৬ টি গোল করেছেন রাকিব
৬ টি গোল করেছেন রাকিব

বিদেশিদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন রাকিবও

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে কাল। শেষ দিনে রাজশাহীতে কলম্বিয়ার স্ট্রাইকার এডিস গার্সিয়ার হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ পুলিশ ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। মুন্সিগঞ্জে ফর্টিস এফসি ২-০ গোলে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীকে।

সৌদি আরবে ক্যাম্পের জন্য এখন দল ঘোষণা করবেন হাভিয়ের কাবরেরা। আগামী ২১ মার্চ কুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ফিলিস্তিনের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার আগে কোচ বিবেচনায় নেবেন লিগে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স। দেশি ফুটবলাররা কেমন করলেন তার একটা আভাস দিন কয়েক আগেই দিয়েছেন কাবরেরা। অনূর্ধ্ব-২৩ পর্যায়ের কয়েকজন নতুন মুখ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাকতে পারেন বলেছেন। লিগ দেখে তিনি অখুশি নন, এমন কথাও বলেছিলেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় দলের ফুটবলাররা কেমন করলেন প্রথম পর্বে? বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘুরে ঘুরে লিগ দেখার অভিজ্ঞতায় জাতীয় দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন ভালোই বলছেন। তাঁর কথা, ‘কিছু উত্থান-পতন বা চোট থাকতে পারে। এসব বাদ দিলে আমরা জাতীয় দলের ফুটবলারদের কাছে যেমন পারফরম্যান্স চাইছিলাম, সেটা পেয়েছি। ৬০-৭০ জন ফুটবলার নিয়ে কাজ করি আমরা। কয়েকজন নতুন ফুটবলার আমাদের নজরে আছে।’

দরিয়েলতন গোমেজের গোল ৮টি

মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ অবশ্য প্রথম পর্বে সে রকম নজরকাড়া নতুন কোনো মুখ দেখেননি বলে জানালেন, ‘নতুন খেলোয়াড় কোথায়! আমি তো আসলে দেখিনি সে রকম। এমন নতুন কোনো বিদেশিও চোখে পড়েনি যে কিনা সাড়া ফেলেছে।’ শেখ জামালের কোচ জুলফিকার মাহমুদেরও একই রকম পর্যবেক্ষণ, ‘দুঃখিত, খুব প্রতিভাবান খেলোয়াড় সে অর্থে আমার চোখে পড়েনি। কোনো ফরোয়ার্ডও না।’

ফরোয়ার্ডদের অনেক সময় বিচার করা হয় গোল দিয়ে। এবারও বাংলাদেশের লিগে বিদেশিরাই গোল করেছেন বেশি। প্রথম পর্বে ৪৫টি ম্যাচে ১২৪ গোলের ৮৪টিই বিদেশিদের। সর্বোচ্চ ৮ গোল বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজের। ৭টি আবাহনীর সেন্ট ভিনসেন্টের স্ট্রাইকার কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের। ৬ গোল নিয়ে শেখ রাসেলের ল্যান্ড্রি, মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতের সঙ্গে আছেন কিংসের রাকিব হোসেনও। প্রথাগত স্ট্রাইকার না হলেও বিদেশিদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন তিনিই। এর আগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে পুরো লিগে ৮ গোল করেছিলেন এই উইঙ্গার।

এবার প্রথম পর্বে ৫ গোল করা তিনজনের মধ্যে দুই বিদেশির সঙ্গে ব্রাদার্সের রাব্বি হোসেন নামটা চমকই। ৪টি করে গোল করেছেন ৩ জন। দুই বিদেশির সঙ্গে বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান সুফিল। ব্রাদার্সের জার্সিতে খেলে জাতীয় দলে ফেরার দাবি জোরালো করেছেন তিনি। ৩ গোল করা ৬ জনের মধ্যে দেশি খেলোয়াড় শুধু সাজ্জাদ হোসেন। জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সুমন রেজা করেছেন ২ গোল। মান্নাফ রাব্বিরও ২টি। জাতীয় দলের ফয়সাল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ইব্রাহিমরা একটি করে গোল পেয়েছেন। শেখ মোরছালিন খেলারই সুযোগই পানি চোটের কারণে।

দেশি ফুটবলাররা বরাবরই গোলের দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন। তারপরও দেশিদের কাছে গোল প্রায় সোনার হরিণ কেন জানতে চাইলে রাকিব সামনে আনেন পুরোনো কথাটাই, ‘দেশি স্ট্রাইকাররা খেলারই তো সুযোগ পায় না। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি গোল পাচ্ছি, সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি। কিংসের আক্রমণে দেশিদের মধ্যে আমিই তো নিয়মিত খেলি। অন্যরা নয়।’

বরাবরের মতো এবারের লিগেও কিংস এগিয়ে। দুইয়ে মোহামেডান। অনেক বছর পর লিগে প্রথম পর্বে একমাত্র অপরাজিত থাকা সাদা–কালোর জন্য নতুন প্রেরণা, নতুনভাবে ফেরাও। মোহামেডানের সাফল্যের নেপথ্য নায়ক আলফাজও তা বলছেন।  তাঁর চোখে এর বাইরে কোনো নতুনত্ব নেই, ‘মাঠে দর্শক সেভাবে আসেনি। সাড়া ফেলা নতুন দল নেই। কিংসকে তাদেরই মাঠে প্রথম হারিয়ে আলোড়ন কিছুটা আমরা তৈরি করেছি। নইলে লিগটা গত কয়েক বছরের মতোই চলছে।’

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও ফর্টিস এফসির ম্যানেজার রাশেদুল ইসলামের চোখে অবশ্য এই লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। প্রতিটি ম্যাচ উপভোগ্য হচ্ছে। তবে রাশেদ সামনে আনেন রেফারিংয়ের বিষয়টা, ‘লিগের যে মান তাতে রেফারিং আরও ভালো হওয়া উচিত। রেফারিদের সেই সামর্থ্য আছে। তাঁরা আন্তর্জাতিক ম্যাচে তো ভালো করছেন।’