইবেন সিটি কোচ। এ তো মাত্র শুরু। একটা চ্যাম্পিয়নস জিতেই যে থামতে চান না গার্দিওলা, সেটা তো ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেই বলে দিয়েছেন, ‘আমাদের আর মাত্র ১৩টা চ্যাম্পিয়নস লিগ লাগবে, মাত্র ১৩, সুতরাং রিয়াল মাদ্রিদ সাবধান, আমরা আসছি। একটু যদি গা ছাড়া দাও, আমরা তোমাদের ধরে ফেলব।’
কথাটা হয়তো মজা করেই বলেছেন। তবে একবার যেহেতু চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতার স্বাদ সিটি পেয়েছে, এটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলা এখন আর হয়তো এত কঠিন হবে না।